দেশে করোনায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মোট শনাক্তের পরিমাণ মার্চের ১৫ দিনেই ছাড়িয়ে গেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো তথ্য যাচাই করে এ সংখ্যা পাওয়া যায়। ফেব্রুয়ারিতে মোট শনাক্ত ছিল ১১ হাজার ৭৭ জন আর মার্চের ১৫ তারিখ পর্যন্ত শনাক্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৯৫২ জনে।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারিতে মোট শনাক্ত ছিল ১১ হাজার ৭৭ জন। এরমধ্যে মারা গেছেন ২৮১ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ১৭ হাজার ১৮০ জন। মার্চে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত ১২ হাজার ৯৫২ জন। এই ১৫ দিনেই মারা গেছেন ১৬৩ জন। ফেব্রুয়ারিতে দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার ছিল দুই দশমিক ৮২ শতাংশ। কিন্তু মার্চের প্রথম ১৫ দিনে দেশে সংক্রমণের হার ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ এসে পৌঁছেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত দুই মাস পর ১০ মার্চ থেকে টানা ছয়দিন শনাক্ত রয়েছে হাজারের ঘরে। এর আগে মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকেই করোনা শনাক্ত ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। সাপ্তাহিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৯ম সপ্তাহ (২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৬ মার্চ) থেকে ১০ম সপ্তাহে (৭ মার্চ থেকে ১৩ মার্চ) শনাক্ত বেড়েছে ৬৭ দশমিক ২৭ শতাংশ আর মৃত্যু বেড়েছে ৪৯ দশমিক ২ শতাংশ। গত বছরের মে থেকে দৈনিক শনাক্ত হাজারের ঘরে প্রবেশ করে। এরপর থেকে করোনা শনাক্ত দেশে বাড়তেই থাকে। সেটি বাড়তে বাড়তে জুলাইতে চার হাজারের ঘরে ঠেকে। এরপর আবারও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে করোনা শনাক্ত। তবে আবার হাজারের নিচে নামতে সময় লাগে পাঁচ মাস। এই বছরের প্রথম দিন শনাক্ত হয় ৯৯০ জন, তার আগের দিন শনাক্ত ছিল এক হাজার ১৪ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশিদ আলম জানিয়েছেন, গত দু’মাসে আমরা কিছুটা স্বস্তিতে ছিলাম। তাই ওই সময়ে আমার কাছে আইসিইউ বেডের জন্য কোনও অনুরোধ আসেনি। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে প্রতিদিনই কিছু না কিছু ফোন পাচ্ছি, আইসিইউ বেড পাওয়া যাচ্ছে না। এখন যারা নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে তাদের বেশিরভাগই তরুণ এবং তাদের আইসিইউ’র প্রয়োজন হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এখন আমরা কোনও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করছি না। স্বাস্থ্যবিধি অবহেলা করতে থাকলে সামনেই দেশের বিপদ রয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে এরইমধ্যে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে।
এদিকে হঠাৎ করেই সংক্রমণ বাড়ায় উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ১৫ থেকে ২০ দিন আগেও করোনা সংক্রমণ ২ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে গিয়েছিল, আর সুস্থতার হার ৯২ শতাংশ ছিল। কিন্তু গত কয়েক দিনে আবারও করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যু বাড়ছে। এই পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে, করোনা সংক্রমণ ৭ শতাংশ হারে বাড়ছে ও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। বিষয়টি নিয়ে আমরা বেশ উদ্বিগ্ন। এখন অনেকেই করোনাকে অবহেলা করছে। অনেকে অসুস্থ হলেও টেস্ট করাচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধির সব নিয়ম মানছে না। এর ফলে করোনা রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে। গত কয়েক দিনে ৫০০ বেশি করোনা রোগী ভর্তি হয়েছে হাসপাতালে। জেলা পর্যায়েও আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। এরইমধ্যে হাসপাতালগুলোতে করোনা ইউনিটগুলো সাজাতে শুরু করেছি। জেলায় জেলায় হাসপাতালগুলো রেডি রয়েছে। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি পালনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজীর আহমেদ বলেন, করোনা আমাদের একবার কমে গেলো। সেখান থেকে আবার একবার যে বৃদ্ধি পেলো, এটি একটি উদ্বেগের বিষয়। এই অবস্থা যে কতদূর যাবে, তাই বোঝা দরকার। জানা উচিত কেন এরকম হচ্ছে। সেটা সরকারেরই উচিত ভালো করে বিশ্লেষণের ব্যবস্থা করা। এটি করার জন্য গবেষণা দরকার, সার্ভে দরকার, জিনোম সিকয়েন্সিং করা দরকার। তবে মুশকিল হচ্ছে সরকারের এমন কোনও উদ্যোগ দেখা যায় না। মানুষ কোনও নিয়ম-কানুন মানছে না, এই কারণেই সংক্রমণ বাড়ছে বলে দায় সারছে।
তিনি আরও বলেন, জানুয়ারিতে করোনার নতুন স্ট্রেইন শনাক্ত হলো, কিন্তু সেটা প্রকাশ করা হলো মার্চে। তখন সবাইকে জানিয়ে এ বিষয়ে সচেতন করা যেতো। কিংবা নির্বাচন কমিশন যে পৌরসভা নির্বাচন করেছে, এটার কারণে মানুষের মনে ভুল একটা মেসেজ গেছে যে নির্বাচন যদি করা যায়, তাহলে সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা ও ভ্রমণে যাওয়া যাবে। এগুলোকে বলা হয় ফলস সেন্স অব সিকিউরিটি। এই জায়গাগুলোতে যথাযথ ভূমিকা যদি না থাকে, তাহলে আমাদের এই সমস্যা মিটবে না।