শাহজালাল বিমানবন্দরে ই-পাসপোর্ট গেটের উদ্বোধনের ৭ মাস পার হয়ে গেলেও এর সেবাদান কার্যক্রম চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে পাওয়া গেছে দুই পক্ষের দুই রকম বক্তব্য। বিমানবন্দরে ই-পাসপোর্টে পরিদর্শনকারী ইমিগ্রেশন পুলিশের জনবলের অভাব, কর্মীদের দক্ষতা ও আধুনিক প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ না থাকা, ই-পাসপোর্টের সার্ভার জটিলতা, পাসপোর্ট অধিদপ্তর, ইমিগ্রেশন পুলিশের মধ্যে সমন্বয় না থাকা ও যোগাযোগের অভাব, কারিগরি জটিলতা, ই-পাসপোর্টের গ্রাহক সংখ্যা কম থাকাসহ আরও একাধিক বিষয়ের কারণে চালু করা যায়নি ই-পাসপোর্ট গেটের কার্যক্রম। এতে যেসব যাত্রী ই-পাসপোর্টধারী শাহ্জালাল বিমানবন্দরে যাচ্ছেন তারা ওই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ওই সব ই-পাসপোর্টধারীদের হাতে লেখা পাসপোর্টধারীদের মতোই সেবা পেতে হচ্ছে। এ নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। পাসপোর্ট অফিস বলছে, বিমানবন্দরে ই-পাসপোর্টের গেট চালু হওয়ার পর থেকেই তারা ইমিগ্রেশন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। যে সব ইমিগ্রেশন পুলিশের সদস্যরা ই-পাসপোর্টের গেটে দায়িত্ব পালন করবেন তাদের জার্মানিতে প্রযুক্তিগত ট্রেনিং দেয়া লাগবে। বিষয়টি তারা পুলিশ সদর দপ্তর ও ইমিগ্রেশন পুলিশকে জানিয়েছেন। কিন্তু, তাদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন পুলিশ সদস্যকে জার্মানিতে পাঠানো হবে তার তালিকা দেয়া হয়নি।
তবে ইমিগ্রেশন পুলিশ বলছে, শাহ্জালালে ই-পাসপোর্টের গেট চালু হলেও পাসপোর্ট অধিদপ্তর এখন পর্যন্ত সার্ভার সংযুক্তকরণের যে পদ্ধতি রয়েছে তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে করে ই-পাসপোর্টের ই-গেটের কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। সার্ভার সংযুক্ত হলেই এ কার্যক্রম চালু করা সম্ভব। তারা নিয়মিত পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। শাহ্জালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, ই-পাসপোর্ট এর কার্যক্রম চালু হলে ইমিগ্রেশনে যাত্রীদের ভোগান্তি কমে যাবে। যাত্রী জট কমার পাশাপাশি যাত্রীরা অন্যান্য ক্ষেত্রেও উন্নত সেবা পাবে।
এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ূব চৌধুরী জানান, ‘বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের দায়িত্ব পালন করে থাকে পুলিশের সদস্যরা। যারা ই-পাসপোর্ট পরিদর্শন করবেন তাদের উন্নত ট্রেনিং দরকার জার্মানিতে। বিষয়টি আমরা পুলিশ সদর দপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। পুলিশের বিশেষ শাখা এসবি’র এক কর্মকর্তা জানান, ই-পাসপোর্টের সার্ভার জটিলতা কেটে গেলেই শুরু হবে ই-গেটের কার্যক্রম।
গতকাল শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, বিমানবন্দরের দ্বিতীয় তলার ৫ নম্বর গেটের পাশেই রয়েছে ই-পাসপোর্টের গেট। গেটে মাইক্রো প্রসেসর চিপ ও কোর অ্যান্টেনা বসানো রয়েছে। সেখানে যাওয়া যাত্রীর যাবতীয় তথ্য পাসপোর্টের মুদ্রিত ও চিপে সংরক্ষিত থাকে। ওই গেটে যাত্রীদের পাসপোর্ট স্ক্যান হওয়ার পর পরই গেটে লাগানো সংযুক্ত ক্যামেরা যাত্রীকে তাৎক্ষণিক শনাক্ত করবে এবং কম্পিউটারে তার যাবতীয় তথ্য উঠে যাবে। কোনো ব্যক্তির যদি তথ্যে কোনো গরমিল থাকে তাহলে রেড সিগন্যাল দিবে কোর অ্যান্টেনা থেকে। একইভাবে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও একইভাবে সিগন্যাল দেয়া হবে।
তখন সেখানে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা বুঝবেন যে, যে যাত্রী গেটে এসেছে তার পাসপোর্ট ও ব্যক্তিগত জটিলতা আছে। তখন তাকে ই-পাসপোর্টের গেট থেকে সরিয়ে অভ্যর্থনা রুমে নেয়া হবে। সেখানে তার আলাদাভাবে আনুষঙ্গিক তথ্য যাচাই-বাছাই করা হবে। এই সমস্ত পদ্ধতি যা এতদিন ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে বিমানবন্দরের দায়িত্ব পালনকারী ইমিগ্রেশন পুলিশ কর্তৃপক্ষ। এই কার্যক্রমটি ২০২১ সালের ৩০শে জুন উদ্বোধন করা হয়। জার্মানির ভেরিডোস নামে একটি সংস্থা এই গেট স্থাপনের কারিগরি সহায়তা করেছেন। বিমানবন্দরের কর্মচারীরা জানালেন, উদ্বোধনের পর এখনো এর কার্যক্রম চালু হয়নি।
সৌরভ নামে এই যাত্রী জানালেন, তিনি কাতার এয়ারওয়েজে করে বিদেশে যাবেন। তার ই-পাসপোর্ট আছে। যথারীতি তিনি ই-গেটে গিয়ে সেবা পাননি। সেখানে কোনো লোকজন পাওয়া যায়নি। আজিজ নামে আরেক যাত্রী জানান, অনেক আগেই ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম চালু হলেও এখন পর্যন্ত বিমানবন্দরে ই-গেট চালু হয়নি। তাদের আগের মতোই ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে পাসপোর্ট দেখাতে হয়। লম্বা লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতে যাত্রীদের ভোগান্তির পাশাপাশি যে সব কর্মকর্তা ইমিগ্রেশনে দায়িত্ব পালন করেন তারাও দায়িত্ব পালনে হিমশিম খান।