লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুর বিরুদ্ধে ইউপি নির্বাচনে কোটি কোটি টাকা মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে সদর উপজেলার হাজিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো. সামছুল আলম বাবুল এ অভিযোগ করেন। তিনি ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বিভিন্ন সময়ে জেলা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ করেছেন। তবে এসব অভিযোগ মিথ্যা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সামছুল আলম বাবুলকে বড় মিথ্যাবাদী বলে দাবি করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু।
এদিকে মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। সেই ক্ষোভ থেকেই রোববার (২৬ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিতব্য ১৫টি ইউনিয়নের প্রায় সবগুলোতে একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র হিসেবে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। ফলে সুষ্ঠু নির্বাচনে নৌকার জয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি তৃণমূলের বর্ধিত সভায়ও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে অভিযোগ করেছেন মনোনয়ন বঞ্চিতরা।
সদর উপজেলার হাজিরপাড়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা সামছুল আলম বাবুল বলেন, দলীয় মনোনয়নের জন্য জেলা সভাপতি পিংকু আমার কাছে ৬০ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন। তা দিতে না পারায় তার চাচাতো ভাই ও রাজাকার পুত্র মাসরুকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। গত ইউপি নির্বাচনে আমার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা নিয়েছিলেন পিংকু।
বাবুল বলেন, জেলা সভাপতি পিংকু আমার কাছে ৬০ লাখ টাকা চাইলে আমি দিতে পারব না বললে উনি আমাকে জমি বিক্রির পরামর্শ দেন। আমি পরীক্ষিত চেয়ারম্যান। দুর্নীতি করিনি, কোনো টাকা খাইনি। আমি কোথা থেকে এত টাকা দেব?
তিনি বলেন, পিংকু সাহেব একজন ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা নয়। উনি এসেছেন টাকা কামানোর জন্য। আগের ইউপি নির্বাচনে উনি একশ কোটি টাকার মত কামিয়েছেন। জেলার ৫২টি ইউনিয়নের কোনোটি থেকে এক কোটি, কোথাও ৬০ লাখ, ৫০ লাখ টাকা নিয়ে নমিনেশন বাণিজ্য করেছেন। ওনার পেশাই ব্যবসা করা। লক্ষ্মীপুর থেকে উনি কাউকে ‘আল্লাহরাস্তে’ নমিনেশন দেননি। একজন আদম ব্যবসায়ী হয়ে কীভাবে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেন? তিনি আমাকেও ছাড়েননি, আমি তার ইউনিয়নের (হাজিরপাড়া) সভাপতি। তিনি আমাকে বলে- এবার আপনার কাছ থেকে সবার চেয়ে কম বলছি, ৬০ লাখ টাকা দেন, তাহলে আপনাকে নমিনেশন দেব।
বাবুল চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, আপনার দলকে বাঁচাতে চাইলে গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তদন্ত করে দেখুন। আমার কথাটুকুর সত্যতা আছে। মিথ্যা বললে আমাকে জেলে দেবেন। জেলা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিগত কিছুদিন যাবত মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতারা বক্তব্য দিয়ে আসছেন। সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আবদুল হালিম মাষ্টার ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান ঢালী অভিযোগ করেছেন, ওই ইউনিয়নে অর্থের বিনিময়ে জেলা এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের অযোগ্য ব্যক্তি আবদুল খালেক বাদলকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। একই অভিযোগ এনেছেন ওই ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইফুল হাসান রনি ও মামুনুর রশিদ মামুনও।
চরশাহী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান গোলজার মোহাম্মদও একই অভিযোগ তুলেছেন। এছাড়া সদর উপজেলার উত্তর হামছাদী, কুশাখালী, দিঘলী বশিকপুর ইউনিয়নে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বাবুল একজন মিথ্যুক। তার নামটা প্রথমে পাঠানো হয়েছিল। সে দুর্নীতি করেছে বলে রিপোর্ট গেছে, তাই মনোনয়ন পায়নি। এগুলো তার নাটক, সে নাটকের ওস্তাদ। অনান্য ইউপিতে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, সব মিথ্যা, নমিনেশন না পেলে বঞ্চিতরা এসব কথা বলে।