গ্রুপপর্বে বাংলাদেশ ১-০ গোলে হারিয়েছিল ভারতকে। ফাইনালেও একই ব্যবধানে একই প্রতিপক্ষকে হারিয়ে মেয়েদের সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে নিলেন মারিয়া মান্দারা। ম্যাচের ৮০ মিনিটে একমাত্র জয়সূচক গোলটি করেন ডিফেন্ডার আনাই মগিনি। বুধবার কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে লাল-সবুজের ঢেউ তুলে বিজয়ের মাসে বিজয় ছিনিয়ে নেন বাংলাদেশের ফুটবলকন্যারা।
শেষ বাঁশি বাজার পর কমলাপুরের উত্তাল গ্যালারিতে দর্শকদের আনন্দ জোয়ার ওঠে। মাঠে শামসুন্নাহার, তহুরা, স্বপ্নারা স্বপ্ন সত্যি করার আনন্দে আত্মহারা হয়ে পরস্পরকে সিক্ত করেন অভিনন্দনে। ডাগআউটেও কিছুক্ষণ উৎসব চলে। মারিয়া মান্দারা একে অন্যের গায়ে পানি ছিটিয়ে আনন্দে ভাসেন। অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ গোটা টুর্নামেন্টে ২০টি গোল করেছে। কোনো গোল হজম করেনি। বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সাফের অনূর্ধ্ব-১৮ টুর্নামেন্টেরে মতো প্রথমবার আয়োজিত অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্টেও চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। স্টেডিয়ামের উত্তর ও দক্ষিণ গ্যালারি কানায় কানায় পূর্ণ ছিল কাল। অনেকেই বসতে না পেরে দাঁড়িয়ে খেলা দেখেছেন। দীর্ঘদিন পর ফুটবল মাঠে এত দর্শক দেখা গেল। প্রায় ১৮ হাজার দর্শক উপস্থিত ছিলেন। মারিয়াদের খেলা দেখতে অনেকেই পরিবার নিয়ে হাজির হয়েছিলেন।
মালিবাগ থেকে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে কমলাপুরে খেলা দেখতে আসা আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে আমার স্ত্রী মেয়েদের ফুটবল খেলা দেখতে চেয়েছিল। আমাদের মেয়েরা ফাইনালে ওঠায় তাকে নিয়ে এসেছি।’ ম্যাচের প্রথম পাঁচ মিনিট আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলে ভারত। গুছিয়ে উঠতে সময় নেয়া বাংলাদেশের মেয়েরা কিছুক্ষণ পরেই ফেরে ছন্দে। মন মাতানো ফুটবলে সবাইকে মোহিত করেন তহুরা খাতুন, মারিয়া মান্দারা।
ছোট ছোট পাসে, দারুণ বোঝাপড়ায় বাংলাদেশের আক্রমণগুলো ছিল গোছালো। সব পজিশনেই ছিল স্বাগতিকদের দাপট। প্রথমার্ধের বেশিরভাগ সময়ই বল ছিল ভারতের সীমানায়। বাংলাদেশ গোলকিপার রুপনা চাকমাকে বড় কোনো পরীক্ষা দিতে হয়নি এ অর্ধে। ১৫ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে মারিয়া মান্দার শট ভারতের গোলকিপার আনশিকা ঠিকমতো ফেরাতে পারেননি। ফিরতি বলে তহুরা খাতুনের শট গোললাইন থেকে ফেরান নিরমলা দেবী।
২২ মিনিটে একক প্রচেষ্টায় বাঁ প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে ঢুকে পড়া তহুরা খাতুনের বাঁ পায়ের শট পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। মিনিট তিনেক পর আনাই মগিনির ক্রসও পোস্টে লেগে ফিরে আসে। শুরুতে আক্রমণাত্মক খেলা ভারত সময়ের সঙ্গে রক্ষণাত্মক কৌশল অবলম্বন করে। ডিফেন্স লাইনে চার-পাঁচ ফুটবলার সবসময় ছিলেন। তহুরা খাতুন, শাহেদা আক্তার রিপারা বল নিয়ে ভেতরে ঢুকতে পারছিলেন না।
গোলের জন্য মরিয়া বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা তাই বেছে নেন দূরপাল্লার শট। বক্সের বাইরে থেকে মনিকা চাকমা, ঋতুপর্ণা চাকমাদের বেশিরভাগ শট কখনো ক্রসবার ঘেঁষে, আবার কখনো পোস্টের পাশ ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। অসংখ্য আক্রমণ করেও গোল পাচ্ছিল না বাংলাদেশ। অবশেষে ভাগ্যদেবী মুখ তুলে চাইলেন মারিয়াদের দিকে। ৮০ মিনিটে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ডান প্রান্ত দিয়ে শাহেদা আক্তার রিপা ব্যাকহিল পাস দেন।
আনাই মগিনি বক্সের বাইরে থেকে শট নেন। ভারতের গোলকিপার আনশিকা বলের ফ্লাইট বুঝতে পারেননি। তিনি হাত লাগালেও বল গোল লাইন অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গে নেচে ওঠে পুরো স্টেডিয়াম। গোল শোধে মরিয়া হলেও কাক্সিক্ষত গোলের দেখা পায়নি ভারত। শেষে ১-০ গোলের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবলে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ভারতকে পরাজিত করায় দলের খেলোয়াড়, কোচ ও কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানান। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ দলের এই জয়ের ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।