ইউক্রেন সীমান্তে এক লাখের বেশি সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। পশ্চিমা ও ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খুব দ্রুতই হামলা চালাতে পারে রাশিয়া। স্যাটেলাইটের চিত্রে দেখা গেছে, এরই মধ্যে ইউক্রেনের তিন দিকে অর্থাৎ বেলারুশ, ক্রিমিয়া ও পশ্চিম রাশিয়ায় ব্যাপক সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন করেছে মস্কো। রোববার (১৩ জানুয়ারি) সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
যদিও যুদ্ধ এড়াতে সব দিক থেকে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের জন্য তাৎক্ষণিক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পূর্ব ইউক্রেন
যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজর রাখা হচ্ছে পূর্ব ইউক্রেনে। বিশেষ করে ডোনেটস্ক ও লুহানস্কের বিচ্ছিন্ন অঞ্চলগুলোতে। এ অঞ্চলে ইউক্রেনের বাহিনী ও রাশিয়ার সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ২০১৪ সাল থেকে সংঘর্ষে লিপ্ত রয়েছে।
স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, ইয়েলনিয়াতের একটি বড় ঘাঁটি এরই মধ্যে খালি করা হয়েছে। সেখান থেকে রাশিয়ান ট্যাঙ্ক, কামান ও অন্যান্য অস্ত্র সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইউক্রেন সীমান্তের দিকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ সামরিক ঘাঁটিগুলো থেকে সীমান্তের দিকে অস্ত্র নিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া।
স্যাটেলাইট ছবির কোম্পানি ম্যাক্সারের জ্যেষ্ঠ পরিচালক স্টিফেন উড বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যানবাহন (ট্যাঙ্ক, স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি ও অন্যান্য সহায়তা যান) রাশিয়ার উত্তর-পূর্ব ঘাঁটি থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সামরিক গতিবিধি ট্র্যাকের বিশেষজ্ঞ কনরাড মুজিকা এক টুইট বার্তায় সতর্ক করে বলেন, করস্কে প্রচুর সামরিক যান ও সেনা সরিয়ে নিতে দেখা যাচ্ছে।
বেলারুশ
বেলারুশ থেকেও ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে রাশিয়া। এরই মধ্যে সেখানে প্রচুর সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। রাশিয়াকে সব ধরনের সহযোগিতা করছে বেলারুশ সরকার। বৃহস্পতিবার দেশ দুটি ১০ দিনের জন্য যৌথ সামরিক মহড়াও শুরু করে। যা পশ্চিমাদের জন্য মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্নায়ুযুদ্ধের পর এই প্রথম বেলারুশে এত সেনা মোতায়েন করেছে মস্কো। ধারণা করা হচ্ছে দেশটিতে ৩০ হাজার সেনা, স্পেটসনাজ স্পেশাল অপারেশন ফোর্স, এসইউ-৩৫ যুদ্ধ বিমান, ইস্কান্দার ডুয়েল ক্যাপাবল মিসাইল ও এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। এখান থেকেও ইউক্রেনে সম্ভাব্য হামলা চালানো হতে পারে।
ম্যাক্সারের প্রকাশিত স্যাটেলাইটের ছবিতে দেখা গেছে, বেলারুশের বেশ কয়েকটি স্থানে রাশিয়া সামরিক বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। ইউক্রেন সীমান্তের কাছে তাদের ক্যাম্প স্থাপন করতে দেখা গেছে। যা মহড়ার স্থান থেকে কয়েকশ মাইল দূরে।
ক্রিমিয়া
২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে রাশিয়া। এখান থেকেও পরিচালিত হতে পারে যেকোনো অভিযান। তবে রাশিয়া ক্রিমিয়া থেকে হামলা চালবে কি না তা এখনো স্পষ্ট নয়। ব্যাপক সংখ্যক সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েনের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে ম্যাক্সার। এটি অনুমান করছে ক্রিমিয়ার রাজধানী সিমফেরোপলে উত্তরে সাড়ে পাঁচশ সেনা ক্যাম্প ও শত শত সামরিক যান মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে একের পর এক দেশ নিজ নিজ নাগরিকদের ইউক্রেন ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো বার বার সতর্ক করেছে যে, রাশিয়া হয়তো ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে। সেই আশঙ্কা থেকেই ডজনখানেক দেশ তাদের নাগরিকদের নিরাপদে ইউক্রেন ছাড়তে বলেছে। তবে কোনো ধরনের আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করেছে মস্কো।