নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের আগে স্থানীয় আওয়ামী লীগের গৃহদাহ নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে এ কে এম শামীম ওসমান ও ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে রাজধানী ঢাকায় জরুরি তলব করা হয়েছে। এ সময় নারায়ণগঞ্জ মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত থাকবেন। এদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা সমকালকে বলেন, একেএম শামীম ওসমান শারীরিকভাবে অসুস্থ। তিনি বৈঠকে অংশগ্রহণ করতে পারবেন কিনা, সেটা বলা যাচ্ছে না।
আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম সমকালকে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আজ সকাল ১১টায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর ও জেলা শাখার কার্যনির্বাহী কমিটির যৌথ সভা ডাকা হয়েছে। এ কে এম শামীম ওসমান ও ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী এ সভায় উপস্থিত থাকবেন।
এ কে এম শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের এক নম্বর কার্যনির্বাহী সদস্য। জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি হলেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। এই দুই নেতার মধ্যকার দূরত্ব দীর্ঘদিনের। তাদের শীতল সম্পর্কের কারণে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ঘরানার রাজনীতিতেও বড় ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়েছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা স্পষ্ট দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে আছেন। এ নিয়ে দুই পক্ষ সরাসরি দ্বন্দ্ব-বিবাদে জড়িয়ে রয়েছে। এসব কারণে প্রায় সময়ই নেতিবাচক খবরের শিরোনাম তৈরি হচ্ছে।
২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ কে এম শামীম ওসমান ও ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর মধ্যকার মতবিরোধের বিষয়টি প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে আসে। এ কে এম শামীম ওসমান ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেলেও জয় পান নাগরিক পরিষদের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। নির্বাচনের আগের দিন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। সেই থেকে আওয়ামী লীগের দুই নেতা সুযোগ পেলেই পরস্পরের বিরুদ্ধে কথা বলে আলোচনায় এসেছেন।
ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলে আলোচিত দুই নেতার বাগ্যুদ্ধ দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার শিরোনাম পায়। স্থানীয় নেতাকর্মীরা তিক্ততায় জড়িয়ে পড়েন। ওই নির্বাচনে এ কে এম শামীম ওসমান দলীয় মনোনয়ন চাননি। তিনি নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের দলীয় প্রার্থিতার পক্ষে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই অবস্থায় এ কে এম শামীম ওসমান ও ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে ডেকে নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ মিটিয়ে দেন।
এদিকে, আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ঘরানার রাজনীতিতে ভিন্ন প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে বনিবনা না থাকলেও নিজের বলয়ের কাউকেই সমর্থন করছেন না এ কে এম শামীম ওসমান। যার কারণে তার বলয়ের তিন নেতা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, সহসভাপতি চন্দন শীল ও জেলার সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদ বাদল দলের মনোনয়নপত্র কেনেন। তবে দলের মনোনয়ন পান ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।
বর্তমানে এ কে এম শামীম ওসমান বলয়ের নেতাকর্মীরা দলীয় প্রার্থীর প্রচার কর্মকাণ্ডে তেমন একটা সক্রিয় নেই। তারা আপাতত চুপচাপ ও অনেকাংশে নিষ্ফ্ক্রিয় হয়ে আছেন। ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলয়ের নেতাকর্মীরা নির্বাচনী প্রচার কর্মকাণ্ডে সক্রিয় রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে এ কে এম শামীম ওসমান বলয়ের নেতাকর্মীদের এড়িয়ে চলার অভিযোগ রয়েছে। তার পরও নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দের পর এ কে এম শামীম ওসমান বলয়ের নেতাকর্মীরা সক্রিয় হবেন বলে স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন। আগামী ২৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের এমপি বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক ও নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের এমপি নজরুল ইসলাম বাবুকেও আজকের বৈঠকে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সভায় অন্যদের মধ্যে জেলা সভাপতি আবদুল হাই, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদ বাদল, মহানগর সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা উপস্থিত থাকবেন।
নানক-আজমের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর নির্বাচনী কর্মকাণ্ড দেখভালের জন্য কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক এই কমিটির সমন্বয়ক। সদস্য সচিব হচ্ছেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।
নানক-আজমের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর নির্বাচনী কর্মকাণ্ড দেখভালের জন্য কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক এই কমিটির সমন্বয়ক। সদস্য সচিব হচ্ছেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।
কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন- দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান, দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দুই সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, মহিলা সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, কার্যনির্বাহী সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট এ বি এম রিয়াজুল কবীর কাওছার, অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম, আনোয়ার হোসেন, সাহাবুদ্দিন ফরাজী, ইকবাল হোসেন অপু ও সাঈদ খোকন। আজকের সভার পর এই কমিটি নারায়ণগঞ্জে গিয়ে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে কর্মিসভা করবে।