গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর নির্মাণের মাটি তোলার জায়গা নির্ধারণ নিয়ে বিরোধে কিশোরগঞ্জের ভৈরব ও কুলিয়ারচরের দুই দল গ্রামবাসীর মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল রবিবার টানা তিন ঘণ্টার ‘টেঁটাযুদ্ধে’ ভৈরবের আকবরনগর ও কুলিয়ারচরের মাধবদীর অন্তত ৫০ জন গ্রামবাসী আহত হয়েছে। এ ঘটনায় একটি গ্রামের বেশ কিছু বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, কুলিয়ারচর উপজেলার গৃহহীন ও ভূমিহীনদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর জায়গা নির্ধারণ ও মাটি ভরাটের জন্য প্রশাসন উদ্যোগ নেয়। সম্প্রতি দুই উপজেলার মধ্যবর্তী সরকারি খাসজমির কুলিয়ারচর অংশ থেকে মাটি উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কিন্তু আকবরনগর গ্রামবাসী জায়গাটি নিজেদের দাবি করায় জায়গা নির্ধারণ করা যায়নি।
গতকাল কুলিয়ারচর ও ভৈরব উপজেলার দুজন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঘটনাস্থলে গিয়ে জায়গা পুনর্নির্ধারণের কথা ছিল। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই দুই গ্রামের মানুষ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়ায়। এতে প্রতিপক্ষের ছোড়া ইটপাটকেল ও টেঁটার আঘাতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়। গুরুতর আহত বেশ কয়েকজনকে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
মাধবদী গ্রামবাসীর অভিযোগ, সংঘর্ষের একপর্যায়ে আকবরনগরের কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক দেশি অস্ত্র নিয়ে মাধবদী গ্রামে ঢুকে সাত-আটটি বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। মাটি উত্তোলনের ড্রেজার মেশিনের পাইপও ধ্বংস করে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ পাঁচ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঘটনা চলাকালে দুই এলাকার জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ভৈরব সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রেজওয়ান দিপু, কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবাইয়াত্ ফেরদৌসী, কুলিয়ারচরের এসি ল্যান্ড আমিনুল ইসলাম বুলবুলসহ দুই থানার পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান।
কুলিয়ারচর থানার ওসি মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর নির্মাণের জায়গা নির্ধারণ নিয়েই মূলত সংঘর্ষ হয়েছে। বিকেলের পর থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। ইউএনও রুবাইয়াৎ ফেরদৌসী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের মাটি উত্তোলনের জায়গাটি কুলিয়ারচরের সীমানায় হলেও আকবরনগরের জনগণ তাদের সীমানায় পড়েছে বলে দাবি করছিলেন। আকবরনগরবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল দুই উপজেলার এসি ল্যান্ডের জায়গাটি পুনর্নির্ধারণের কথা ছিল। তার আগেই দুই গ্রামবাসী সংঘর্ষে জড়ায়।