বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মাইলফলক ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থান দিবস আজ। মুক্তিকামী নিপীড়িত জনগণের পক্ষে জাতির মুক্তি সনদ খ্যাত ৬ দফা এবং পরবর্তীকালে ছাত্রসমাজের দেওয়া ১১ দফা কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে সংঘটিত হয়েছিল এই গণ-অভ্যুত্থান। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে দায়িত্ব পালনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, গণ-অভ্যুত্থান দিবস আমাদের মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধিকার আন্দোলনের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণ করে উন্নত, সমৃদ্ধ ও শান্তিপ্রিয় আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়। বাহান্নর ভাষা আন্দোলন, বাঙালির মুক্তি সনদ ৬ দফা, পরবর্তীকালে ১১ দফা ও ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি মহান স্বাধীনতা। পেয়েছি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ।’
ঐতিহাসিক ২০ জানুয়ারি ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের নায়ক শহিদ আসাদের আত্মদানের পর ২১, ২২ ও ২৩ জানুয়ারি শোক পালনের মধ্য দিয়ে ঢাকায় সর্বস্তরের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ২৪ জানুয়ারি এই অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়। এই গণ-অভ্যুত্থানের পথ বেয়ে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি মহান স্বাধীনতা অর্জন করে।
উনসত্তরের এই দিনে ঢাকায় সচিবালয়ের সামনের রাজপথে নবকুমার ইনস্টিটিউটের নবম শ্রেণির ছাত্র কিশোর মতিউর ও রুস্তমসহ আরো কয়েকজন শহিদ হন। প্রতিবাদে সংগ্রামী জনতা সেদিন সচিবালয়ের দেওয়াল ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিক্ষুব্ধ জনগণ আইয়ুব-মোনায়েম চক্রের দালাল, মন্ত্রী, এমপিদের বাড়িতে এবং তাদের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তান ও পাকিস্তান অবজারভারে আগুন লাগিয়ে দেয়। জনগণ আইয়ুব গেটের নাম পরিবর্তন করে আসাদ গেট নামকরণ করে। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
গভীর শ্রদ্ধায় গণ-অভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণ করছে জাতীয় পার্টি-জেপি জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, এমপি এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানে শহিদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। নেতৃদ্বয় বলেন, ১৯৬৯ সালের এই দিনে ঐতিহাসিক ৬ দফা ও পরবর্তী সময়ে ১১ দফার ভিত্তিতে গণ-আন্দোলনের ফলে গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। এই দিন স্বৈরাচারী আইয়ুব-মোনায়েম সরকারের লেলিয়ে দেওয়া বাহিনীর গুলিতে শাহাদত বরণ করেন রুস্তম, মতিউরসহ নাম জানা-অজানা অনেকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মুক্তি, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে সারা দেশে পালিত হয় হরতাল। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে এসে স্বৈরাচারী সরকারকে অচল করে দেয়। এই গণ-অভ্যুত্থানের পথ ধরেই পতন ঘটে তৎকালীন একনায়কত্ববাদী সরকারের।
আমরা আজ গভীর শ্রদ্ধাভরে এই গণ-অভ্যুত্থানে শাহাদত বরণকারী আসাদ, মতিউর, রুস্তম, ড. শামসুজ্জোহাসহ সব শহিদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। এই গণ-অভ্যুত্থান প্রমাণ করেছে যে, ঐক্যবদ্ধ জনগণের ঐক্যের শক্তিতেই প্রত্যাহার করা হয়েছিল আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। নিঃশর্ত মুক্তি লাভ করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুসহ সব রাজবন্দি। ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি এই গণ-অভ্যুত্থান ছিল আমাদের সুদৃঢ় মুক্তিসংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তাই জাতি সশ্রদ্ধ চিত্তে এই গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সব নেতাকর্মী ও জনগণকে স্মরণ করছে।