দেশে সার্বিকভাবে একনায়কতন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি। তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই, সংসদীয় গণতন্ত্রও অনুপস্থিত। সব ক্ষমতা একজনের হাতে, তিনি হলেন প্রধানমন্ত্রী। নির্বাহী বিভাগের পুরো নিয়ন্ত্রণ তার হাতে, সংসদের নিয়ন্ত্রণও তারই হাতে। বিচার বিভাগের অল্পকিছু অংশ বাদে বাকি ক্ষমতাও প্রধানমন্ত্রীর হাতে। তাকে কোনো বিষয়ে জবাবদিহিতা করতে হয় না। তিনি সব আইনের ঊর্ধ্বে। এটাকে গণতন্ত্র বলে না। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বলে না।
শনিবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয় রজনীগন্ধায় যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন এই রাজনীতিবিদ। দীর্ঘ আলাপচারিতায় ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সংলাপ, এতে অনেক রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ, আবার অনেকের বর্জন ইত্যাদি বিষয় উঠে আসে। সংলাপ থেকে প্রত্যাশা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়েও কথা বলেন তিনি।
এছাড়া বর্তমান সরকারের সফলতা-ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিজের এবং দলের অবস্থান পরিষ্কার করেন জিএম কাদের। বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থ পাচার, সন্ত্রাস এবং দলীয়করণ মহামারিতে রূপ নিয়েছে। স্বাধীনতার আগে পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার হতো। এখন স্বাধীন দেশের সম্পদ সারা বিশ্বে পাচার হচ্ছে। কোথাও আইনের শাসন নেই, সুশাসনও নেই। মানুষের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। দিনের ভোট রাতে হচ্ছে। দেশে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। বিনিয়োগ নেই, কর্মসংস্থান নেই। ফলে বেকারত্ব বাড়ছে।
জনসংখ্যার হার বাড়ছে। কিছু ধনী মানুষ দিন দিন আরও ধনী হচ্ছেন। আর গরিব মানুষ আরও গরিব হচ্ছেন। ফলে বৈষম্য বাড়ছে। এ অবস্থার অবসান খুবই জরুরি। সংলাপ প্রসঙ্গে জিএম কাদের বলেন, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একটি আইনি বিধানাবলি সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতির নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা। এতে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং চারজন নির্বাচন কমিশনার থাকবে। কিন্তু অদ্যাবধি এই আইনটি প্রণীত হয়নি।
একইভাবে সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দুটি কাজ ছাড়া বাকি সব কাজ রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিয়ে করতে হবে। এ থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার, তা হলো-ইসি গঠনে আইন না থাকায় এটি গঠনের পুরো ক্ষমতা পরোক্ষভাবে প্রধানমন্ত্রীর হাতেই আছে। আমরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে তাই এই আইন প্রণয়নে সরকারকে তাগিদ দিতে বলেছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পুরোপুরি স্বাধীন কিংবা মুক্ত করার কথাও বলেছি। সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ইসিকে সহায়তা করা নির্বাহী বিভাগের কর্তব্য। সংবিধানে এটা পরিষ্কারভাবে বলা থাকলেও এর ব্যবহার আমরা কখনও দেখিনি বা দেখছি না। নির্বাহী বিভাগ প্রধানমন্ত্রীর অধীনে, তাই তার নির্দেশনা ও সম্মতি ছাড়া নির্বাহী বিভাগ কোনো কাজ করে না। এজন্য আমরা নির্বাচনের সময় প্রশাসনসহ নির্বাহী বিভাগকে ইসির অধীনে দেওয়ার জন্য আলাদা আইন প্রণয়নের জন্যও বলেছি। নির্বাচনের সময় ইসির অধীনে থাকবে পুরো নির্বাহী বিভাগ। ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করবে।
না করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। সে অনুযায়ী শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্ধে এই বিষয়গুলো খুবই জরুরি। তা না হলে প্রতিবার ভোট হবে এবং ভোটের পর বিতর্ক হবে। রাজনৈতিক সন্দেহ-অবিশ্বাস-বিভাজন এবং দূরত্বের মধ্য দিয়েই আমাদের পথ চলতে হবে।
জাতীয় পার্টিকে দিয়ে রাষ্ট্রপতি ইসি গঠনের জন্য সংলাপ শুরু করেছেন। অনেক রাজনৈতিক দল এতে অংশ নিয়েছে। অনেকে আবার বর্জনও করেছেন। এই সংলাপ থেকে প্রত্যাশা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির কোনো হিসাব মিলিয়েছেন আপনারা? এর জবাবে জিএম কাদের বলেন, আমরা জানি ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির হাতে তেমন কোনো ক্ষমতা নেই।
আগেই বলেছি বিষয়টি পরোক্ষভাবে হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাতে। তারপরও আমরা এই সংলাপে অংশ নিয়েছি দেশ ও জনগণের কথা ভেবে। রাষ্ট্রপতি একটি আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা তার সঙ্গে দেখা করে আমাদের কথাগুলো বলেছি। মানুষ অন্তত জানুক আমরা কী চাই। ইসি নিয়ে আমাদের বক্তব্য কী। সংলাপ বর্জন করে কোনো সুফল পাওয়া যাবে বলে আমি মনে করি না। যারা সংলাপ বর্জন করেছেন, কেন বর্জন করেছেন তা তারা ভালো বলতে পারবেন। আমি মনে করি, কোনো বিষয়ে আপত্তি থাকলে হয়তো প্রতীকী প্রতিবাদ করা যেত, কিন্তু বর্জন রাজনীতির জন্য শুভ দিক না।
এই সংলাপ থেকে কী প্রত্যাশা করছেন-জবাবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন। এটা হলে সবার জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে। আর না হলে আবারও আমরা অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে হাঁটব। যা কারও জন্যই সুখকর হবে না। বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল বলছে তারা আগামীতে আর দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না। জাতীয় কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চান তারা। এক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি কী চায়-এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির চেয়ারম্যান বলেন, সারা পৃথিবীতে দলীয় সরকারের অধীনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দুই-একটি ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকতে পারে হয়তো।
জাতীয় সরকার কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার-এটা কোনো ব্যবস্থা না। অতীতেও দেখেছি, এর ফল ভালো আসেনি। বরং আমরা নির্বাচনি ব্যবস্থাটাকে শক্তিশালী করতে পারি। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে পারি। পার্শ^বর্তী দেশ ভারতেও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়। কিন্তু ওই সময় সব ক্ষমতা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার কেন্দ্রবিন্দু থাকে নির্বাচন কমিশন।
ভারতের নির্বাচন কমিশন নিয়ে এত বিতর্ক ওঠে না। আমাদের নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে তো বারবার প্রশ্ন উঠছে- এর জবাবে বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, আমাদের কমিশনের হাতেও অনেক ক্ষমতা। কিন্তু তাদের ওপরে থেকে যারা ছড়ি ঘোরান তারা চাননা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং প্রভাবমুক্ত হোক। যেনতেন উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়া এবং টিকে থাকার জন্য যদি কেউ নির্বাচন কমিশনকে বারবার ব্যবহার করেন, তার দায় কার।
আসলে মূল কথা হচ্ছে-রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবেই নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হয়। আর আমরাও আশার আলো দেখি না, বারবার আশাহত হই। দিনের ভোট রাতেই হয়ে যায়। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার অপসংস্কৃতি গড়ে ওঠে। জিএম কাদের বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। ইসিকে শক্তিশালী করতে হবে। তাদের নির্বাহী বিভাগের প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। সত্যিকারের গণতন্ত্র চর্চার স্বার্থেই এ কাজটি রাজনৈতিক দলগুলোকে করতে হবে। এতে মানুষের ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক এবং মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়া সহজ হবে।
বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট সম্পর্কে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল মুক্তির উদ্দেশ্যে। বৈষম্য, বঞ্চনা, শোষণের থেকে মুক্তি। এর মাধ্যমে অবিচার, অত্যাচার, নির্যাতন, ক্ষুধা, দারিদ্র্য থেকে মুক্তি চেয়েছিল দেশের জনগণ। চেয়েছিল গণতন্ত্র। দুর্ভাগ্য আজও দেশে সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হয়নি। সবকিছু চলছে এক ব্যক্তির নির্দেশে, এক ব্যক্তির কথায়। সংসদে ও সংসদের বাইরে সব ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে। বাহাত্তরের মূল সংবিধান নানা দফায় কাটাছেঁড়া হয়েছে।
এর মধ্যদিয়ে মানুষের অধিকারকে দিন দিন আরও সঙ্কুচিত করা হয়েছে। মুখে আমরা যতোই বলি বাংলাদেশ একটি সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশ। বাস্তবে এই দেশে গণতন্ত্রও নেই। সংসদীয় গণতন্ত্রও নেই। সত্তর অনুচ্ছেদের কারণে সংসদ সদস্যরা দলের বাইরে গিয়ে কথা বলতে পারেন না। তাদের মতামত, সিদ্ধান্ত এক ব্যক্তির ওপরই নির্ভর করে। এটাকে গণতন্ত্র বলা যায় না। স্বাধীনতার পর থেকে অদ্যাবধি এদেশে গণতান্ত্রিক শাসন বাস্তবায়িত হয়নি। আসলে আমরা নামে মাত্র গণতান্ত্রিক দেশ। আর এ কারণেই এত রাজনৈতিক সংকট, বিভেদ, অনৈক্য, হানাহানি।
এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় কী-জানতে চাইলে জিএম কাদের বলেন, সবার আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা। দেশ ও দেশের মানুষের জন্য যা ভালো এবং কল্যাণকর সে অনুযায়ী পথ চলা। ক্ষমতার লোভ, ক্ষমতার অপব্যবহার, দলীয়, ব্যক্তিগত এবং বস্তুগত স্বার্থকে বিবেচনায় না নিয়ে দেশ এবং দেশের মানুষের স্বার্থটাকে সবার আগে প্রাধান্য দিতে হবে।
তাহলেই এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব। যদিও বাস্তবে আমরা ক্ষমতার লোভে অন্ধ। ব্যক্তিগত স্বার্থে দেশের স্বার্থকে কথায় কথায় জলাঞ্জলি দিচ্ছি। দেশের স্বার্থকে বিসর্জন দিতে কুণ্ঠা বোধ করছি না। দুর্নীতি-লুটপাট-অর্থ পাচার-দলীয়করণ, টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক সন্ত্রাস- সীমাহীন গতিতে বাড়ছে।
এসবের লাগাম টেনে ধরার উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এজন্যই বলছি, এ থেকে উত্তরণে সবার আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা। দেশের কথা সবার আগে ভাবা। দেশের এবং দেশের মানুষের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া। এবার আসি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে। কী মনে হয় আপনার, সব দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন হবে- জবাবে জিএম কাদের বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে কী হবে তা সময় বলবে। তবে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি না হলে হয়তো সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নাও নিতে পারে।
এক্ষেত্রে আমি সাইনবোর্ড সর্বস্ব রাজনৈতিক দলগুলোর কথা বলছি না। যারা সত্যিকার অর্থে বড় দল, যাদের মাঠপর্যায়ে জনপ্রিয়তা আছে, জনসমর্থন আছে- তাদের অংশগ্রহণের কথা বলছি। জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে কী করবে-জানতে চাইলে দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, আমরা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েই অগ্রসর হচ্ছি।
জোটে থেকে না এককভাবে নির্বাচন। কী হবে আগামী দিনের ভোটের কৌশল-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি-এই তিনটি বড় রাজনৈতিক দল। বর্তমান বাস্তবতায় এককভাবে কোনো রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় আসতে পারছে না। এ কারণেই জোট-মহাজোট হয়। আগামীতেও হয়তো হবে।
আমরা অতীতেও দেখেছি ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত দু’টি শক্তির মধ্যে লড়াই হয়। জাতীয় সংসদে আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব না থাকায় দুই শক্তিকে ঘিরেই আবর্তিত হয় ক্ষমতায় যাওয়ার লড়াই। জাতীয় পার্টি যেহেতু ক্ষমতায় যাওয়ার অন্যতম প্রধান নিয়ামক শক্তি, তাই সময় বুঝে এ বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলাপ-আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
টানা ১৩ বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের তিন বছর পূর্ণ হলো সম্প্রতি। এই তিন বছরে সরকারের সফলতা-ব্যর্থতাগুলো কী-জবাবে জিএম কাদের বলেন, এই সময়ে অবকাঠামোগত কিছু বিষয়ে উন্নয়ন হয়েছে, হচ্ছে। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যও অর্জিত হচ্ছে। রিজার্ভ বাড়ছে। রেমিট্যান্স বাড়ছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার কমেছে। সবচাইতে বড় কথা-করোনাকালীন এই দুঃসময়েও অর্থনীতিকে ধরে রাখা, অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়া সরকারের বড় ধরনের সফলতা।
এর বিপরীতে দলীয় ছত্রছায়ায় অপকর্ম, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, লুণ্ঠনের চিত্র ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত ছিল, এখনো আছে। গণতন্ত্র ও সুশাসনের অভাব উন্নয়নকে কালিমালিপ্ত করছে। বিনিয়োগ নেই। কোটি কোটি বেকার, কর্মসংস্থান নেই। অভাব অনটনে যুব সমাজ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। জড়িয়ে পড়ছে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে। প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে দ্রব্যমূল্য বেড়েই চলছে। গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের বিল বাড়ছে, কিন্তু মানুষের আয় বাড়ছে না। পরিবার নিয়ে জীবনযাপনে হাপিত্যেশ উঠেছে সাধারণ মানুষের। কৃষক-শ্রমিকের জীবনে দুর্দিন যাচ্ছে। ধনী দিন দিন আরও ধনী হচ্ছে, গরিব দিন দিন আরও গরিব হচ্ছে। জনসংখ্যা বাড়ছেই। এটি নিয়ন্ত্রণের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই।
বিরোধীদলীয় নেতা আরও বলেন, বেপরোয়া চাঁদাবাজির কারণে গণপরিবহণের নৈরাজ্য থামছে না। গণপরিবহণ কে নিয়ন্ত্রণ করছে বিষয়টি পরিষ্কার নয়। সাধারণ ব্যবসায়ীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে চাঁদাবাজদের হাতে। চাঁদা না দিয়ে কেউ নিজের জমিতে বাড়িও করতে পারে না। কৃষিপণ্য সরবরাহে ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য। ফুটপাতে বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অসহায়, দেখার যেন কেউ নেই। এগুলোর মূল কারণ সরকারের জবাবদিহিতার অভাব, সার্বিকভাবে আইনের শাসন এবং সুশাসনের অনুপস্থিতি।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, দেশে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় জিডিপি বেড়েছে, জিডিপি বাড়লে মানুষের পেট ভরে না। সর্বত্র চলছে দলীয় শাসন। নির্বাচনে ভিন্নমতাবলম্বীদের মাঠে দাঁড়াতে দিচ্ছে না ক্ষমতাসীনরা। ক্ষমতার জোরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে চায় তারা। কোথাও কোথাও ক্ষমতাসীনরা প্রশাসনের সহায়তায় কলুষিত করছে নির্বাচনি ব্যবস্থা। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনে ভোট ডাকাতি ও অব্যবস্থাপনার সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে, এটা জাতির জন্য লজ্জার। ক্ষমতা ও কালোটাকার খেলায় দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা কলুষিত হয়েছে।