‘দক্ষ পুলিশ, সমৃদ্ধ দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ স্লোগানে রবিবার (২৩ জানুয়ারি) শুরু হচ্ছে ‘পুলিশ সপ্তাহ’। সকাল ১০টায় রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে বার্ষিক পুলিশ প্যারেডের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি পাঁচ দিনব্যাপী (২৩-২৭ জানুয়ারি) পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন।
আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুলিশে সক্ষমতা অনেক গুণ বৃদ্ধি করেছে বর্তমান সরকার। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গঠনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে এবারের পুলিশ সপ্তাহে এক গুচ্ছ যুগোপযোগী প্রস্তাব উত্থাপন করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে সশস্ত্র বাহিনী কিংবা আর্মড ফোর্সেস বিভাগের মতো পুলিশের আলাদা বিভাগ স্হাপন। পুলিশ প্রধান হবে ‘চিফ অব পুলিশ’। পুলিশে আলাদা মেডিক্যাল কোর স্হাপন।
এছাড়া পদোন্নতি-সংক্রান্ত জটিলতা দূর করা, নারী পুলিশ সদস্যদের জন্য পৃথক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, স্পোর্টস ট্রেনিং কমপ্লেক্স, গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ঋণ সুবিধা, বিভিন্ন দূতাবাসে পুলিশ সদস্যদের পদায়ন, জাতিসংঘের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী জনসংখ্যার অনুপাতে পুলিশ সদস্য বাড়ানো, ফৌজদারি মামলার যথাযথ সমন্বয়ের জন্য পুলিশের হাতে প্রসিকিউশন ফিরিয়ে দেওয়া, নতুন ১৮টি অতিরিক্ত আইজিপির পদ ও আটটি গ্রেড-১ পদ সৃষ্টিসহ বেশ কিছু দাবি তোলা হবে।
ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। পুলিশে নিয়োগ পেতে হলে সাত ধাপ অতিক্রম করতে হয়। এর মধ্যে কোন একটিতে অকৃতকার্য হলে বাদ যাবে। অর্থাত্ মেধা, শারীরিক ও মানসিক সব কিছুতেই যোগ্যরা পুলিশে নিয়োগ পাচ্ছেন। পুলিশে প্রশিক্ষণও আধুনিক করা হয়েছে। এখনো দেশে প্রতিদিন অনেক মাদক আসছে। মাদক নিমূর্ল করতে হলে পুলিশ বাহিনীর প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। এবারের পুলিশ সপ্তাহে ২০২০ এবং ২০২১ সালে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২৩০ জনকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) দেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে এলিট ফোর্স র্যাব থেকে পদক পেয়েছেন ৩৫ জন সদস্য।
অন্যদিকে, অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের ৭২ ঘণ্টার করোনার সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া এবারের পুলিশ সপ্তাহে দরবার না হওয়ায় পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিভিন্ন স্তরের সদস্যদের সমন্বয়ে আলাদা একটি মতবিনিময় সভার অনুমতি চাইবে পুলিশ সদর দপ্তর। করোনার কারণে পুলিশ সপ্তাহের প্রতিটি অনুষ্ঠান যথাযথভাবে স্বাস্হ্যবিধি প্রতিপালনপূর্বক অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্যারেডে ভার্চুয়ালি উপস্হিত থেকে পুলিশের বিভিন্ন কন্টিনজেন্ট, পতাকাবাহী দলের সুশৃঙ্খল, দৃষ্টিনন্দন প্যারেড পরিদর্শন এবং অভিবাদন গ্রহণ করবেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
পুলিশ সপ্তাহ ২০২২ উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশপ্রেম, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে জনগণের সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। মহান মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। রাজারবাগ পুলিশ লাইনস এ বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের ১ হাজার ২৬২ জন সদস্য জীবন উত্সর্গ করেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, শুধু মহান মুক্তিযুদ্ধেই নয়, দেশের প্রয়োজনে ও বিভিন্ন সংকটে জীবন উত্সর্গ করতে কুণ্ঠাবোধ করেননি পুলিশ সদস্যরা। চলমান কোভিড-১৯ মহামারিতে দেশ ও জনগণের সেবায় নিয়োজিত ১০৬ জন পুলিশ সদস্য মৃতু্যবরণ করেছেন।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ দেশের অভ্যন্তরীণ শান্িত-শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমন এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। তিনি বলেন, ‘জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমন, মাদক নির্মূল এবং চোরাচালান দমনে পুলিশের ভূমিকা বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করেছে। এছাড়া জাতিসংঘ শান্িতরক্ষা কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের সাহসী সদস্যগণ উল্লেখযোগ্য প্রশংসনীয় অবদান রেখে চলেছে।’
তিনি এ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সব সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, সরকার গঠনের পর বাংলাদেশ পুলিশের জনবল ধাপে ধাপে ব্যাপকহারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। পেশাগত উত্কর্ষ সাধনে পুলিশের পদোন্নতি ও পদমর্যাদা বৃদ্ধিতে আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আমরা বাংলাদেশ পুলিশে নতুন পদ সৃষ্টির মাধ্যমে পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি প্রাপ্তির জটিলতা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। একই সঙ্গে গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ পদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাছাড়া শিল্পাঞ্চলের জন্য ২০১০ সালে শিল্প পুলিশ ইউনিট ও পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ২০১৩ সালে টু্যরিস্ট পুলিশ ইউনিট গঠন করি।’