ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার ধারাকপুর গ্রামের নুর ইসলাম (৬৫)। পেশায় একজন ভিক্ষুক। ভিক্ষুক হলেও তিনি বিয়ে করেছেন বেশ কয়েকটি। স্থানীয়দের মতে সেই বিয়ের সংখ্যা ১১। ১৫ বছর আগে প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন। যদিও সেই বিয়ে টেকেনি চার মাস। এরপর একে একে তিনি বিয়ে করেছেন আরও ৯টি। আর এ বউরা ভিক্ষুক কিংবা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। ফলে তাদের ৯ জনই নূরকে ছেড়ে চলে গেছেন।
তবে ১১ নম্বর স্ত্রী জান্নাত বেগমকে হারাতে চান না নুর। সেজন্য তিনি চোখের আড়াল হতে দেন না এক মুহূর্তের জন্য। তাকে হারানোর ভয়ে নিজের শরীরের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখেন স্ত্রীকে। ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করার সময়ও স্ত্রী থাকে তার কোমড়ের সঙ্গে বাঁধা। নুরের এমন উদ্ভট কাণ্ডের ছবি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ২০০৬ সালে নুর ইসলামের প্রথম স্ত্রী হাজেরা খাতুন অসুস্থ হয়ে মারা যান। তাদের সংসারে ছিল এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। স্ত্রী হাজেরার মৃত্যুর পর তার ছেলেও মারা যায়। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর নুর ইসলাম কিছুটা ‘ভারসাম্যহীন’ হয়ে পড়েন। শুরু হয় ভিক্ষাবৃত্তি। নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে মানসিক ভারসাম্যহীন কোনো নারী পেলেই তিনি সঙ্গে করে নিয়ে আসতেন। পরে স্থানীয়রা তাদের বিয়ে দিতেন। কিন্তু কিছুদিন পরই মানসিক ভারসাম্যহীন সেসব নারী নিরুদ্দেশ হয়ে যেতেন।
এভাবে ৯ জন নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ার পর গত এক বছর আগে ফুলপুর-ময়মনসিংহ সড়কের আমুয়াকান্দা এলাকায় বসবাস করা জান্নাত বেগম নামে আরেক মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর সঙ্গে পরিচয় হয় নুরের। পরে জান্নাতকেও নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন। এরপর থেকেই হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে জান্নাতকে দড়ি দিয়ে বেঁধে নিজের সঙ্গে নিয়ে ঘোরেন।
জানা গেছে, দুই শতক জায়গায় জরাজীর্ণ একটি খুপরি ঘরে স্ত্রী জান্নাতকে নিয়ে বসবাস করেন নুর। ঘরভর্তি নোংরা আর ছেড়া কাপড়ে ভর্তি। তালাবদ্ধ ভাঙা দরজা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করেন তারা। একটু অসতর্ক হলেই ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। রোদ-বৃষ্টি কিংবা শীতে বছরের পর বছর এভাবেই কষ্টে দিনাতিপাত করছেন নুর।
নুরের ছোট ভাই আব্দুল মালেক বলেন, দুই বোন এবং তিন ভাইয়ের মধ্যে নুর দ্বিতীয়। বয়স অনেক হলেও এখনো বয়স্কভাতার কার্ড পাননি তিনি। দুই শতাংশ জায়গা থাকলেও, থাকার ভালো কোনো ঘর নেই।
উপজেলার ভাইটকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাল উদ্দিন বলেন, নুর ইসলাম সরকারের ‘জমি আছে ঘর নাই’ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। সেজন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করা হয়েছে। এছাড়াও নুরকে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।