করোনার সংক্রমণ শুরুর পর আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়েছে। সম্প্রতি রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্যের দাম আরও বেড়েছে। এর প্রভাবে আমদানি ব্যয়ও লাগামহীনভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এদিকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম খাত রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে। রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ভালো থাকলেও যুদ্ধের কারণে এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সার্বিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হচ্ছে। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ছে।
সূত্র জানায়, করোনার পর জ্বালানি তেলের দাম ৮৬ ডলারে উঠেছিল। পরে আবার কমে তা ৬৮ ডলারে নামে। সম্প্রতি যুদ্ধের কারণে এর দাম আবার বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ১১৮ ডলারে উঠেছে। এছাড়া দেশের প্রধান আমদানি পণ্য গমের দাম বেড়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ, সারের বেড়েছে শতভাগ। এছাড়া শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামালের দামও বেড়েছে। এর প্রভাবে আমদানি ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারিতে আমদানি ব্যয় কমেছিল শূন্য দশমিক ২৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এ ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ। এর মধ্যে ভোগ্যপণ্যের আমদানি ৫০, শিল্পের যন্ত্রপাতি ৬১, শিল্পের মধ্যবর্তী যন্ত্রপাতি ৫৮, জ্বালানি তেল ৯০, শিল্পের কাঁচামাল ৫৩ এবং অন্যন্য খাতে ৪১ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে।
এদিকে আমদানি ব্যয় বাড়লেও পণ্যের আমদানি বাড়ছে না। কারণ পণ্যের দাম বেশি হওয়ার কারণে ব্যয় বেশি বাড়ছে। কিন্তু পণ্য আসছে কম। আমদানি ব্যয় বাড়ায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে অর্থব্যয়ও বেড়েছে। যে কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলার থেকে ১০০ কোটি ডলার কমেছে। এদিকে রেমিট্যান্স কমায় রিজার্ভের ওপর চাপ আরও বাড়ছে। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসী আয় কমেছে ১৬ শতাংশ। আর জুলাই-ফেব্রুয়ারি, আট মাসে কমেছে পায় ২০ শতাংশ।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে জ্বালানি তেলের আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৮৯ দশমিক ২৪ শতাংশ, যেখানে আগের অর্থবছরে এটি ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ নেতিবাচক ছিল। এ কারণে সামগ্রিক আমদানি ব্যয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে আলোচ্য সময়ে বেড়েছে প্রায় ৫৩ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে চলতি হিসাবের ভারসাম্য নেতিবাচক হয়েছে ১ হাজার ৬ হাজার ২০ লাখ ডলার। আগের বছরের একই সময়ে উদ্বৃত্ত ছিল ১৫৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি বাড়ায় এ খাতে ঘাটতি হয়েছে। ঘাটতি বেশিদিন থাকলে বৈদেশিক মুদ্রাব্যবস্থায় বড় চাপ তৈরি হবে।
দেশে যে পরিমাণ আমদানি হয়, রপ্তানি আয় দিয়ে তার ব্যয় নির্বাহ করা যায় না। আমদানির প্রায় ৪০ শতাংশ ব্যয় নির্বাহ করা হয় প্রবাসী আয় দিয়ে। কিন্তু চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ায় বেশির ভাগ ব্যাংক তাদের আমদানি ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় ডলারের সংস্থান করতে পারছে না। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দ্বারস্থ হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করতে গিয়ে চাপ বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। এতে একদিকে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাচ্ছে, পাশাপাশি চাপে পড়ে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে পণ্য আমদানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। বিপরীতে আট মাসে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ আমদানি বাড়ার চেয়ে রপ্তানি আয় বাড়ছে কম।