দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১১ মাসে (জানুয়ারি-নভেম্বর) ২২৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ১৬৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘আর্টিকেল নাইনটিনের’ এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে বলে সোমবার ঢাকায় এক সেমিনারে দাবি করা হয়। এদিকে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে গণমাধ্যম কর্মীরা আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতেই সরকার এমন আইন করেছে। তবে এসব অপরাধের বিচারে প্রচলিত আইনই যথেষ্ট।
বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত মামলার খবর তদারকির মাধ্যমে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে আর্টিকেল নাইনটিন। রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘দ্য রোল অব মিডিয়া ইন কাউন্টারিং থ্রেটস টু ইন্টারনেট ফ্রিডম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। আর্টিকেল নাইনটিনের সহায়তায় সেমিনারটির আয়োজন করে বাংলাদেশ ইন্টারনেট ফ্রিডম ইনিশিয়েটিভ ওয়ার্কিং গ্রুপ (বিআইএফডব্লিউজি)।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের সভাপতি রাশেদ মেহেদী। এতে আরও দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আর্টিকেল নাইনটিনের প্রোগ্রাম অফিসার রুমকি ফারহানা ও আনোয়ার রোজেন। সেমিনারে বক্তব্য দেন আর্টিকেল নাইনটিনের আঞ্চলিক পরিচালক ফারুক ফয়সল, সাংবাদিক সোহরাব হোসেন, ৫২ নিউজ ডটকমের সম্পাদক বিভাস বাড়ৈ প্রমুখ।
সেমিনারে জানানো হয়, ১১ মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার ১৮৬টিই হয়েছে প্রচলিত গণমাধ্যমের বাইরে। অর্থাৎ অনলাইন, ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক ও লাইকির কারণে মামলাগুলো হয়েছে। যা মোট মামলার ৮৩ শতাংশ। পুলিশ ও র্যাব এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরাই মামলাগুলো করেছে।
মামলাগুলোর বেশিরভাগই হয়েছে- প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, জাতীয় সংসদ সদস্য (এমপি) অথবা ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বিরুদ্ধে কট‚ক্তি বা মানহানির কারণে। মূল প্রবন্ধে রাশেদ মেহেদী বলেন, দেশে অনলাইনের বিকাশে বড় বাধা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এ আইন হলো- দুর্নীতিবাজদের রক্ষাকবচ। বর্তমানে ডিজিটাল সৃজনশীল ব্যবহারের প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো হলো- ডিভাইনের নিরাপত্তা ও সচেতনতার অভাব, অনিরাপদ ইন্টারনেট সংযোগ এবং ক্ষতিকর কনটেন্ট এবং ভারসাম্যহীন ও অযৌক্তিক সমাজ। এগুলো থেকে উত্তরণ করা না গেলে বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশ তাল মেলাতে পারবে না।
ফারুক ফয়সল বলেন, গণমাধ্যম ও ইন্টারনেটের স্বাধীনতা পরস্পর অবিচ্ছেদ্য অংশ। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা একটি নিরাপদ, বৈষম্যহীন ও অবারিত ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু গণমাধ্যম ও ইন্টারনেটের স্বাধীনতা উভয়ের জন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হুমকি স্বরূপ। সোহরাব হাসান বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়টি হালকা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এ আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে হয়রানিমূলক মামলা থামাতে হবে। ইন্টারনেট ব্যবহার বন্ধ করে দিলে হবে না। ব্যবহারকারীদের সচেতন হওয়ার পাশাপাশি কেউ হয়রানির শিকার হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।