ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের পশ্চিমাঞ্চলীয় একটি এলাকায় প্রচণ্ড বন্দুকযুদ্ধের মধ্যে পড়ে ছয় বছরের একটি শিশু নিহত হয়েছে। সেখানকার একটি হাসপাতাল জানিয়েছে, স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যায় ওই বন্দুকযুদ্ধে বেশ কয়েকজন আহত হয়। কিয়েভের একটি হাসপাতালের চিকিৎসক সেরগেই চেরনিসুক বলেছেন, আহতদের মধ্যে দুই কিশোর এবং তিন জন প্রাপ্তবয়স্ক রয়েছেন।
এ ছাড়া খারকিভ শহরে একটি আবাসিক ভবনে গোলার আঘাতে একজন নিহত হয়েছেন। ইউক্রেনের স্টেট ইমার্জেন্সি সার্ভিস জানিয়েছে, শনিবার রাতে পূর্বাঞ্চলীয় খারকিভ শহরে একটি নয়তলা আবাসিক ভবনে ‘শত্রুর গোলা’ আঘাত হানে। এতে এক নারী নিহত হন। জরুরি পরিষেবা দপ্তর আরও জানায়, গোলার আঘাতে ভবনটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবং ভবন থেকে প্রায় ৮০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই বেসমেন্টে আশ্রয় নিয়েছিল।
তবে, কিয়েভের আবাসিক ভবনে রকেট হামলার দায় নিয়ে চলছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। রুশ সেনারা কিয়েভসহ দেশটির অন্যান্য শহরগুলোতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, নিক্ষেপ করছে ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলা। পশ্চিমা সূত্রগুলো বলছে, রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন ইউক্রেনের সেনারা।
ইউক্রেনে রুশ হামলার চতুর্থ দিন যুদ্ধের চতুর্থ দিনে রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের শহরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলা নিক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া। আজ রোববার সকালে কিয়েভের ভাসিলকিভের তেল মজুদাগার এবং গ্যাসের পাইপলাইনে রকেট হামলা হয়েছে। আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত কড়া কারফিউ ঘোষণা পর, কিয়েভের রাজপথে ইউক্রেন সেনাদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে।
পশ্চিমা গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন ইউক্রেনের সেনারা। এতটা প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে, তা অভিযানের সময় ভাবেনি রুশ বাহিনী। ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলীয় চেরনিহিভ, দক্ষিণের ওডেসা, উত্তর–পূর্বের খারকিভ এবং পূর্বাঞ্চলীয় সুমি শহরে রুশ সেনাদের সঙ্গে ইউক্রেন বাহিনীর তুমুল লড়াই চলছে। শহর রক্ষায় পেট্রল বোমা বানাচ্ছেন ইউক্রেনের নারীরা। জ্বালানি, রসদ ও খাদ্য সংকটে পড়েছে রুশ সেনারা।
তবে, ইউক্রেনের দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলীয় মেলিতোপোল শহর দখলে নেওয়ার দাবি করেছেন রুশ সেনারা। আর, চেরোনবিল পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দেখা গেছে রুশ বাহিনীর সঙ্গে যৌথ টহল দিচ্ছে ইউক্রেন সেনারা। এ ছাড়া কয়েকজন ইউক্রেন সেনা আত্মসমর্পণ করেছেন বলেও ভিডিও প্রকাশ করেছে রাশিয়া। এদিকে, যুদ্ধ থেকে বাঁচতে ইউক্রেন থেকে লাখ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পাশের দেশগুলোর দিকে ছুটছেন।
পোল্যান্ড বলছে, ইউক্রেন থেকে প্রায় এক লাখ মানুষ তাঁদের সীমান্তে ঢুকেছে। এ ছাড়া হাঙ্গেরি, রোমানিয়া ও স্লোভাকিয়ায়ও যাচ্ছেন যুদ্ধশরণার্থীরা। জাতিসংঘ বলছে, দেড় লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। রাশিয়ার পার্লামেন্ট ডুমার স্পিকার ভিয়াচেস্লাভ ভোলোদিন দাবি করছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আগের দিনই রাজধানী কিয়েভ ছেড়ে সঙ্গীদের নিয়ে পোল্যান্ড সীমান্তবর্তী লিভ শহরে আশ্রয় নিয়েছেন।