ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচন কমিশনে দলীয় লোক নিয়োগ দেয় তবে তা হতাশাব্যঞ্জক হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের। তিনি বলেন, ‘শুরু থেকেই আমরা কমিশন গঠনে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। শেষ পর্যন্ত যদি একটি দলের চামচা দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন হলে তা হবে হতাশাজনক।’
নির্বাচন কমিশকে ক্ষমতা না দিলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না উল্লেখ করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচন কমিশন আইন চেয়েছিলাম। কিন্তু, নির্বাচন কমিশন গঠনে যে আইনটি হয়েছে তা হচ্ছে নতুন মোড়কে পুরনো জিনিস। দেশের মানুষ অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়।’
মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তরের ২৬টি থানা এর কমিটি ঘোষণা ও মতবিনিময় সভায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান একথা বলেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনসহ স্থানীয় সব নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভরাডুবির পরও জি এম কাদের বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে আওয়ামী লীগের কর্মীরাই এখন আর নৌকায় ভোট দিতে চায় না।
এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন রাষ্ট্র পরিচালনায় থেকে অনেক জন সমর্থন হারিয়েছে। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি আর বৈষম্য দেশের মানুষের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি দেশের নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশের নাম এখন মিয়ানমার ও উত্তর কোরিয়ার পাশে।’ সংসদীয় গণতন্ত্র হত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে জি এম কাদের আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কঠোর সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘অনেক জনসমর্থন থাকা সত্ত্বেও বিএনপি এখন ক্ষয়িষ্ণু দলে পরিণত হয়েছে। গণমানুষের কল্যাণে বিএনপির বক্তব্য পরিস্কার নয়। আওয়ামী লীগের পরিবর্তে বিএনপি ক্ষমতায় এলে দুর্ণীতি আর অপরাজনীতি আরও বেড়ে যাবে। এই দুটি দল ৯১ সালের পর থেকে সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে গণতন্ত্রকে ধংস করেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে দেশকে দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছিল, কিন্তু দুর্নীতিবিরোধী স্লোগান দিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে পরপর চারবার দেশকে দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছে। আবার, বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার পর দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শুরু হয়েছে কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর থেকে বিচারবর্হিভূত হত্যা অনেক গুণ বেড়েছে।’
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ক্ষমতাসীন হলে মানুষের ‘মুক্তি মিলবে না’ বলেও অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন তিনি। জি এম কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ১৯৯১ সালের পর থেকে বারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে স্বাধীনতার মূল চেতনা ধ্বংস করেছে। তারা সংবিধানের মূল চার নীতির তিনটিই প্রায় শেষ করে দিয়েছে। সংবিধানের মূল চার নীতির মধ্যে গণতন্ত্র নেই, এখন সকল ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে। গণতন্ত্রের বদলে তারা দেশে সাংবিধানিকভাবে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ এই দুটি দলের বিপরীতে জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় দেখতে চায়। তাই নির্বাচনের আগেই দলকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।’ এসময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আমরা আর কারও জোটে পা দেব না। আমরা এককভাবেই তিনশো আসনে নির্বাচন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নির্বাচনের জন্য কোনো সমাধান নয়। নির্বাচনের জন্য ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করলেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। ক্ষমতাহীন কমিশন দিয়ে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না।’
ঢাকা মহানগর উত্তর প্রতিনিধি সভায় সভাপত্বি করেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু ও জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এবং সদস্য সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম পাঠানের সভা পরিচালনায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সল চিশতী, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, উপদেষ্টা শেরীফা কাদের, আমানত হোসেন আমানত, মুজিবুর রহমান লিপটন, ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিক, সুলতান আহমেদ সেলিম, যুগ্ম মহাসচিব শামসুল হক, ফখরুল আহসান শাহজাদা, ইকবাল হোসেন তাপসসহ আরও অনেকে।