ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছেন পূর্ব ইউক্রেনে রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদী-নিয়ন্ত্রিত এলাকার বাসিন্দা ৬৫ বছরের লারিসা। পাশাপাশি গত আট বছর ধরে সংঘাত এবং যে কোনো মুহূর্তে রাশিয়ার আগ্রাসনের হুমকি মাথায় নিয়েই সাহসের সঙ্গে হাসিমুখে বাস করে যাচ্ছেন তিনি। পূর্ব ইউক্রেনের নভোত্রয়েত্স্ক ক্রসিং পয়েন্টে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা এই বৃদ্ধার সঙ্গে কথা হয় বিবিসির। এই রেখার দুই পাড়ের যুদ্ধ এরই মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩ হাজার বেসামরিক নাগরিক।
প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে উজ্বল নীল রঙের জ্যাকেট, গোলাপী জাম্পার এবং ম্যাচ করা উলের টুপি পরা লারিসা নিজের নামের শেষ অংশ বলতে রাজি নন। অনুমতিপত্র হাতে ধৈর্যসহকারে ইউক্রেন সরকার নিয়ন্ত্রিত অংশ থেকে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অংশে যেতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন তিনি। এখানে কী কী করতে হবে সবই তার নখদর্পণে। কারণ, প্রতি ছয় মাস পর পর তিনি এ কাজ করছেন। লারিসা বলেন, ‘আমাকে সেন্ট্রাল ইউক্রেনের দনিপরোতে একটি হাসপাতালে শারীরিক পরীক্ষার জন্য যেতে হয়। এখন আমি দোনেত্স্কে আমার বাড়িতে ফিরছি।’
বিপরীত দিক থেকে লাঠিতে ভর দিয়ে কাঁপা কাঁপা পায়ে হেঁটে আসছিলেন ৮১ বছরের সভেত্লানা। কংক্রিটের একটি ব্লকে বসার সময় তিনি প্রায় পড়ে যাচ্ছিলেন। তার স্বামী লিওনিড দৌড়ে এসে তাকে ধরেন। তিনি কোনোরকমে স্বামীকে ধরে পড়ে যাওয়া ঠেকান। অথচ, তাদের যাত্রা মাত্র শুরু হয়েছে। সভেত্লানা বলেন, ‘গত দুই মাসে এই প্রথম আমরা যাচ্ছি। আমরা আমাদের সন্তানদের দেখতে পারছি না। আমার নাতির জন্ম হয়েছে, কিন্তু এখনো আমরা তাকে দেখিনি। এখন আমরা তাকে দেখতে পাবো।’
সশস্ত্র সেনা, ব্যারিয়ার, পরিচয়পত্র পরীক্ষা, নভোত্রয়েত্স্ক ক্রসিং পয়েন্ট যেন সত্যিকারের স্থায়ী কোনো সীমান্ত। সেখান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেই যুদ্ধক্ষেত্রে শোনা যাচ্ছিল গোলা বিস্ফোরণের শব্দ। চেক পয়েন্টের ডেপুটি কমান্ডার ক্যাপ্টেন ইন্না কিশচুক বলেন, ‘রাতে গোলার শব্দ আরও বেড়ে যায়। প্রয়োজনে আশ্রয় নিতে আমাদের একটি শেল্টার আছে। আমাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং আমরা জানি কী করতে হবে।’