রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ভারতসহ বিশ্ব সম্প্রদায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং মহান বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাস করে। বঙ্গবন্ধু অনুসৃত ‘কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব’ নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় ও বহু পাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে কূটনৈতিক অঙ্গনে সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বমানবতার ইতিহাসে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আমি আশা করি, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানেও ভারতসহ বিশ্ব সম্প্রদায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করেছি। এ সময় একটি জাতির জন্য খুব কম নয়। সময় এসেছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে স্বপ্ন নিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, তা কতটুকু অর্জিত হয়েছে তার হিসাব মেলানোর। দেশ ও জনগণের উন্নয়ন রাজনৈতিক নেতৃত্বের একক দায়িত্ব নয়। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে এটি আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য।
রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীনতা মানুষের অধিকার। অধিকারকে অর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলেই স্বাধীনতা অর্থবহ হয়ে ওঠে। আবার অধিকারের অপপ্রয়োগ স্বাধীনতাকে খর্ব করে। স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতাকে এক করে দেখলে চলবে না।
তিনি বলেন, স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হলে এর সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সবাইকে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিটি কাজে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। সব ক্ষেত্রে নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে।
আবদুল হামিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু বই পড়ে বা একাডেমিক চর্চা থেকে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা অর্জন করেননি। তিনি রাজনীতির পাঠ নিয়েছেন গণমানুষের কাছ থেকে। বঙ্গবন্ধু জনগণের ভাষা বুঝতেন, তাদের দাবি-দাওয়া ও প্রয়োজনের কথা জানতেন এবং সব সময় তাদের পাশে দাঁড়াতেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। করোনাভাইরাসের মহামারি আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকে সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত করলেও থামিয়ে দিতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োচিত ও দূরদর্শী পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ এখন নিয়ন্ত্রণে এবং সংক্রমণজনিত মৃত্যুর হারও শূন্যের কাছাকাছি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, গৌরব ও ত্যাগের অনুপম বীরত্বগাথা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস। আমরা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জনকারী জাতি। জাতির পিতা আমাদের পৃথিবীর বুকে আত্মপরিচয় নিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচার অধিকার দিয়ে গেছেন। তার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, আর তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিজয়ের পঞ্চাশ বছরে দাঁড়িয়ে আমরা উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সুবর্ণ আলো দেখতে পাই। জাতির পিতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথে এগিয়ে যাব- মুজিব জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর শুভক্ষণে এটিই হোক সকলের চাওয়া-পাওয়া।