‘ইউক্রেন সংঘাত পারমাণবিক যুদ্ধের দিকে মোড় নিতে পারে’ এমন বিশ্বাস অন্তত তার নেই। তবে মস্কো আর কখনো পশ্চিমের ওপর নির্ভরশীল হতে চায় না বলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপকে সতর্ক করে দিয়েছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। বৃহস্পতিবার তুরস্কের আনতালিয়ায় ইউক্রেন-রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পর এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন লাভরভ।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন শুরুর পর পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ মস্কোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। একের পর এক নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার অর্থনীতি ১৯৯১ সালের সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সবচেয়ে গুরুতর সংকটের মুখোমুখি হয়েছে।
রাশিয়ার সংবাদপত্র কমারস্যান্টের এক প্রতিনিধি লাভরভের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তিনি কি মনে করেন পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হতে পারে? জবাবে লাভরভ বলেন, ‘আমি এটা বিশ্বাস করতে চাই না এবং আমি এটা বিশ্বাস করি না।’
২০০৪ সাল থেকে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন সের্গেই লাভরভ। তিনি বলেন, পারমাণবিক যুদ্ধ প্রসঙ্গে আলোচনা কেবল পশ্চিমারা করছে। তারা সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মতো পারমাণবিক যুদ্ধের বুলি আওড়াচ্ছে। সাইকোঅ্যানালাইসিসের এই জনকের মতে, ‘বিশ্বে পারমাণবিক যুদ্ধ ফিরে আসছে।’
তুরস্কের আনতালিয়ায় ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবার সঙ্গে বৈঠকের পর লাভরভ বলেছেন, ‘অবশ্যই এটা আমাদের উদ্বেগ তৈরি করে যখন পশ্চিমারা এই বিষয়ে ফ্রয়েডের মতো ফিরে আসে আর ফিরে আসে।’
লাভরভ বলেন, সাবেক সোভিয়েত ব্লকভুক্ত লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া, এস্তোনিয়া এবং বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর সদস্যদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সম্ভাব্য আক্রমণের বিষয়ে পশ্চিমাদের কথা বলাটা ‘পুরোনো প্রতারণা’ বলে মনে হচ্ছে।
স্নায়ুযুদ্ধের পর রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক অস্ত্রের সবচেয়ে বড় মজুত করেছে। আর এই অস্ত্র গত শতাব্দীর বেশিরভাগ সময়জুড়ে বিশ্বকে বিভক্ত করেছে। রাশিয়ার অস্ত্র সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের প্রতিহত করেছে।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এবং পশ্চিমের সামরিক জোট ন্যাটোর শীর্ষ স্থানীয় সদস্যদের আক্রমণাত্মক মন্তব্যের কথা উল্লেখ করে রাশিয়ার পারমাণবিক বাহিনীকে উচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার নির্দেশ দেন। ন্যাটো এবং রাশিয়ার মধ্যে সম্ভাব্য সংঘাতের ব্যাপারে ব্রিটেনের মন্তব্যের কারণে পুতিন ওই নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে পরবর্তীতে রুশ কর্মকর্তারা জানান।
পূর্বে যাও
পুতিন বলেছেন, রুশ সীমানা পর্যন্ত ন্যাটোর সদস্যপদ বৃদ্ধি এবং কিয়েভে পশ্চিমাপন্থি নেতাদের মার্কিন সমর্থনের পর রাশিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। ইউক্রেন বলেছে, অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য লড়াই করছে তারা। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইউক্রেনের এশিয়ান মিত্ররা রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়েছে। চীন উভয়পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে।
এখন পশ্চিমারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এ বিষয়ে লাভরভ বলেন, ‘রাশিয়া পশ্চিমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং অর্থনৈতিক যেকোনো পরিণতি মোকাবিলা করবে।’
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পুনরুজ্জীবিত হওয়ার মনস্তত্ত্ব দিয়ে ন্যায়সঙ্গত উপায়ে এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসব। পশ্চিমারা যে নির্ভরযোগ্য অংশীদার হতে পারে না, সে বিষয়ে আমাদের আর কোনো বিভ্রান্তি থাকবে না। আমাদের জীবনের সব ক্ষেত্রে যাতে আমরা আর কখনো পশ্চিমের ওপর নির্ভরশীল না হই, তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সবকিছু করব; যা আমাদের জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অর্থ বহন করে।’
১৯৯১ সালে যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটে, তখন রাশিয়া এবং পশ্চিমা দুনিয়ার অনেকেই আশা করেছিলেন, ‘স্নায়ুযুদ্ধের বিভাজন হয়তো শেষ।’
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে লাভরভ বলেন, রাশিয়া কোনো ক্রেতাকেই জ্বালানি কিনতে রাজি করানোর চেষ্টা করবে না। বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের কথা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের বাজার আছে।