বারুদের গন্ধের মধ্যেই শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনা। গতকাল শুরু হওয়া এই আলোচনা যখন চলছে, তখনো যুদ্ধ অব্যাহত। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তির লক্ষ্যে বেলারুশের গোমেলে রুমিয়ান্তসেভ-পাসকেভিচ রেসিডেন্সে এই আলোচনা শুরু হয়। এতে ইউক্রেনের প্রতিনিধিত্ব করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেকসিই রেজনিকভ, উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকোলা টোচিটস্কি প্রমুখ। রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেন উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলেকজান্দার ফোমিন, বেলারুশে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বোরিস গ্রিজলোভ প্রমুখ। এতে মধ্যস্থতা করছেন রোমান আব্রামোভিচ। এই আলোচনা থেকে তেমন আশাপ্রদ কোনো ফল বেরিয়ে আসবে না বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিবিসি সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম। এদিনও ইউক্রেনের খারকিভে গণহারে গোলা নিক্ষেপে কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছে।
যুদ্ধের মধ্যে সংলাপ: সোমবার এই যুদ্ধ পঞ্চম দিনে প্রবেশ করে। এদিন কোনো রকম পূর্ব শর্ত ছাড়াই বেলারুশ সীমান্তে রাশিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে বলা হয়েছে, এই সংলাপের মূল উদ্দেশ্য হলো অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার সেনা প্রত্যাহার। তার দেশের জন্য পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জেলেনস্কি ঘোষণা দেয়ার মধ্যেই এই আলোচনা শুরু হয়। তিনি দ্রুততার সঙ্গে তার দেশকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যপদ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ওদিকে জেরুজালেম পোস্ট রিপোর্ট করেছে, বৃটেনে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছেন ফুটবল ক্লাব চেলসির মালিক রোমান আব্রামোভিচ। তিনি কিয়েভের অনুরোধে বেলারুশে এই আলোচনায় সহযোগিতা করছেন। এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে অনলাইন স্কাই নিউজে। সপ্তাহান্তে রাশিয়ান এই বিলিয়নিয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি চেলসির নিয়ন্ত্রণ থেকে সরে যাবেন। তবে মালিক হিসেবে থাকবেন।
পুতিনের মন্তব্যের জবাব: রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার পারমাণবিক অস্ত্র বিষয়ক বাহিনীকে উচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এ নিয়ে বিশ্বে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এ মন্তব্যের মাধ্যমে ইউক্রেনে পুতিন যে হতাশাজনক অবস্থায় পড়েছেন, তা থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন বৃটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস। তিনি মনে করেন, এর মধ্যদিয়ে পুতিন স্মরণ করিয়ে দিতে চেষ্টা করেছেন যে, রাশিয়ার পারমাণবিক সক্ষমতা আছে। ওদিকে ইউক্রেনকে দেয়া পশ্চিমা মিত্রদের অস্ত্র সরবরাহকে বিপজ্জনক ও অস্থিতিশীলকর পরিস্থিতি বলে অভিযোগ করেছে ক্রেমলিন। তবে পুতিনের নির্দেশের বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করেনি। ইউক্রেনের বাহিনী বেসামরিক মানুষজনকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অপ্রমাণিত অভিযোগ করেছে ক্রেমলিন। তবে সঙ্গে সঙ্গে তাদের এ দাবিকে ইউক্রেনের কূটনীতিক ও সাবেক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডানিলো লবকিভস্কি প্রত্যাখ্যান করেছেন। বলেছেন, এটা মিথ্যা এবং রাশিয়ার প্রচারণা। তিনি পাল্টা বলেছেন, ইউক্রেনের সাধারণ নাগরিকরা যে বীরত্ব ও সাহসিকতার পরিচয় দিচ্ছেন, তার ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে। এসব মানুষ তাদের স্বাধীনতাকে রক্ষার জন্য লড়াই করছে।
গাড়ির ভেতর পিতামাতাসহ বালিকাকে হত্যা: প্রতিদিনই বাড়ছে বেসামরিক মানুষ মৃত্যুর সংখ্যা। এ সংখ্যা নিয়ে নানা রকম তথ্য আছে। জাতিসংঘের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এই যুদ্ধে কমপক্ষে ১০২ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে সাতটি শিশু। অন্যদিকে কমপক্ষে ৫ লাখ শরণার্থী পালিয়ে পাশের দেশগুলোতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। রোববার ইউক্রেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, মারা গেছেন ৩৫২ জন বেসামরিক মানুষ। এর মধ্যে ১৪টি শিশু। আহত হয়েছেন ১৬৮৪ জন। মৃত শিশুদের মধ্যে প্রথম নাম প্রকাশ করা হয়েছে একটি বালিকার। সে হলো রাজধানী কিয়েভের পলিনা। সে ছিল প্রাইমারি স্কুলের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। রাশিয়ান স্যাবোটাজকারী একটি গাড়িতে থাকা পলিনা ও তার পিতামাতাকে হত্যা করেছে গুলি করে। ফেসবুকে এ কথা লিখেছেন ডেপুটি মেয়র ভোলোদিমির বোনদারেঙ্কো। তিনি আরও জানিয়েছেন পলিনার ভাইকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল একটি হাসপাতালে। আর এক বোনকে রাখা হয়েছে আরেকটি হাসপাতালের আইসিইউতে।
কিয়েভে বোমা হামলা হচ্ছে: পরিবার নিয়ে পালিয়ে পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন এক বৃটিশ অভিবাসী। তিনি বলেছেন, রাজধানী কিয়েভ ছেড়ে যাওয়ার সময় তিনি বোমা হামলার শব্দ শুনতে পেয়েছেন। তার নাম স্টুয়ার্ট ম্যাকেঞ্জি। তিনি বলেছেন, প্রথমে তিনি কিয়েভেই থাকতে চেয়েছিলেন এবং ইউক্রেনিয়ানদের সমর্থন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সন্তানের বিপদের কথা চিন্তা করে তিনি পরিবার নিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। খারকিভে নিহত কয়েক ডজন: ইউক্রেনের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন খারকিভে রাশিয়া ভারী গোলা নিক্ষেপ করছে। এতে সেখানে কয়েক ডজন বেসামরিক মানুষ মারা গেছেন। আহত হয়েছেন কয়েক শত। কিয়েভে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপদেষ্টা অ্যান্টন হেরাশ্চেঙ্কো ফেসবুকে লিখেছেন, ‘গ্রাস’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে মস্কোর বাহিনী আবাসিক এলাকাগুলোতে হামলা চালাচ্ছে। এতে কয়েক ডজন মানুষ নিহত ও কয়েক শত আহত হয়েছেন। এই ভয়াবহতা পুরো বিশ্বকে দেখতে হবেই। দখলদারদের মৃত্যু হোক।