প্রধানমন্ত্রী ও রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে ইউক্রেন ও রাশিয়ায় যুদ্ধের সংঘাতে বাংলাদেশি ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজে কর্মরত থার্ড ইঞ্জিনিয়ার নিহত হাদিসুর রহমানের পরিবার শনিবার সকালে ঢাকায় পৌঁছান। পরিবারের মা-বাবাসহ তিন ভাইবোনের উদ্দেশ্য ছিল প্রধানমন্ত্রী ও রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করার। কিন্তু শনিবার-রোববার ঘুরেও তাদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হয়নি। ব্যর্থ হয়ে ঢাকার মগবাজারে এক আত্মীয়ের ভাড়া বাসায় আশ্রয় নেন তারা।
নিহত হাদিসুরের ছোটভাই গোলাম মাওলা প্রিন্স ফোনে জানান, আমরা ঢাকায় যখন এসেছি ভাইয়ের লাশ নেওয়ার জন্য, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করব। লাশ না নিয়ে কোনোভাবেই বাড়িতে যাব না। আমার বড়ভাইকে হারিয়ে মা-বাবা এখন পাগলপ্রায়, এখন যদি শেষ চিহ্ন হিসেবে ভাইয়ের লাশটাও বাড়িতে নিয়ে দাফন করতে না পারেন তবে তারা এ শোক সহ্য করতে পারবেন না। তাছাড়া আমাদের পরিবারের একমাত্র ভরসা ও উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন আমার বড়ভাই হাদিসুর রহমান। তার মৃত্যুতে পরিবার এখন পথে বসে গেছে। আমাদের পরিবারের দুরবস্থার কথা আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে চাই ও তার কাছ থেকে সহায়তা চাই।
জানা যায়, রকেট হামলার শিকার হন বাংলাদেশি ২৯ নাবিক। এর মধ্যে বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা বজারসংলগ্ন চেয়ারম্যান বাড়ির বাসিন্দা মো. আবদুর রাজ্জাক (অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক) ও আমেনা বেগম দম্পতির জ্যেষ্ঠ সন্তান মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান আরিফ (২৯) ইউক্রেনে রকেট হামলায় নিহত হয়েছেন। এছাড়াও তাদের দুই ছেলে ও একটি মেয়ে আছে।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে ও ছেলের লাশ ফিরে পাওয়ার অনিশ্চয়তায় পাগলপ্রায় মা ও বাবা। এখন পরিবারের সবাইকে নিয়ে ছেলের লাশ পাওয়ার জন্য নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় গিয়েছেন মা-বাবা। উল্লেখ্য, সিরামিকের কাঁচামাল ‘ক্লে’পরিবহনের জন্য জাহাজটি তুরস্ক থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের জলসীমায় পৌঁছায় এবং ২ মার্চ বুধবার রকেট হামলার শিকার হয়। তবে যুদ্ধাবস্থা এড়াতে জাহাজটিকে সেখানে পৌঁছানোর পরই পণ্য বোঝাই না করে দ্রুত ফেরত আসার জন্য নির্দেশনা দেন শিপিং করপোরেশনের কর্মকর্তারা। শেষ মুহূর্তে বন্দরের পাইলট না পাওয়ায় ইউক্রেনের জলসীমা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশের এই জাহাজ।