শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ চেয়ে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য্য মো. আব্দুল হামিদের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি পাঠ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এতে রাষ্ট্রপতির কাছে শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তারা। সোমবার (১৭ জানুয়ারি) রাত ১১টার দিকে উপাচার্যের বাস ভবনের সামনে আন্দোলনরত অবস্থায় এ চিঠি পাঠ করেন শিক্ষার্থীরা।
খোলা চিঠিতে তারা বলেন, আমরা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। ১৯৭১ সালে ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ বীরাঙ্গনার ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানের বিধি মোতাবেক, আপনি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য আপনি সাংবিধানিক বিধি মোতাবেক আপনার প্রতিনিধিস্বরূপ উপাচার্য নিয়োগ করে থাকেন। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেশের কল্যাণে নিজেদের প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে অধ্যয়নে নিবেদিত আছি।
রোববার (১৬ জানুয়ারি) শাবিপ্রবির ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনের সামনে নিরাপদ আবাসন পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য ৩ দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বিনা উস্কানিতে সুপরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে পুলিশ নিষ্ঠুর হামলা চালায়। এ সময় বাংলাদেশের জনগণের টাকায় ক্রয়কৃত আধুনিক অস্ত্রসজ্জিত পুলিশের নির্বিচার লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডের স্বীকার হন নিরস্ত্র শিক্ষার্থীরা।
এতে গুরুতর আহত হয়েছে অন্তত ৪০ জন শিক্ষার্থী, যাদের মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ২০ এর বেশি। কারো মাথা ফেটেছে, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাতে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়ে মারাত্মক আহত হয়েছেন অনেকে । ছাত্রীদের ওপর নিষ্ঠুর ভাবে পুরুষ পুলিশ সদস্যরা লাঠি চার্জ করেছে। ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক পুলিশ ডেকে এনে শিক্ষার্থীদের ওপর এমন নৃশংস হামলার ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। দাবি না মেনে উল্টো পুলিশী হামলায় শিক্ষার্থীদের মৃত্যু ঝুঁকিতে ফেলার ঘটনায় শাবিপ্রবির উপাচার্য যেভাবে মূল কুশীলবের ভূমিকা পালন করেছেন তা সরাসরি সংবিধান বিরোধী এবং আপনার (রাষ্ট্রপতি) কর্তৃক জনাব ফরিদ উদ্দিন আহমদের ওপর অর্পিত দ্বায়িত্বের সরাসরি বরখেলাপ।
চিঠিতে আরও বলা হয়, এ ঘটনায় শাবিপ্রবির সাবেক ও বর্তমান সব শিক্ষার্থী হতবাক এবং সংক্ষুদ্ধ। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে, আমাদের আচার্য তার জীবন অভিজ্ঞতা থেকে এটুকু বুঝতে পারেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশ, দশ ও নিজেদের ভালোমন্দ অনুধাবন করার সক্ষমতা রাখেন। এ দিনের মত পরিষ্কার যে আপনার প্রতিনিধি হিসেবে জনাব ফরিদ উদ্দিন আহমদ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের দ্বায়িত্ব পালনের সকল নৈতিক, যৌক্তিক ও সাংবিধানিক যোগ্যতা হারিয়েছেন। এ ঘটনা আমাদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞা করেছে, এই অথর্ব, অযোগ্য ও স্বৈরাচারী ব্যক্তিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী ক্ষমতায় বহাল রাখা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূলমন্ত্রের পরিপন্থি। বর্তমানে কোনো শিক্ষার্থীই এই উপাচার্যের দায়িত্বে থাকাকালে ক্যাম্পাসে নিরাপদ বোধ করছে না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গতদিনের হামলার পর আজ (সোমবার) সারাদিন ক্যাম্পাসে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে জলকামান ও রায়টকারসহ পুলিশের উপস্থিতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনিরাপত্তার পরিবেশ তৈরি করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা আমাদের আচার্যর কাছে আবেদন করছি অবিলম্বে ক্যাম্পাসে মোতায়েনকৃত অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়ে আমাদের নিরাপত্তা বিধান করুন। এ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে, শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা উপচার্যের পদ থেকে গতকালের হামলার মূল মদদদাতা জনাব ফরিদ উদ্দিন আহমদের অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করে তাকে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হিসেবে মহামান্য আচার্যের কাছে আমাদের আবেদন, আপনার সরাসরি হস্তক্ষেপে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যের পদত্যাগ নিশ্চিত করে, একজন সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকে উপাচার্য হিসেবে অতিসত্ত্বর নিয়োগ দিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে উদ্যোগ নিন।