আজ ৮ মার্চ ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকসহ উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে নারীর সমান অংশীদারি এবং সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সরকারি-বেসরকারিভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ বছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য হলো ‘টেকসই আগামীর জন্য, জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য’।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডাব্লিউইএফ) গত বছর ৩০ মার্চ প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে নারী-পুরুষের সমতার দিক থেকে বিশ্বে ১৫৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৫তম। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রথম অবস্থানে। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম। বাংলাদেশের নারীরা আজ সচিব, বিচারক, সশস্ত্র বাহিনীসহ সব গুরুত্বপূর্ণ পদে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। আত্মকর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা হিসেবে বিশ্বে অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদাভাবে বাণী দিয়েছেন। এ উপলক্ষে সংবাদপত্রে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় দেশব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ১৯১০ সালের ৮ মার্চ নিউ ইয়র্কের সেলাই কারখানার নারী শ্রমিকদের আন্দোলনের প্রতি সম্মান জানাতে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়ে থাকে। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সাল থেকে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন শুরু করে। বাংলাদেশে নারীসমাজের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, নারী অধিকার রক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ও সমতার উন্নয়নের জন্য দিবসটির গুরুত্ব অপরিসীম।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আজ নারী দিবসের অনুষ্ঠানে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পাঁচজন জয়িতাকে সম্মাননা প্রদান করবে। তাঁরা ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন থেকে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছ থেকে সম্মাননা পদক, ক্রেস্ট ও এক লাখ টাকার চেক গ্রহণ করবেন। এ বছর অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলার মোসা. সানজিদা আক্তার শিমু, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. হোসনে আরা আরজু, সফল জননী হিসেবে চট্টগ্রাম বিভাগের খোশনাহার বেগম, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করার ক্ষেত্রে বরিশাল বিভাগের জেসমিন আক্তার ও সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখায় রংপুর বিভাগের মোছা. রোকেয়া বেগম শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা পাচ্ছেন।
দিবসটি উপলক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে সজ্জিত করা হবে। দেশের সব জেলা ও উপজেলায় নারী উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন, অধিকার এবং এ বিষয়ে প্রচার ও সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে শোভাযাত্রা, সমাবেশ ও আলোচনা অনুষ্ঠানের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে যাচ্ছে। পাক্ষিক অনন্যা আজ বিকেল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ‘উইমেন অব এক্সিলেন্স বাই র্যাডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেন’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ‘র্যাডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেন’।
বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের উদ্যোগে আজ বিকেল ৪টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ দিবস উপলক্ষে ‘ধর্ষণ-যৌন নিপীড়ন ও সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, নারীর মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ হোন’ এই স্লোগান সামনে রেখে মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন রয়েছে। ‘কর্মজীবী নারী’ সকাল ১০টায় মিরপুর-১৩-এর হারম্যান মেইনার স্কুলের পাশে মানববন্ধন ও শোভাযাত্রার আয়োজন করতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস সুনীতি প্রকল্পের আওতায় সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন ও শোভাযাত্রার আয়োজন করতে যাচ্ছে। এতে বিলস সহযোগী জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের নেতারা, গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে গৃহশ্রমিকরা উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া নারী মৈত্রীর উদ্যোগে বিভিন্ন এলাকায় ভ্যান শোভাযাত্রা, ইউসেপ বাংলাদেশ- এর উদ্যোগে মিরপুরে আলোচনাসভা, হ্যালোটাস্ক-এর উদ্যোগে গৃহশ্রমিক নিয়োগকারীদের নিয়ে আলোচনাসভা এবং রেড অরেঞ্জের উদ্যোগে সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে ‘আমরাই পারি জোট’ গতরাত থেকে সব ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা ও সম-অংশীদারি নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি নারীর জন্য প্রতিটি স্থান, প্রতিটি সময়, প্রতিটি মুহূর্তকে নিরাপদ করার দাবিতে বিশেষ হ্যাশট্যাগ (#) ক্যাম্পেইন ‘আঁধার ভাঙার শপথ’ শুরু করেছে।