দুই শিল্প গ্রুপের ব্যাংক হিসাবের তথ্য জালিয়াতির মাধ্যমে সাড়ে ১৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। এ অভিযোগে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের রাজধানীর কাওরান বাজার শাখার কর্মকর্তাসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রাজধানীর ভাটারাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান শুক্রবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, রাজধানীর ভাটারার ম্যাগপাই রেস্টুরেন্ট থেকে বৃহস্পতিবার পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আরও পাঁচজনকে গ্রেফতার করে ভাটারা থানা পুলিশ।
গ্রেফতাররা হলেন-জাকির হোসেন (৩৫), ইয়াসিন আলী (৩৪), মাহবুব ইশতিয়াক ভূঁইয়া (৩৫), আনিসুর রহমান সোহান (৪২), দুলাল হোসাইন (৩৫), মো. আসলাম (৫৩), আব্দুর রাজ্জাক (৪৮), জাকির হোসেন (৪৪), আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া (৫৬) ও নজরুল ইসলাম (৫০)। এদের মধ্যে জাকির হোসেন ডাচ-বাংলা ব্যাংকের কাওরান বাজার শাখায় এসএমই সেলস টিম ম্যানেজার হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। জাকির ব্যাংকের সার্ভার থেকে বড় গ্রাহকদের তথ্য সরবরাহ করতেন।
ডিসি আসাদুজ্জামান জানান, মঙ্গলবার সকালে ইএফটির মাধ্যমে ডিবিবিএলের বসুন্ধরা শাখায় ওয়ালটন গ্রুপের হিসাব থেকে সাড়ে ৬ কোটি টাকা এনআই করপোরেশন বিডি লিমিটেড নামের একটি কোম্পানির এবি ব্যাংকের মতিঝিল শাখার হিসাবে ট্রান্সফারের জন্য দুটি ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার ফরম জমা দেওয়া হয়। তখন শাখা ব্যবস্থাপকের বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে ওয়ালটন গ্রুপকে জানান। তাৎক্ষণিক ওয়ালটনের কর্মকর্তারা ব্যাংকে গিয়ে বিষয়টি যাচাই করেন। দেখা যায়, আবেদনটি একটি প্রতারক চক্র করেছে। তখন তারা টাকা ট্রান্সফারের আবেদনটি স্থগিত করেন। পরে ভাটারা থানায় একটি অভিযোগ করে ওয়ালটন গ্রুপ। সহকারী পুলিশ কমিশনার তয়াসির জাহান বাবু, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল হকের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, প্রতারক চক্রের মূল হোতা জাকির হোসেন ডিবিবিএলে চাকরি করার সুবাদে ব্যাংকের সার্ভার থেকে ধনাঢ্য ও বড় ব্যবসায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হিসাবের তথ্য সংগ্রহ করেন। যেসব হিসাবে টাকার পরিমাণ বেশি তাদের স্বাক্ষর জাল করে আরটিজিএসের মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফারের পরিকল্পনা করেন। ইয়াসিন আলীকে স্বাক্ষর জালিয়াতির দায়িত্ব দেন জাকির। ইয়াসিন স্বাক্ষর জাল করে মাহবুব ইশতিয়াক ভূঁইয়ার পরিচালিত ব্যাংক হিসাব এনআই করপোরেশন, বিডি লিমিটেডের নামে এবি ব্যাংক মতিঝিল শাখায় স্থানান্তরের পরিকল্পনা করে জাল ব্যাংক দলিল (কাগজপত্র) তৈরি করে। পরে তারা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অন্য আসামিদের কাজে লাগায়।
গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে গুলশান বিভাগের ডিসি বলেন, তারা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। দীর্ঘদিন ধরে ডিবিবিএলের সার্ভার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে টাকা আত্মসাৎ করার পরিকল্পনা করছিল। এ চক্রটির কার্যক্রম ব্যাংকের ভেতর থেকে শুরু হয়। এর বাইরে চক্রটির সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে। গ্রেফতার অভিযানের সময় দেখা যায়, চক্রের সদস্যরা ইউনাইটেড গ্রুপের ব্যাংক হিসাব থেকে ১২ কোটি টাকা ট্রান্সফারের চেষ্টা করছিল।
তিনি বলেন, চক্রটি দুই অংশে বিভক্ত হয়ে কাজ করে। এক অংশ যে গ্রুপ বা ব্যক্তির টাকা ট্রান্সফার করবে সেই নির্দিষ্ট কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে। আরেকটি অংশ যে শাখায় টাকা ট্রান্সফারের আবেদনটি জমা দেবে সেই শাখার ব্যবস্থাপককে তাদের পক্ষে আনার জন্য বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে ম্যানেজ করে।
চক্রটি এ রকম জালিয়াতি আরও করেছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ওয়ালটন গ্রুপের টাকাটা তারা ট্রান্সফার করার চেষ্টা করছিল। গ্রেফতারের আগে চক্রটি ইউনাইটেড গ্রুপের হিসাব থেকে ১২ কোটি টাকা ট্রান্সফারের চেষ্টা করছিল। এছাড়া তার আগে চক্রটি এ ধরনের ট্রান্সফার করেছে কিনা তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাদের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে। এ চক্রের সঙ্গে আর কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এরা মূলত দেশের বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিক বা গ্রুপের ব্যাংক হিসাব টার্গেট করে। এমন প্রতিষ্ঠানকে তারা টার্গেট করে যেখান থেকে টাকা ট্রান্সফার হলে যেন তাড়াতাড়ি বুঝতে না পারে। কেননা বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক হিসাবে বড় অঙ্কের টাকা থাকে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকগুলোর উদ্দেশে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কোনো বড় অঙ্কের টাকা ট্রান্সফার হলে অবশ্যই ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করে তারা যেন টাকা ট্রান্সফার করেন।