নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক তৈমূর আলম খন্দকার বলেছেন, ‘আমি জোর গলায় বলছি, যা হবার হবে, নারায়ণগঞ্জে বিএনপি একটা এটিএম কামাল বানাতে পারবে না। তারপরও সে বহিষ্কার হয়ে গেল। তার বাড়িতেও পুলিশ গেছে। এভাবে তারা আমার ওপর জুলুম অত্যাচার করল। জুলুম না করলে সরকারকে বুঝিয়ে দিতাম, জাহাঙ্গীর কবির নানককে বুঝিয়ে দিতাম ঘুঘুর ফাঁদ কোথায় আছে? একটা লোক গ্রেফতার হলে এলাকাটা কানা হয়ে যায়। যার কাছে হাতির ব্যাজ পেয়েছে, তাকেই ধরা হয়েছে। পরবর্তীতে তারা ব্যাজ না লাগিয়ে মাঠে ছিল।
শনিবার (২৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় শহরের মাসদাইরে মজলুম মিলনায়তনে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরবর্তী ‘‘ইভিএম মেশিনে ভোট, জাতির জন্য অশনি সংকেত’ শীর্ষক আলোচনা ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি। তৈমূর বলেন, সব ধরনের ভয়ভীতি, বহিষ্কার, গ্রেফতার লাঞ্ছিত হওয়াকে উপেক্ষা করে আপনারা আমার সঙ্গে ছিলেন, শেষ পর্যন্ত আপনারা নির্বাচন করেছেন। আমার গায়ের চামড়া দিয়ে জুতা বানিয়ে দিলেও এ ঋণ শোধ হবে না।
আমাকে বলে নারায়ণগঞ্জে উন্নয়ন হয়েছে। তবে উন্নয়নের সঙ্গে সুশাসন না থাকলে জনগণ লাভবান হয় না। প্রধানমন্ত্রীও বলেন দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে, তবে দেশে কোন সুশাসন নেই। সুশাসন না থাকলে জনগণ উন্নয়ন ভোগ করতে পারে না, একটা গ্রুপ সেটা ভোগ করে। আওয়ামী লীগের সবাইও এটা ভোগ করে না, আওয়ামী লীগেও একটা অংশ আছে যারা নির্যাতিত। কিন্তু যারা প্রধানমন্ত্রী পরিবারের আশীর্বাদপুষ্ট তারাই সুবিধা ভোগ করে।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চলছে। সব সুবিধা সিন্ডিকেট ভোগ করছে, সাধারণ মানুষ ভোগ করতে পারে না। জাইকার উন্নয়নের শেয়ার কোথায় যায়, সময় হলে আমি সব বলব। আমি বিনা হিসাবে নির্বাচন করতে আসিনি। আমি মনে করি এ নির্বাচনে আমার লাভ হয়েছে। আমার ব্যক্তিগত লাভ হয়েছে, পাশাপাশি দলেরও লাভ হয়েছে। আমাকে যতই বহিষ্কার করুক, আমি বিএনপির সমর্থক হিসেবে থাকব। আমি বিএনপিকে আমার দল মনে করি এবং মৃত্যু পর্যন্ত এটাই করে যাব।
তৈমূর বলেন, আমার লাভ হচ্ছে এর আগে প্লেনে উঠলেও এয়ার হোস্টেজ আমাকে জিজ্ঞেস করত আপনি বসে গেলেন কেন? চরমোনাই পীরও বলেছে আমি বেইমান, রাতের অন্ধকারে বসে গেছি। কিন্তু উনি তো জানে না দলের নির্দেশে আমাকে বসতে হয়েছে। দল বসে গেছে, তাই আমি বসে গেছি। এবারও যদি দল বলত তাহলে আমি বিষয়টা দেখতাম। এবার প্রমাণ হয়েছে আমি পালিয়ে যাওয়ার লোক না।
তিনি আরও বলেন, আজকে যারা বড় নেতা না, আমরা যারা এতদিন ঘর থেকে বের হতে পারিনি, এবার আমরা ঘর থেকে বের হয়েছি। বিএনপি যে আছে, এটা সরকার টের পেয়েছে এবং জনগণও বুঝেছে। এ কারণেই কূটকৌশল করতে হয়েছে। তিনি বলেন, আমি মীর্জা আব্বাসের নির্বাচন করতে গিয়ে গুলি খেয়েছি, সেই মির্জা আব্বাসকেও বেলা ১১টায় বসে যেতে হয়েছিল। আমি বসলাম পাঁচ ঘণ্টা আগে, মির্জা আব্বাস, তাবিথ আউয়াল বসল ১১টায়, সেটা একটা দিক। আরেকটা ব্যাপার হল জাহাঙ্গীর কমিশনারকে আপনারা চেনেন। তার সঙ্গে আমার গভীর সম্পর্ক ছিল। তিনি মেয়রের আত্মীয়। জাহাঙ্গীর কমিশনারের স্ত্রী আমাকে নির্বাচনের চার দিন আগে বলেছিল আপনাকে বসিয়ে দেওয়া হবে। বলেছিল মেয়রের বাড়ি থেকে শুনে এসেছি। আমার মাথায় ধরে না আমার নেত্রী আমাকে বসিয়ে দেবে তারা কীভাবে জানে? আপনারা তাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
কালু ভাই আমাকে নির্বাচনের ১০ দিন আগে বলেছিলেন আপনাকে বহিষ্কার করা হবে। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনিও বললেন আইভীর কাছ থেকে জেনেছি। এটা আমি বুঝি না। আমরা দল করি, আর আমরা জানার আগে মেয়র কীভাবে জানে? আমি দলের প্রতি কৃতজ্ঞ আছি এবং থাকব। আমি এবং আমার মেয়ে এখানে আছে, আমাদের বলা হয়েছিল যে মুকুল চেয়ারম্যানকেও গ্রেফতারের নির্দেশ আছে। এফআইআরে নাম মনিরুজ্জামান, বাপের নাম নেই। সেই নামকে মনিরুল ইসলাম রবি বানিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমি উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের জিজ্ঞেস করলাম আপনারা যে বললেন সুষ্ঠু নির্বাচন করবেন, তো সুষ্ঠু থাকে কোথায়? তখন শুনলাম মুকুল চেয়ারম্যানকে গ্রেফতারের অর্ডার হয়েছে। আমার মনে হল নারায়ণগঞ্জের এসপি জায়েদুল আলম আমার লোকজনকে গ্রেফতার করার জন্য ঠিকাদারি নিয়েছিলেন। তৈমূর বলেন, আমাদের দলের আজ দুর্দিন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তারেক রহমানকে মেনেই আমি রাজনীতি করছিলাম, করি, করব। আগামীতেও আমি থাকব। এতদিন যেভাবে পাশে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব।