আগামী ৪ বছরে বাংলাদেশকে ১১ বিলিয়ন টাকা বা প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা অনুদান দেবে সুইজারল্যান্ড। সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোঅপারেশনের (এসডিসি) মাধ্যমে এই অর্থ সহায়তা দেবে দেশটি। বাংলাদের জন্য ‘উন্নয়ন সহায়তা কর্মসূচি’ প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। ২০২২-২৫ সালের মধ্যে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। রাজধানীর একটি হোটেলে বুধবার প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব উত্তম কুমার কর্মকার। এ সময় বাংলাদেশ সফররত এসডিসির মহাপরিচালক প্যাট্রিসিয়া ড্যানজি সহযোগিতা কর্মসূচি উপস্থাপন করেন। বক্তব্য দেন- সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথিল চুয়ার্ড, ডেপুটি হেড অব মিশন সুজানি মুইলার প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে কর্মসূচি উপস্থাপনের সময় বলা হয়, সুইজারল্যান্ডের বৈদেশিক অগ্রাধিকার এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কৌশলের আঙ্গিকে নতুন এই সহযোগিতা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে বৈশ্বিক এজেন্ডা এসডিজি-২০৩০, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন অগ্রাধিকারের সঙ্গে এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই কর্মসূচিতে প্রধান তিনটি লক্ষ্য সামনে রাখা হয়েছে। এগুলো হলো- বাংলাদেশের স্থিতিশীল এলডিসি উত্তরণে সহায়তা করা। এছাড়া সমৃদ্ধ, ন্যয়সঙ্গত ও সহনশীল একটি সমাজ গঠনে উৎসাহিত করা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে ভূমিকা রাখা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ডের বন্ধুত্বের ৫০ বছরের বন্ধন আরও শক্ত হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হচ্ছে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের শুরু থেকেই সুইজারল্যান্ড আমাদের অন্যতম সহযোগী। বাংলাদেশ সরকার দেশের জনগণের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে করে যাচ্ছে। দরিদ্রদের সীমারেখা থেকে টেনে তুলতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সরকার। তবে দেশের বৈষম্য যে নেই সেটি বলা যাবে না। কিন্তু সেটি দূর করতে কাজ হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার গ্রামীণ উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। কেননা গ্রামেই বেশিরভাগ গরিব মানুষের বাস। সারা দেশে বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিক কাজ করছে। সেখান থেকে বিভিন্ন ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছেন গ্রামের মানুষ। বর্তমানে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দারিদ্র্যনিরসন, নারী ও শিশু উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রকল্পগুলোকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, দুর্নীতি যে নেই তা বলব না। কিন্তু দুর্নীতি নিরসনের প্রচেষ্টা আছে। নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে। আশা করছি পরিবর্তন আসবে। উত্তম কুমার কর্র্মকার বলেন, বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষায় ব্যাপক সহযোগিতা প্রয়োজন। বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটছে। এমন অবস্থায় সুইজারল্যান্ডের সহায়তা ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এ কর্মসূচিতে রোহিঙ্গা ও কক্সবাজারের স্থায়ীয় জনগণের জন্য সহায়তা দেওয়া হবে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্যাট্রিসিয়া ড্যানজি বলেন, বাংলাদেশ কোভিড-১৯ মহামারির চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে। কক্সবাজারে অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সেখানে স্থানীয় জনগণও সুবিধা পাচ্ছেন। বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শোভন কর্মসংস্থান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা, বৈষম্য কমানো-সুশাসন এবং জেন্ডার সমতাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কাজ করছে সুইজারল্যান্ড। এসব কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।