বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। শনিবার (১৩ মার্চ) ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত আগেই ছিল। এছাড়া সংসদ উপ নির্বাচনেগুলোতে অংশ নিয়েও কোনো লাভ হয় না। সরকার ও নির্বাচন কমিশন আগে থেকেই ফল ঠিক করে রাখে। শুধু আনুষ্ঠানিকতার জন্য নির্বাচন করে। এমন নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরকার ও কমিশনকে বৈধতা দিয়ে লাভ কি?
বিএনপির নেতারা বলছেন, ২০১৪ সালের পর থেকেই বর্তমান সরকার নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোর মধ্য দিয়ে জনমনে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেছে। ফলে পরিস্থিতির ন্যূনতম উন্নতি না হলে দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে না। তাই সরকারের বাইরে থাকা সেসব দলগুলোকে কাছে টানতে ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে বৃহত্তর ঐক্য গঠনের চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকারকে চাপে ফেলে ন্যূনতম দাবি আদায় না করতে পারলে বিদ্যমান প্রশাসনিক কাঠামোর মধ্যে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নিয়ে লাভ নেই। এ কারণেই দলীয় ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের প্রায় সবাই একমত হয়েছেন। গত কয়েক বছরের নির্বাচনে নজিরবিহীন ভোট জালিয়াতির পর বর্তমান সরকার ও ইসির অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেওয়া যায় না। কারণ, সব নির্বাচনের ফলই পূর্বনির্ধারিত। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাও একই। তাই শুধু শুধু নির্বাচনে গিয়ে এ সরকার ও ইসিকে বৈধতা দেওয়ার কোনো অর্থ হয় না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছি আমাদের মৌলিক অধিকার এবং ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসেও এ সরকার আমাদের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এ অবৈধ সরকার এবং কমিশন নির্বাচনের আগের রাতেই ভোটের ফল নির্ধারণ করে দেয়। আর এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তো কোনো ফলও আসছে না। বিএনপির একটাই দাবি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার এবং নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন।
বিএনপি নেতারা বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি অনেক আগে থেকেই জানানো হচ্ছে। দেশের অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকেও একই প্লাটফর্মে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন সংস্কারের প্রস্তাব উত্থাপন ছাড়াও সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার চেষ্টা চালাবে বিএনপি। প্রাথমিকভাবে দেশের ৬ বিভাগীয় শহরে ৮টি সমাবেশ দিয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে চারটি সমাবেশ করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছি। এর আগে স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেওয়ার বিষয়ে তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা মনে করেছিলাম, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন করার ব্যবস্থা করবে, কমিশন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনার উদ্যোগ নেবে। সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে যা হয়েছে- তা এতো হতাশাজনক যে, আগামীতে অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনে দলীয়ভাবে আমরা অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।