ন্যাটো রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতে যেতে চায় না; কিন্তু রাশিয়া যদি ন্যাটোর কোনো সদস্যরাষ্ট্রে হামলা করে, সেক্ষেত্রে মস্কোকে যথাযথ জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের আছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। শুক্রবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ন্যাটোর সদর দপ্তরে এক বৈঠক শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ব্লিনকেন বলেন, ‘ন্যাটো একটি আত্মরক্ষামূলক জোট। আমরা কোনো সংঘাত চাই না। কিন্তু যদি কোনো প্রকার হামলা হয়, সেক্ষেত্রে ন্যাটোর সদস্যভূক্ত প্রতিটি রাষ্ট্রের প্রতি ইঞ্চি ভূমি রক্ষার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।’
দিনভর ইউক্রেন বাহিনীর সঙ্গে তীব্র যুদ্ধের পর ইউক্রেনের জেপোরোজিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের দখল নেয় রুশ বাহিনী। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ইউক্রেনের জন্য অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপের সবচেয়ে বড় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রও এটি।
সংবাদ সম্মেলনে এই প্রসঙ্গটি তুলে রাশিয়ার কঠোর সমালোচনা করেন ব্লিনকেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আরও দেখলাম, কীভাবে টানা হামলা করে একদিনের মধ্যে জোপোরোজিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র দখল করল রাশিয়া। এটা হচ্ছে তাদের বেপরোয়া মনোভাবের আর একটি উদাহারণ।’
যুদ্ধ বাদ দিয়ে রাশিয়াকে কূনীতিতে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এই যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করা প্রয়োজন এবং আমাদের সবারই উচিত কূটনৈতিক পন্থার ওপর আস্থা রাখা। অবিলম্বে ইউক্রেন থেকে রুশ বাহিনীর প্রত্যাহারের দাবি আমরা জানাচ্ছি।’
পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য কয়েক বছর আগে আবেদন করে ইউক্রেন এবং এই ব্যাপারটিকে ঘিরে দ্বন্দ্ব শুরু হয় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে।
এর মধ্যে ন্যাটো ইউক্রেনকে পূর্ণ সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করায় দ্বন্দ্বের তীব্রতা আরও বাড়ে। ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন প্রত্যাহারে ইউক্রেনের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে গত দুই মাস রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন রেখেছিল মস্কো।
কিন্তু এই কৌশল কোনো আসেনি। উপরন্তু এই দু’মাসের প্রায় প্রতিদিনই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা অভিযোগ করে গেছে— যে কোনো সময় ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে রুশ বাহিনী।
অবশেষে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া; এবং তার দু’দিন পর, ২৪ তারিখ ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের সরকারি কর্মকর্তারা অবশ্য ইতোমধ্যে সংলাপ শুরু করেছেন। সাবেক সোভিয়েত রাষ্ট্র বেলারুশের উদ্যোগে দেশটির ইউক্রেন সীমান্তবর্তী শহর গোমেলে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফা বৈঠক হয় দুই দেশের প্রতিনিধিদলের মধ্যে।
তার পর দ্বিতীয় দফা বৈঠক হয় বৃহস্পতিবার। ওই বৈঠকে ইউক্রেনের শহর এবং গ্রাম থেকে বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য মানবিক করিডোর চালুর বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন রুশ ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা।