ইউরোপীয় দেশগুলো করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনে অনেকটা বিপর্যস্ত। এরই মধ্যে মঙ্গলবার ইউরোপীয় দেশ ফ্রান্স মহামারি শুরু হওয়ার পর রেকর্ড সংখ্যক আক্রান্ত দেখল। এদিন দেশটিতে করোনা শনাক্ত হয়েছে এক লাখ ৭৯ হাজার ৮০৭ জনের। ফ্রান্সে একদিনে এত সংখ্যক সংক্রমণ এবারই প্রথম। এছাড়া একইদিন ইউরোপ মহাদেশের ইতালি, গ্রিস, পর্তুগাল ও ইংল্যান্ডেও সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা যায়।
বড়দিনের উৎসব এবং অতিসংক্রামক নতুন ধরন ওমিক্রন এই মহাদেশের দেশগুলোর করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছে। তবে ফ্রান্সের একদিনে রেকর্ড শনাক্তের পেছনে বড়দিনের কারণে করোনা সংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরিতে দেরি হওয়াও আংশিক দায়ী হতে পারে। খবর বিবিসি অনলাইনের। সোমবার ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অলিভার ভেরান দেশবাসীকে সতর্ক করে বলেছেন, সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে জানুয়ারির শুরুর দিকে ফ্রান্সের দৈনিক সংক্রমণ আড়াই লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। আর ফ্রান্সের হাসপাতাল ফেডারেশন সতর্ক করে বলেছে, সবচেয়ে কঠিন সপ্তাহগুলো এখনো আসেনি।
করোনাভাইরাসের সার্বক্ষণিক তথ্য সরবরাহকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এক দিনের ব্যবধানে ইউরোপীয় অঞ্চলে সংক্রমণ দ্বিগুণ হয়েছে। গত সোমবার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল ৩ লাখ ৫৯ হাজারের বেশি। ওই দিন মারা গিয়েছিলেন প্রায় ২ হাজার ৮০০ করোনা রোগী। এর আগের দিন মৃত্যু ছিল প্রায় ২ হাজার। আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩ লাখ ২৮ হাজার মানুষ।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, গতকাল ফ্রান্সে যে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, তা ইউরোপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। এর আগে এক দিনের ব্যবধানে কোনো দেশেই এত বেশি রোগী শনাক্ত হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, বড়দিনের ছুটির কারণে তথ্যের প্রবাহ ঠিকঠাক নাও থাকতে পারে। এ কারণে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের আগের দিনগুলোর সংক্রমণের সংখ্যাও গতকালের তথ্যের মধ্যে যুক্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে ইউরোপের যে দেশগুলোয় গতকাল সংক্রমণের রেকর্ড হয়েছে, সেগুলোর অন্যতম ইতালি। দেশটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৮ হাজার মানুষ। মারা গেছেন ১৭৫ জন। গ্রিসে আক্রান্ত হয়েছেন ২১ হাজার। মারা গেছেন ৬১ জন। পর্তুগালে আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ হাজার। মারা গেছেন ১৯ জন।
গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ২৯ হাজারের বেশি মানুষ। এ ছাড়া ইউরোপের আরেক দেশ জার্মানিতে নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৩০ হাজার। মারা গেছেন ৪৪৮ জন। স্পেনে মারা গেছেন ১১৪ জন। তবে দেশটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৯ হাজারের বেশি মানুষ। এক দিনের ব্যবধানে ইউরোপ সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে রাশিয়ায়—৯৩৫ জন। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২১ হাজারের বেশি মানুষ।
এদিকে গবেষণায় দেখা গেছে ওমিক্রন ডেল্টা ধরনের চেয়ে মৃদু এবং এতে হাসপাতালে ভর্তির হারও ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ইউরোপকে সতর্ক করে বলেছে, ইউরোপ জুড়ে একটি ঢেউ মহাদেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধসের দিকে নিয়ে যাবে। উল্লেখ্য, গত ২৪ নভেম্বর করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হওয়ার কথা জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। প্রাথমিকভাবে নতুন এই ধরনটিকে ‘বি.১.১.৫২৯’ নামে ডাকা হচ্ছিল। পরে ডব্লিউএইচও নতুন এ ধরনের নামকরণ করে ‘ওমিক্রন’ এবং একে ‘উদ্বেগজনক’ ধরন বলে আখ্যায়িত করে।