নব্বই দশকে অডিও ও প্লেব্যাকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিলেন সংগীতশিল্পী রবি চৌধুরী। বর্তমানে তাকে আগের রূপে দেখা না গেলেও সংগীত চর্চা বন্ধ করেননি। দেশ-বিদেশে নিয়মিত শো করছেন তিনি। সংগীত ক্যারিয়ারের নানা দিকসহ ইন্ডাস্ট্রি প্রসঙ্গে তিনি কথা বললেন ইত্তেফাকের সঙ্গে। সাক্ষাতকার নিয়েছেন এ এম রুবেল দেশের বাইরে বেশ কয়েকটি শো করে এলেন। করোনা পরবর্তী সময়ে অভিজ্ঞতা এবং দর্শক-শ্রোতাদের আগ্রহ কেমন দেখলেন?
অনেকদিন পরই বলা চলে স্টেজ শো শুরু হয়েছে। তবে আগের মতো স্বাভাবিক হয়েছে এটা বলা যাবে না। সম্প্রতি দেশের বাইরে বেশ কয়েকটি শো করলাম। যেখানে দর্শক-শ্রোতাদের আগ্রহ ছিল লক্ষণীয়। আমেরিকার মতো জায়গায় হল ভর্তি দর্শক-শ্রোতা ছিল। তবে ওমিক্রন বাড়ায় কয়েকটি শো বাতিল করে চলে আসতে হয়েছে। এমন অবস্থায় গানের প্রতি শিল্পীদের গানের প্রতি আগ্রহ কমে যাবে মনে করছেন না?
এভাবে চলতে থাকলে শিল্পীদের বিকল্প ব্যবস্থার কথা চিন্তা করতে হবে। শুধু শোয়ের ওপর নির্ভর করলে হবে না। তাছাড়া এখন তো অ্যালবামের যুগও নেই। আমাদের সময় তো অ্যালবাম থেকে ভালো একটা অর্থ আসতো। পাশাপাশি একদিনে একাধিক শো করতাম। তবে যারা কম বাজেটে শো করছেন তারা কিন্তু ভালো আছেন। অনেকেই অভিযোগ করেন রবি চৌধুরীকে গানে কম পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে কী মন্তব্য করবেন? এটা ভুল। আমি গানের সঙ্গেই আছি। তবে আগের মতো কম বাজেটে কাজ করি না বলে মনে হচ্ছে গানের সঙ্গে নেই। ক্যারিয়ারে খ্যাতিও দেখে এসেছি। শ্রোতাদের জন্যই আমি আজ রবি চৌধুরী। তাদের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে গান করছি, করে যাবো।
প্লেব্যাকেও আপনাকে আগের মতো দেখা যায় না কেন? সিনেমা আগে আবার আগের মতো তৈরি হোক। নিশ্চয় আমাকে তখন পুরনো রূপে দেখা যাবে! এর বাইরে অন্যান্য কাজের ব্যস্ততা নিয়ে জানতে চাই — বেশ কয়েকটি নতুন গান প্রস্তুত করলাম। শিগগিরই সেগুলো প্রকাশ পাবে। পাশাপাশি আমার নিজ এলাকায় একটি মসজিদ করছি। এতিমখানায় সহযোগিতা করছি। আমি আসলে মানুষ হয়ে মানুষের পাশে থাকতে চাই। এ ধরনের কাজ করতে পারলে মানসিক শান্তি পাই।
এখনকার গানে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং অতিরিক্ত বাজেটে মিউজিক ভিডিওর বিষয়গুলো কীভাবে দেখছেন?
সময় চাইলে প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতেই পারে। কিন্তু সেটি কী পরিমাণ ব্যবহার করব তার একটা সীমা থাকা উচিত। আমরা যখন শুরু করি তখন একবার দাঁড়িয়ে ৫-৬টি গান গেয়েছি। কিন্তু এখন গান একটি একটি শব্দ করেও গাওয়া যায়! সুর ঠিক না হলে অটো টিউন দিয়ে ঠিক করা হচ্ছে। যে কারণে এখন গায়কের অভাব নেই, কিন্তু শিল্পীর অভাব রয়েছে। যারা এগুলোর ব্যবহার করছেন তারা নিজেরাও জানেন তারা শিল্পী কি-না! আর মিউজিক ভিডিও নিয়ে বলবো, যদি সুন্দর গল্প এবং গানের সঙ্গে ভিডিওটি মানাসসই হয়, তবে প্রচারের জন্য অবশ্যই সেটার দরকার আছে।
ভিউ চর্চা নিয়ে কী বলবেন? আমি কখনোই ভিউ দিয়ে শিল্পীদের মূল্যায়ন করি না। অনেক বাজে গানেরও ভিউ হয়। তবে ভালো গানের ভিউ না হলেও ভালো গান সবসময়ই ভালো। আগের মতো এখনকার গান মানুষের হৃদয় স্পর্শ করতে পারছে না কেন? দেখুন, আমাদের যাত্রা শুরুর আগের শিল্পীদের গান আরো বেশি ভালো ছিল। এমনকি আমাদের গানও মানুষের মুখে মুখে আছে। আমাদের গুণী শিল্পীদের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সংগীত ইন্ডাস্ট্রি এবং ভালো গানেরও মৃত্যু হচ্ছে। একটি জনপ্রিয় গানের দু-চার লাইন নিয়ে নতুন গান তৈরি চর্চা নিয়ে কী বলবেন? অস্থির প্রজন্ম এই কাজটি করছে। পাশের দেশে এই প্রবণতা দেখে সেটাকে নকল করছে। তবে আমি সবসময় নকলকে নকলই বলবো। আমি মনে করি, বাংলা গানকে বাংলা গানের মতো করেই চর্চা করা উচিত।
সংগীত ইন্ডাস্ট্রির সোনালি যুগ থেকে নিয়মিত গানের সঙ্গে আছেন। সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে বর্তমান ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা কেমন দেখছেন? আমরা যখন শুরু করেছিলাম তখন মজা করে গান করতাম। শিল্পী, গীতিকার, সুরকার, বিনোদন সাংবাদিক থেকে শুরু করে সবার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, সপ্তাহে একবার হলেও দেখা হতো। এখন তো সেটা নেই! তখনকার মতো তো এখনকার ইন্ডাস্ট্রি নেই। তবে সত্যিকারার্থে যারা শিল্পী তারা কখনো হারিয়ে যায় না বা ব্যর্থ হয় না।
সিনিয়র শিল্পীদের অবমূল্যায়ন প্রসঙ্গে কী বলবেন? দেখুন, শিল্পীদের কখনো রাজনীতিতে ফেলে কালো তালিকাভুক্ত করা উচিত না। কারণ শিল্পীদের কোনো দল হয় না। আমরা গুণীর কদর করি, পুরস্কার দিই মৃত্যুর পর। কিন্তু তখন মূল্যায়ন করে কী হবে? বেঁচে থাকতেই শিল্পীদের সম্মান করা উচিত।