করোনাভাইরাস মহামারীর এবারের ঢেউয়ে রোগী শনাক্তের হারের দিক দিয়ে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিবিসির এক প্রতিবেদনে সোমবার এমন দাবি করা হয়েছে। জানুয়ারি মাসের শুরু থেকে সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। শুধু গত এক সপ্তাহেই রোগী শনাক্ত হয়েছে এক লাখের বেশি রোগী।
এর আগে গত বছর জুলাই মাসে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের প্রভাবে এক সপ্তাহে লক্ষাধিক রোগী শনাক্তের রেকর্ড হয়েছিল। রংপুর বিভাগের কয়েকটি জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় রোগী শনাক্তের হার ৫০ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ প্রায় দুই জনের নমুনা পরীক্ষায় একজন রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। রোগী শনাক্তের হার বিবেচনায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জেলা ঠাকুরগাঁও। এই জেলায় শনাক্তের হার ৬৭ শতাংশ। অর্থাৎ ৯৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৬৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এছাড়া রংপুরে নতুন রোগী শনাক্তের হার ৬২ শতাংশ, পঞ্চগড়ে ৫৪ শতাংশ, দিনাজপুরে ৫০ শতাংশ। রোগী শনাক্তের দিক থেকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোর আরও রয়েছে রাজশাহী (৬২%), নওগাঁ (৫২%), বাগেরহাট (৫৪%), দিনাজপুর (৫০%) গাজীপুর (৫৭%), রাজবাড়ী (৫০%), বান্দরবান (৫০%)।
নাটোর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, মেহেরপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, শরীয়তপুর, বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি, সুনামগঞ্জ এবং হবিগঞ্জে ৪০ শতাংশের ওপরে নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রথমদিকে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর মতো জেলায় বেশি দেখা গেলেও এখন গাজীপুর ছাড়া অন্য জেলাগুলোয় সংক্রমণের হার অনেক কমে এসেছে।
কিশোরগঞ্জে এখন সংক্রমণের হার ১৮ শতাংশ। মুন্সীগঞ্জে ১৪ শতাংশ, নারায়ণগঞ্জে ১৫ শতাংশ। তবে নরসিংদীতে এখনো সংক্রমণের হার ৩৩ শতাংশ। শরীয়তপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জে সংক্রমণের হার ৪০ শতাংশের ওপরে রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে কম রোগী শনাক্ত হয়েছে নোয়াখালী জেলায়। এদিন ২৮২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে মাত্র ২৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
শনাক্তের দিক থেকে কম ঝুঁকিপূর্ণ জেলার মধ্যে আরও রয়েছে ফেনী (১৩%) ও লক্ষ্মীপুর (১৮%)। একসময় ঢাকায় সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হতো। কিন্তু গত কিছুদিনে ঢাকায় নতুন রোগী শনাক্তের হার কিছুটা কমে এসেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ২৬ হাজার ২৯৭টি নমুনা পরীক্ষার করে ৬ হাজার ২০১ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। অর্থাৎ আক্রান্তের হার ২৩ শতাংশ।
তবে মৃত্যুর দিক থেকে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে ঢাকা বিভাগ। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোয় ১২ হাজার ৪১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা ৪৩ শতাংশের বেশি। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক তাহমিনা শিরিন বলেন, ‘সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ কাজ করতে পারে। তবে সাধারণত যেসব এলাকায় চলাচল বা লোক সমাগম বেশি থাকে, সেখানে সংক্রমণও বেশি হয়।’ ‘আবার যেসব এলাকায় আগে সংক্রমণ বেশি হয়েছে, সেখানে আক্রান্তের হার কিছুটা কমে যেতে পারে’ যোগ করেন তিনি।