গগনে তারকার মিটিমিটি আলো। চাঁদের জোৎস্না ধরনীতে ছড়ালো।চারিদিকে ছিটিয়ে পড়েছে শুভ্রতার ছায়া। প্রকৃতি তোমার মাঝে আছে কতো মায়া। প্রকৃতি তুমি লুকোচুরি খেলবে কতদিন। ঠিক ধরা দিবে তুমি আমায় একদিন। এই বলে মাহাদী ভ্রু কুঁচকে হাবিবকে বলল – কী রে এমন বেলুনের মতো গাল ফুলিয়ে বসে আছিস ? হাবিব কিছু বলল না।সে আকাশে চাঁদের দিকে তাকিয়ে রইলো। দেখে মনে হচ্ছে সে চাঁদ নিয়ে কোন গবেষণা করেছে। চাঁদটা বৃত্তের মতো কেন, চাঁদ ও সূর্য দুটোই গোল চাকার মতন তবুও কেন একটি হলুদ অপরটি সাদা,কেন একটিতে চোখ ফেলা যায় অপরটিতে ফেলা যায় না?কেন, কেন? হাবিব যদিও এসব ভাবছে না তবে আজ দুদিন তার মন ভালো নেই। কখন যে কোথায় হারিয়ে যায় …….। হাবিব এত চিন্তা করেছিস কেন? দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।
হাবিব একটা লম্বা শ্বাস নিল, তারপর শান্ত গলায় বলতে লাগলো জানিস মাহাদী আমার জীবনে অনেক স্বপ্ন ছিল, ছিল বহু আশা।কিন্তু আজ মনে হচ্ছে সব স্বপ্ন, সকল আশা – আকাঙ্খা জলে ভেসে যাচ্ছে। হাবিবের গাল বেয়ে নূণা জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। মাহাদী তার পিঠে হাত বুলিয়ে বলল- আরে বোকা কাঁদছিস কেন? এভাবে ভেঙে পড়িস না। দেখ যদি তুই ভেঙে যাস তবে তোর স্বপ্নতো ধুলোর মত উড়ে যাবে কখনো তাকে খুঁজে পাবি না। তখন তুই অবহেলার কারনে নিজের অজান্তেই স্বপ্ন হত্যার আসামি হয়ে যাবি। নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারিনা। আর এই মৃত স্বপ্ন তোকে সারাটা জীবন কাঁদবে। হাবিব কিছু বলছে না সে ড্যাবড্যাব করে মাহাদীর দিকে তাকিয়ে রইল।মাহাদী আবার বলতে লাগলো। আমি তোর বিষয়টা বুঝতে পারছি।
শোন হাবিব তুই একটু ভাব। তোর পরিবার আর্থিক সংকটের কারণে তোকে একটু তাকাতে বলেছে। তার মানে এই নয় যে তুই তোর স্বপ্ন পূরণ করতে পারবি না। আমি যখন পরিক্ষায় ফেল করে ফুপিয়ে কাঁদতাম তখন তুই তো আমায় এই বলে সান্তনা দিতি মাহাদী বাচ্চাদের মত না কেঁদে সূরা আলে ইমরান এর দুইশত নং আয়াতে কি বলেছে তা খেয়াল কর। মাহাদীকে থামিয়ে দিয়ে হাবিব বলল তোর বাজে অভ্যাসটা গেল না? কি বাজে অভ্যাস? অন্যের ডায়লগ নকল করা। মানে মনে বুঝতে পারছ না আচ্ছা বল দুইশত নং আয়াতে কি আছে? ও..ও..ওইতো ধৈর্য ধরতে বলেছে আর প্রস্তুত থাকতে আর….. বলতে পারছিস না আমি তোর মতন মুফাস্সের নাকি যে,একটা আয়াত বলবে অমনি চ্যাটাং চ্যাটাং করে বলে দেব কোন আয়াত, কোন সূরা, কোন পৃষ্ঠা,ব্যাখ্যা কি, শানে নুজুল কি? এক দমে মাহাদী সব বলে ফেলল। আরে বাবা দম নিবি তো এভাবে বললে মরে যাবি। তা ছাড়া আমি তরজমা পড়ছি তাফসীর পড়লাম কবে? হয়েছে তুই যেভাবে পড়িস মনে হয় আমি তোকে নয় বরং চাঁদের হাবিব বিদ্যাসাগরকে দেখছি কি বললি তুই দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা মাহাদী উঠে এক দৌড় হাবিব চেচিয়ে বলল ঠিক আছে আমিও দেখে নেব। হা হা হা করে হেসে উঠলো হাছান। আচ্ছা আব্বু তোমরা ছেলে বেলায় অনেক মজা করতে তাই না হুম কিন্তু আমরা তা পারি না কেন? কারন তোমরা ইন্টারনেট নামক সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছো। হুম, আব্বু তারপর কী হয়েছে? সে দিনের পর হাবিবের সঙ্গে দেখা হয়নি। পরদিন সকালে সে ঢাকা চলে গেছে। অ্যাই আব্বু তোমার মনে আছে কি তুমি বলেছিলে আমাদের বেড়াতে নিয়ে যাবে। সেই জন্যেই আমি রেডি হয়ে গিয়েছে। মাহাদী একটু অবাক হলো।তুমি রেডি হয়ে গিয়েছো হুম এইতো আম্মু রেডি এবার আমি রেডি হব।
এই বলে হাছান তার মায়ের কোলে লাফিয়ে উঠলো। হাছানের মা মাহাদীকে বলল – শ্রদ্ধেয় আমার স্বামী মহোদয় অনেক হয়েছে ছেলে বেলার গল্প, এবার তৈরি হয়ে নিন অল্প। মাহাদি মৃদু হেসে বলল আমি তৈরি চল বেরোই। মাহাদী একটি বড়ির সামনে গাড়ি থামাল। হাছানের আম্মু বলল – এটা কোথায় এসেছ? সারপ্রাইজ। মাহাদী তার স্ত্রী ও ছেলে হাসানকে নিয়ে বাড়ির ভেতর প্রবেস করল। একটি ছোট মেয়ে এসে বলল – আপনিই মাহাদী সাহেব? জ্বি আপনি এই দড়জায় প্রবেশ করুন। আপনারা দুইজন আমার সাথে আসুন। ছোট মেয়েটি হাছান ও তার আম্মুকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেল। মাহাদি মেয়েটির দেখানো দরজার সামনে দড়িয়ে কলিংবেল বাজাল। টিংটং করে কলিংবেল বাজতেই দরজা খুলে যায়। দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে পনেরো বছর পূর্বের প্রাণপ্রিয় সেই বন্ধটি।
হবিব। ভেতরে এসো মহাদী। মাহাদী ভেতরে এলো। দীর্ঘক্ষণ তাদের আলাপ হলো। হাবিব বলল – জানিস মাহাদী সেদিন তুই আমায় সান্তনা না দিলে আমি আজ এপর্যন্ত আসতে পারতাম না। আমার সব স্বপ্ন আজ পূরণ হয়েছে শুধুই তোর জন্য। যা বললি। আমার জন্য না। তোর স্বপ্ন পূরণের করন তুই নিজেই। মানে মানে হল যদি তুই সেই আয়াতের উপর আমল না করতি তহলে তুই আজ মুফাস্সির হতে পারতি না। পারতি না বিশ্বভ্রমন করতে। বুঝলি হাবিব খুব আগ্রহ নিয়ে বলল – আমি তোর মুখে সেই আয়াতটি একবার শুনতে চাচ্ছি। মাহাদী বলল – তোর সামনে আমি কুরআনের তরজমা করব তা কি মানাবে? কেন রে তুই আমায় পথের দিশা না দিলে আজ আমি শুধু আমার পরিবার নিয়েই ব্যস্ত থাকতাম। কখনোই স্বপ্ন পূরণের কথা ভাবতাম না।জানিস আমি যখন তাফসীর শেষ করে বের হই
তখন আমার ক্লাসমেট মোশাররফ ভাই বলেছিলেন। প্রতিভা থাকে না কহারো খাতায় প্রতিভা থাকে প্রতিভাবানের মাথায়। আমি বললাম ভাইয়া ঠিক বুঝলাম না। তখন না বুঝলেও এখন বুঝেছি কি বুঝেছিস? সেটা তোর না বুঝলেও চলবে। এখন তুই আয়াতটা শুনা। পরবো না তোকে বলতেই হবে বল বলছি বল মাহাদি মায়াবি কন্ঠে আয়াত তেলোয়াত করল তারপর বলল তোমায় বলছি হে মুমিন, ধৈর্য ধর তুমি। ধৈর্যে হও অগ্রগামী। প্রস্তুত কর নিজেকে। ভয় কর তোমার প্রভুকে। তবেই তোমায় ছুঁবে তোমার সফলতা।