সাবেক চিফ হুইপ পটুয়াখালী-২ আসনের এমপি আ স ম ফিরোজের বিরুদ্ধে জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ছবি ভাঙচুর-অবমাননার অভিযোগে মামলা হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আনন্দ মিছিল করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে মামলার অভিযোগে। মঙ্গলবার পটুয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন বাউফল সদর ইউনিয়ন শাখা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মো. জাহিদুল হক।
দায়ের হওয়া মামলা প্রসঙ্গে অবশ্য কোনো সিদ্ধান্ত দেননি আদালতের বিচারক পটুয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জামাল হোসেন। এ সংক্রান্ত আদেশ দেওয়ার জন্য ১৯ ডিসেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য করেন তিনি। বিচারকের দেওয়া এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর। জাতির পিতার ছবি ভাঙচুর ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি প্রশ্নে দলের অভ্যন্তরে বিভেদ সৃষ্টি, স্বাধীনতা বিরোধীদের পক্ষে কাজ করা, রাজাকার আলবদরদের পুনর্বাসন, ক্ষমতার অপব্যবহার, চরম অনিয়ম দুর্নীতি এবং নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগও আনা হয়েছে মামলার আবেদনে।
এসব অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকের দেওয়া ভিডিও বক্তব্য এবং ঘটনাসমূহের প্রত্যক্ষদর্শী খান আলতাফ হোসেন ভুলুসহ মোট ১০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে মামলার আবেদনে। এরা সবাই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রভাবশালী নেতা। মামলার আবেদনে ১নং সাক্ষী হিসেবে নাম থাকা প্রসঙ্গে জানার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন ধরেননি জাহাঙ্গীর কবির নানক। খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি তার।
একটিমাত্র উপজেলা বাউফল নিয়ে গঠিত পটুয়াখালী-২ আসনের এমপি আ স ম ফিরোজের জন্মস্থানও বাউফল। এখান থেকে ৭ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া ফিরোজ আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত মেয়াদে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপের দায়িত্বে ছিলেন। ৪৬ বছর আগে বরিশালের ছাত্রলীগ নেতা থাকাবস্থায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ফিরোজ বঙ্গবন্ধুর প্রতি চরম অবমাননার পাশাপাশি তার ছবি পা দিয়ে মাড়িয়ে ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়। বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুরের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকারও অভিযোগও আনা হয়েছে ফিরোজের বিরুদ্ধে।
বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর সংক্রান্ত মামলার অভিযোগে বাদী জাহিদুল হক খান বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সকালে বরিশাল শহরে মামলার ২নং সাক্ষী তৎকালীন বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সংগঠনিক সম্পাদক খান আলতাফ হোসেন ভুলুর নেতৃত্বে বের করা হয় বিক্ষোভ মিছিল। বঙ্গবন্ধুর শাহাদত বরণের সাথে সাথে জাতির পিতার পক্ষ ত্যাগ করে খুনিদের দোসর খন্দকার মোশতাক এবং বরিশালের তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম মঞ্জুরের পোষ্য ক্যাডার বনে যাওয়া আ স ম ফিরোজ তখন কিছু লোকজন নিয়ে ভুলুর নেতৃত্বাধীন ওই মিছিলে হামলা চালায়। লাঠিসোটা দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয় নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে মিছিল বের করা বঙ্গবন্ধুর অনুসারীদের।
তিনি বলেন, এরপর লোকজন নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঘটনায় আনন্দ মিছিল করেন ফিরোজ। একপর্যায়ে মিছিলকারীদের সঙ্গে নিয়ে ঢোকেন বরিশাল শহরের সদর রোডে টাউন হলের উত্তর পাশে থাকা আওয়ামী লীগ অফিসে। সেখানে থাকা জাতির পিতার ছবি নামিয়ে তাতে জুতা ও কাঁটার মালা ঝুলিয়ে করেন আনন্দ মিছিল। এরপর বরিশালের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে সেখানে থাকা বঙ্গবন্ধুর ছবি খুলে ফেলে রাস্তায় এনে শত শত মানুষের সামনে ভাঙচুর পদদলিত করেন আ স ম ফিরোজ।
এছাড়া বেশ কয়েকটি সরকারি কার্যালয়ে ঢুকে একই ঘটনা ঘটান তিনি। বেলা সোয়া ১২টা নাগাদ যান বিএম কলেজে। সেখানে কার্যালয়ে ঢুকে অধ্যক্ষকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়ালে থাকা জাতির পিতার ছবি খুলে রাস্তায় এনে করেন ভাঙচুর ও পদদলিত। ঘটনার দিন এভাবে বহু জায়গা থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে ভাঙচুর, পদদলিত করাসহ আনন্দ মিছিলের নামে ত্রাস ছড়ান ফিরোজ। পরে লোকজন নিয়ে খিচুড়ি রান্না এবং খেয়ে করা হয় উৎসব।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি ফিরোজ বলেন, আজন্মকাল ধরে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী আমি। দল এ পর্যন্ত ৯ বার আমাকে জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছে। পালন করেছি জাতীয় সংসদের হুইপ এবং চিফ হুইপের দায়িত্ব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্নেহধন্য এবং পরীক্ষিত কর্মী না হলে তো তিনি আমায় এভাবে বারবার সম্মানিত করতেন না। তাছাড়া জাতির পিতার কন্যা জননেত্রীর অজানা কিছু নেই। তিনি সবই জানেন। তেমন কোনো অপরাধ করলে তিনি নিশ্চয়ই আমাকে এভাবে সুযোগ দিতেন না।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে ছাত্রজীবনে আমি বরিশাল বিএম কলেজের ভিপি ছিলাম। সেই সময় থেকে যারা রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় আমার সাথে পেরে ওঠেননি তারাই এখনো আমার বিরুদ্ধে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। এ মামলার বিষয়টিও সেই ষড়যন্ত্রেরই একটি অংশ। দল আমাকে বিশ্বাস করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবই জানেন। তাই এসব ষড়যন্ত্র শেষ পর্যন্ত সফল হবে না। সবচেয়ে বড় কথা হলো- যে নির্বাচনী এলাকার মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে ৭ বার এমপি বানিয়েছেন তাদের অসম্মানিত করা হচ্ছে এসব মামলা আর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। সব ষড়যন্ত্র ভেদ করে সত্যিটাই প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।