সিপিডি বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, দেশের ৮৫ ভাগ মানুষের হাতে কিছু নেই। মাত্র ১৫ ভাগ মানুষের হাতে অধিকাংশ সম্পদ, যা ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশে প্রথাগত ভঙ্গুরতার পাশাপাশি করোনা মহামারি নতুন ভঙ্গুরতা তৈরি করেছে। এজন্য দেশের গড় আয় নিয়ে উচ্ছ্বাস করার কিছু নেই। কেননা বৈষম্যের চিত্র ভিন্ন।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সম্মেলন কক্ষে আব্দুল গফুর মেমোরিয়াল লেকচারে এসব কথা বলেন তিনি। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেনের সঞ্চালনায় লেকচারে ‘মার্ক্স স্টাডিস ইন বেঙ্গল : সাম ক্রিটিক্যাল রিফ্লেকশনস’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। এতে বক্তব্য রাখেন, ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বিআইডিএসের সাবেক গবেষক রুশিদান ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম. এ. আকাশ প্রমুখ।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, মার্ক্সের শ্রেণী বৈষম্যের পাশাপাশি আরও নানা বৈষম্য আমাদের সমাজে বিরাজমান। গবেষক গফুর ভাইসহ আমরা অনেকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অনেক পরিকল্পনা করেছি বিআইডিএসের সম্মেলন কক্ষে বসে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আধা-সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে বসে আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু আজকের দিনে সেটি কি সম্ভব? শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অলৌকিক ও বায়বীয় অবস্থা তৈরির মাধ্যমে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা তৈরির সুফল নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, নাগরিকরা এখন আর স্বপ্ন দেখেন না। নেতা নেত্রীরা স্বপ্ন দেখলেই কেবল তারা স্বপ্ন দেখেন। ব্যক্তির বিকাশ বাধাহীন হলে সমাজে বৈষম্য কমে আসবে। বিশ্বে মার্ক্সকে শতবার কবর দেওয়া হয়েছে। আবার বিশ্বে কোথাও যখন কোনো ঘটনা ঘটে, তখন তিনি উঠে আসেন। এটি তার জীবন্ত উপস্থিতি। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে মার্ক্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। বিশ্বের যেখানে বৈষম্যের ঘটনা ঘটেছে, সেখানেই মার্ক্স প্রতিবাদী হয়ে এসেছেন। কিন্তু বাংলা ভাষায় মার্ক্সকে খুব বেশি তুলে ধরা হয়নি। মার্ক্সের তত্ত্ব নিয়ে আরও বেশি গবেষণা হওয়া দরকার।
ড. বিনায়ক সেন বলেন, আব্দুল গফুর বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ছিলেন। এছাড়া তিনি পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এর আগে তার স্মরণে দুটি লেকচার হয়েছে। এবার তৃতীয় বারের মতো এ লেকচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় মার্ক্সের দর্শন কাজে লাগাতে হবে।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মার্ক্সকে ভালোভাবে বুঝতে হবে। বাংলাদেশে মার্ক্সীয় চর্চা বাড়ানো দরকার। তাহলেই বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব। অধ্যাপক এম. এম. আকাশ বলেন, মার্ক্সকে জানতে হলে তার মূল বই পড়তে হবে। মার্ক্সের নিজস্ব ভাষায় লেখা বই আমরা পড়িনি। ইংরেজিতেও কম পড়েছি। বাংলায় তো বই নেই বললেই চলে।
ড. রুশিদান ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের জন্য মার্ক্স ও লেনিনের চিন্তার প্রয়োগ কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে গবেষণা করতে হবে। পুঁজি ও উদ্বৃত্ত উৎপাদনের বিষয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে। কেননা ক্ষুদ্র কৃষকরা শোষিত হচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে। সমাজতন্ত্র আমাদের মনে আছে। কিন্তু সেটিকে কাজ লাগাতে হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মার্ক্সের বিষয়গুলো আরও বেশি বেশি অনুবাদ হওয়া উচিত ছিল। কেন এত কম অনুবাদ হয়েছে- সেটিই বড় প্রশ্ন। কার্ল মার্ক্সের মতো চিন্তার জগতে যারা পথিকৃৎ ছিলেন, তাদের খুঁজে বের করে চর্চা করতে হবে। এ বিষয়ে আমাদের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।