ম্যানেজিং কমিটির ক্ষমতা দখল কেন্দ্রিক দ্বন্দের জের ধরে বিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে বারখাদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনছার আলীকে পুলিশ প্রহরায় প্রকাশ্যে নারী পুরুষ ও শিক্ষার্থীদের উস্কে দিয়ে ঝাড়– ও জুতা পেটার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (০২ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার বারখাদা মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্বরে বারখাদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবকবৃন্দের ব্যানারে স্থানীয়দের মানব বন্ধন চলাকালে এই ঘটনা ঘটেছে।
এসময়ের ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, “সকাল থেকেই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের অভিভাবকদেসহ ঝাঁড়– ও লাল কার্ড এবং একটি ব্যানার নিয়ে বিদ্যালয়ের গেটে অবস্থান করে। সবাইকে প্রধান শিক্ষকের আগমনের অপেক্ষা করতে দেখা যায়। একে একে আশেপাশের এলাকা থেকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এসে জড়ো হতে থাকে। প্রধান শিক্ষক আসলেন বেলা ১১টায়। তবে তিনি আসলেন থানা পুলিশের পুলিশ ভ্যানে। এসময় অভিভাবকরা শ্লোগান দিতে লাগলো এই প্রধান শিক্ষক চাই না। তারা বিদ্যালয়ের মেইন গেটের সামনে ঝাঁড়– ও জুতা হাতে নিয়ে পূর্ব থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন। পুলিশ পাহারায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক আন্দোলনকারীদের কাছে যেতেই তারা প্রধান শিক্ষক আনছার আলীর উপরে গণহারে জুতা ও ঝাঁড়– দিয়ে মারতে থাকে। পরে পুলিশ ঐ শিক্ষককে উদ্ধার করে তার কক্ষে নিয়ে যান।”
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনসার আলীর বিরুদ্ধে অর্থ লুটপাট, স্বেচ্ছাচারিতা এবং অসৎ আচরণের অভিযোগ তুলে মানবন্ধন করে ঐ শিক্ষককে অবাঞ্চিত করার ঘোষণার দাবী করেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারী অভিভাবক মো. আজিজুর রহমানের অভিযোগ, “প্রধান শিক্ষক আনসার আলী বিদ্যালয়ে শিক্ষার নামে ব্যবসা খুলে বসেছেন। যেসব শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ান, তাদের কাছ থেকেও টাকা নেন”। “ শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশ উপেক্ষা করে করোনাকীলন সময়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সেশন ফি, অতিরিক্ত পরীক্ষার ফি নিয়েছেন। আমরা বেশিরভাগই গরীব মানুষ। কেউ টাকা দিতে না পারলে তাকে পরীক্ষায় ফেল করানো হয়। সেই সাথে আবার ১০০০ টাকা দিতে হয় পাশ করানোর জন্য।” নির্বাচন না দিয়েই নিজের মনোনীতদের নাম প্রকাশ করে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ গঠন করেছেন। যাতে তার এ অনিয়ম আরো চলতে থাকে।”
এক অভিভাবকের অভিযোগ, “আমি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ্য আছি। আমি স্কুলের ১২ মাসের বেতন দিতে পারিনি। ঔষুধ কেনার টাকা দিতে গিয়ে ফতুর হয়ে গেছি। আমি স্কুলে এসে অর্ধেক বেতন দিই। এবং বাঁকীটা কিছুদিন পরে দিবো বলেছিলাম। কিন্তু পরীক্ষার দিন পরীক্ষার হল থেকে আমার মেয়েকে বের করে দেওয়া হয়।”
স্থানীয় ১৩নং পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান পাখির অভিযোগ, গত জানুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কিিমটি নির্বাচনের লক্ষে ১০টি নমিনেশন পত্র বিক্রী করেন প্রধান শিক্ষক। ১০জানুয়ারী ভোট গ্রহনের কথা ছিলো। এর মধ্যে দিয়ে হঠাৎ করে প্রধান শিক্ষক আনছার আলী লাপাত্তা হয়ে যান। কয়েকদিন পর শুনি প্রধান শিক্ষক গোপনে তার পছন্দের লোক নিয়ে পকেট কমিটি করেছে। পড়ালেখা না জানা ওই কমিটির আহŸায়ক শিক্ষার্থী অভিভাবকদের স্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্ত গ্রহন ও বাস্তবায়নের কারণে পুঞ্জিভুত ক্ষোভের প্রকাশ ঘটেছে ।
তবে এবিষয়ে অপর পক্ষের নেতা ও পূর্বের এডহক কমিটির আহ¦ায়ক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি তোজাম্মেল হকের সাথে কথা বলতে সেল ফোনে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এদিকে এসব অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনসার আলী জানান, “আমার বিরুদ্ধে এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা যে অভিযোগ করছেন তা সম্পূর্নরূপে মিথ্যা বানোয়াট ও মনগড়া। এখানে মূল সসম্যার কেন্দ্রবিন্দু হলো বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিকে নিয়ে স্থানীয় দুটি পক্ষের মধ্যে বিবদমান দ্বন্দ। বর্তমান যে কমিটি এখানে করা হয়েছে তা প্রকৃতপক্ষে রাজনৈতিক চাপে পড়ে এভাবে গোপনে কমিটি করতে আমি বাধ্য হয়েছি। এখানে আমার কিছু করার নেই। আমি নিরূপায় হয়ে এই ম্যানেজিং কমিটিকে মেনে নিতে হয়েছে।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক বলেন, এখানে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি তোজাম্মেল হক ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন গ্রæপের সাথে স্থানীয় পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান পাখি ও মুন্না মাজহার গ্রæপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির ক্ষমতা দখল কেন্দ্রিক দ্বন্দ চলে আসছে। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মান কেন্দ্রিক ব্যবসায়ী স্বার্থ দখলকে কেন্দ্র করে পক্ষগণের মধ্যে বিবদমান দ্বন্দ প্রকাশ্যরূপ নেয়। ওই ঘটনারই বলির পাঠা হলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনছার আলী।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত কুষ্টিয়া মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি, তদন্ত) নিশিকান্ত সরকার জানান, বুধবার সকালে বারখাদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা মানব বন্ধন করছে এমন সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে আন্দোলনকারীদের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা নিয়ন্ত্রনে পুলিশ ভুমিকা নেয় এবং ঘটনাস্থল থেকে ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতিতে শিক্ষক লাঞ্চনার কোন ঘটনা ঘটেনি। এধরণের কোন অভিযোগ পেলে তদন্ত করে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।”