প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের মামলায় রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের সাবেক আট কর্মকর্তাসহ ১১ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রোববার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। সোনালী ব্যাংক থেকে অর্থ লোপাটের ঘটনায় ৩৮টি মামলা হয়। এরমধ্যে ৩টির ফাইনাল রিপোর্ট (এফআরটি) দেওয়া হয়। বাকি ৩৫টিতে ৬২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেওয়া হয়। বাকি মামলাগুলোর মতো ডিএন স্পোর্টস লিমিটেডের বিরুদ্ধে করা এ মামলাটিও হলমার্ক কেলেঙ্কারির মামলা হিসাবে পরিচিত। এ রায় নিয়ে দুটি মামলার রায় হলো। বাকি ৩৩টি মামলা বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
সোনালী ব্যাংকের আট কর্মকর্তাকে অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গে দণ্ডিত করা হয়েছে। তারা হলেন-এমডি অ্যান্ড সিইও হুমায়ন কবীর (পলাতক), ডিএমডি মাইনুল হক, জিমএম মীর মহিদুর রহমান ও ননী গোপাল নাথ (পলাতক), ডিজিএম শেখ আলতাফ হোসেন, মো. সফিজ উদ্দিন আহমেদ, এজিএম সাইফুল হাসান (পলাতক) ও কামরুল হোসেন খান। এদের প্রত্যেকের ৩ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ৩ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ ও প্রতারণায় সহযোগিতার অভিযোগে ডিএন স্পোর্টস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোতাহার উদ্দিন চৌধুরী, তার মেয়ে পরিচালক ফাহমিদা আক্তার ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর সফিকুর রহমানকে (পলাতক) ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১ কোটি ৪২ লাখ ৯৪ হাজার ৭৪ টাকা অর্থ দণ্ড অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ অর্থ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অপর এক ধারায় এ তিন আসামির প্রত্যেককে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মামলা, তদন্ত ও বিচার : সোনালী ব্যাংকের হোটেল শেরাটন শাখা থেকে ডিএন স্পোর্টস লিমিটেডের নামে এক কোটি ৩৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে তা আত্মসাৎ করা হয়। ২০১১ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০১২ সালের ২৭ মে সময়ের মধ্যে এ অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। এ কারণে দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক সেলিনা আক্তার মনি বাদী হয়ে রাজধানীর রমনা থানায় মামলাটি করেন। ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি ১৬ জনকে আসামি করে মামলাটি করা হয়। ২০১৪ সালের ২২ মে তদন্ত শেষে ১১ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেওয়া হয়। চার্জশিটে এক কোটি ৪২ লাখ ৯৪ হাজার ৭৪ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়। ২০১৫ সালের ৪ নভেম্বর আদালত ওই ১১ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন। মামলায় মোট ৬১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।
৩৩ মামলা বিচারাধীন : ২০১২ সালের ৭ জুন সোনালী ব্যাংকের হোটেল শেরাটন করপোরেট শাখায় ঋণ জালিয়াতির সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। সংস্থাটির পরিচালক (তৎকালীন উপ-পরিচালক) মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বাধীন একটি টিম এ অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করে। ওই বছরেই দুদফায় ব্যাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ জালিয়াতিসংক্রান্ত দুটি প্রতিবেদন দুদকে পাঠানো হয়। সেখানে হলমার্ক গ্রুপসহ ছয়টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মোট তিন হাজার ৬৯৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়। অনুসন্ধান শেষে মোট ৩৮টি মামলা হয়। এরমধ্যে তিনটি মামলায় ফাইনাল রিপোর্ট আদালতে দাখিল করা হয়। বাকি ৩৫টি মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়।
২০১২ সালের ৪ অক্টোবর রাজধানীর রমনা থানায় হলমার্ক গ্রুপ কর্তৃক এক হাজার ৫৬৮ কোটি ৪৯ লাখ ৩৪ হাজার ৮৭৭ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১১টি মামলা হয়। মামলাগুলোয় হলমার্ক গ্রুপের এমডি তানভীর মাহমুদ, তার স্ত্রী ও গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি হুমায়ুন কবির, ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখার ডিজিএম একেএম আজিজুর রহমানসহ ২৭ জনকে আসামি করা হয়। পরে দুজন মারা যাওয়ায় ২০১৩ সালের ৬ অক্টোবর ২৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। হলমার্কের বিরুদ্ধে করা ১১টি মামলা বিশেষ জজ আদালত-১ এ বিচারাধীন। টিঅ্যান্ড ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে করা ১৫টি মামলা বিশেষ জজ আদালত-২ এ বিচারাধীন। প্যারাগন গ্রুপের বিরুদ্ধে করা ৫টি মামলা বিশেষ জজ আদালত-৫ এ বিচারাধীন ছিল। এরমধ্যে প্রায় বছরখানেক আগে একটি মামলায় রায় ঘোষণা হয়েছে। বাকিগুলোর বিচার এখনো চলছে। ডিএন স্পোর্টস ও খান জাহান আলীর বিরুদ্ধে করা ৪টি মামলা বিশেষ জজ আদালত-৬ এ বিচারাধীন ছিল। এরমধ্যে এক মামলায় রায় হলো। বাকি তিনটি বিচারাধীন।