৩ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়ক চার লেন’ প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত চার বছরে সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ৩১ শতাংশ। ব্যয় করা হয়েছে ১ হাজার ১১৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ফলে প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য ৩ বছর মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। ব্যয় বাড়ছে ২ হাজার ২২৪ কোটি টাকা। এ সংক্রান্ত সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। ভারতীয় ঋণের আওতায় (এলওসি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
প্রকল্পের ধীর গতি প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হয় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ঢাকা জোনের অতিরিক্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার (প্লানিং অ্যান্ড মেইনটেনেন্স) একেএম মনির হোসেন পাঠানের কাছে। রোববার তিনি যুগান্তরকে বলেন, ভ্যাট নিয়ে জটিলতা আছে। অর্থাৎ ৫৮ কোটি টাকার ভ্যাট দিতে পারছি না। ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) এটি ধরা ছিল না। এ ছাড়া নতুন করে ইরিগেশন চ্যানেল করতে হবে। এরকম নানা কারণে কাজ শেষ করা যায়নি। তবে এই সংশোধনীর পর আর কোনো জটিলতা থাকবে না।
বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সাবেক সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়জুল্লা বলেন, প্রকল্পের গোড়ায় গলদ ছিল। সেটি না হলে এত কম বাস্তবায়ন হবে কেন? তবে অনেক ক্ষেত্রে বৈদেশিক ঋণ থাকলে প্রতিটি ধাপে তাদের ছাড়পত্র নিতে গিয়ে দেরি হয়। সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু প্রকল্প তৈরির সময়ই যদি গাফিলতি না থাকত তাহলে এখন এসে নতুন অঙ্গ যোগ করার প্রয়োজন হতো না। প্রকল্পটি সময়মতো শেষ হলে যে খরচ হতো, এখন তিন বছর ধরে যখন বাস্তবায়ন হবে তখন অবশ্যই বেশি খরচ পড়বে। এ দায় কে নেবে? সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত।
সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে ৩ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ২০২১ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। এখন নতুন কিছু কাজ যুক্ত হওয়া, পরিমাণ ও ব্যয় বাড়া-কমার ৫ হাজার ৭৯১ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রথম সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ব্যয় বাড়ছে ২ হাজার ২২৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা (৬২ দশমিক ৩৩ শতাংশ)। মাঝে একবার ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।
এখন ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হলো। প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়কে দুই পাশে ধীর গতির গাড়ির জন্য পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে ৫ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থের আশুগঞ্জ পর্যন্ত শূন্য দশমিক ৬৫১ কিলোমিটার মহাসড়ক, ৭ দশমিক ৩২ মিটার প্রস্থের ঢাকা-সিলেট জাতীয় মহাসড়কের আশুগঞ্জ থেকে সরাইল পর্যন্ত ১১ দশমিক ৫৬ কিলোমিটার মহাসড়ক, সরাইল থেকে কুমিল্লা (ময়নামতি)-ব্রাহ্মণবাড়িয়া (সরাইল) জাতীয় মহাসড়কের ধরখার পর্যন্ত ২৭ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার মহাসড়ক, ধরখার থেকে ধরখার-আখাউড়া জেলা মহাসড়কের আখাউড়া স্থল বন্দরের সেনারবদী পর্যন্ত ৩ দশমিক ৭ মিটার প্রস্থের ১১ দশমিক ৩১৫ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ। প্রকল্পের অন্য কাজের মধ্যে রয়েছে ১৬টি সেতু, ৩৩টি কালভার্ট, ১০টি ফুট ওভার ব্রিজ, ৩টি আন্ডারপাস ও ২টি ওভারপাস নির্মাণ। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ভারতসহ অন্য প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের কাজে গতি আসবে।
কথা হয় প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন-আল-রশীদের সঙ্গে। তিনি বলেন, করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন বাস্তব অবস্থার কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দেরি হয়েছে। ব্যয়ও বাড়ানোর পেছনে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। সংশোধিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধি হবে। সেই সঙ্গে প্রকল্প এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে। তাই প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।