করোনার নতুন শনাক্ত ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন দক্ষিণ আফ্রিকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে । এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত কয়েক ডজন রোগীকে প্রত্যেকদিন চিকিৎসা দিচ্ছেন দেশটির চিকিৎসক আনবেন পিলে। চিকিৎসা নিতে আসা ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীদের একজনকেও এখন পর্যন্ত হাসপাতালে পাঠাননি তিনি।
অন্যান্য চিকিৎসকদের পাশাপাশি তিনি এবং মেডিক্যাল বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন যে, ওমিক্রন সংস্করণটি আসলে ডেল্টার তুলনায় মৃদু কোভিড-১৯ রোগের সৃষ্টি করছে। তবে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন তারা।
চিকিৎসক আনবেন পিলে ওমিক্রন রোগীদের চিকিৎসার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন মার্কিন বার্তাসংস্থা এসোসিয়েট প্রেসকে (এপি)। তিনি বলেছেন, রোগীদের বাড়িতেই সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলা যায়। বেশিরভাগ রোগীই আইসোলেশনে যাওয়ার ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠছেন।
চিকিৎসক বলেন, বয়স্ক রোগী যাদের আগে থেকে স্বাস্থ্য সমস্যা আছে তারা করোনাভাইরাসে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার দুই সপ্তাহ থেকেই অন্যান্য চিকিৎসকরাও আনবেন পিলের মতো একই ধরনের অভিজ্ঞতা জানিয়ে আসছেন। এ ভ্যারিয়েন্টের ঝুঁকির বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। চিকিৎসক ও মেডিক্যাল বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ এবং প্রাথমিক প্রমাণ ভ্যারিয়েন্টটির ব্যাপারে কিছু সূত্র দিচ্ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিকেবল ডিজিজের মতে:
• গত কয়েক সপ্তাহে কোভিড-১৯ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মাত্র ৩০ শতাংশ গুরুতর অসুস্থ হয়েছেন। যা মহামারির আগের ঢেউয়ের প্রথম সপ্তাহগুলোর তুলনায় অর্ধেকের কম।
• কোভিড-১৯ এর জন্য হাসপাতালে থাকার গড় সময়ে কমছে। বর্তমানে রোগীদের আগের আট দিনের তুলনায় প্রায় ২ দশমিক ৮ দিন কম হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে।
• সম্প্রতি কোভিড-১৯ নিয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাদের মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশ মারা গেছেন। এর আগের প্রাদুর্ভাবের সময় সেই হার ছিল প্রায় ২০ শতাংশ।
আফ্রিকা হেলথ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক উইলিয়াম হ্যানেকম বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে কার্যত সবকিছুই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টকে মৃদু রোগ হিসেবে নির্দেশ করছে।’
তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের চূড়ান্ত ডেটা পাওয়া প্রয়োজন। অনেক সময় হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যু পরে ঘটে এবং আমরা এই ঢেউয়ের মাত্র দ্বিতীয় সপ্তাহে আছি। ইতোমধ্যে বিদ্যমান ভ্যাকসিন এবং চিকিৎসা কতটা কার্যকর, তা বিশ্বজুড়ে পরীক্ষা করে দেখছেন বিজ্ঞানীরা। একই সময়ে এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের সংখ্যা এবং হাসপাতালে ভর্তির হারও পর্যবেক্ষণ করছেন তারা।
ডেল্টা এখনও বিশ্বব্যাপী আধিপত্য বিস্তারকারী করোনাভাইরাসের প্রজাতি রয়ে গেছে। অন্যদিকে, ওমিক্রনের সংক্রমণ মাত্র কয়েক ডজন দেশে শনাক্ত হয়েছে; যার উপকেন্দ্র দক্ষিণ আফ্রিকা।
দক্ষিণ আফ্রিকার গৌতেং প্রদেশে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন আনবেন পিলে; যেখানে করোনার ওমিক্রন সংস্করণের আধিপত্য চলছে। এক কোটি ৬০ লাখ বাসিন্দার এই গৌতেং দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ এবং বৃহত্তম শহর জোহানেসবার্গ ও রাজধানী প্রিটোরিয়াও এর অন্তর্ভুক্ত।
দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে গৌতেং প্রদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রায় ৪০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ সংক্রমণই ওমিক্রনের জন্য দায়ী বলে পরীক্ষায় দেখা গেছে।
পিলে বলেছেন, ডেল্টার শেষ প্রাদুর্ভাবের সময় তার কাছে চিকিৎসা নিতে আসা কোভিড-১৯ রোগীদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা এবং অক্সিজেনের মাত্রা কমে গিয়েছিল। তাদের মধ্যে অনেককেই আক্রান্ত হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হত।
তবে এখন তিনি যাদের কোভিড-১৯ চিকিৎসা দিচ্ছেন, তাদের বেশির ভাগেরই ফ্লুর মতো মৃদু উপসর্গ যেমন—শরীর ব্যথা, কাশি আছে।
দক্ষিণ আফ্রিকাজুড়ে প্রায় ৫ হাজার জেনারেল প্রাকটিশনারের একটি সংস্থার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পিলে। তার সহকর্মীরাও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপারে প্রায় একই ধরনের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন।
কিন্তু দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রত্যেকদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বৃহস্পতিবার দেশটিতে ২৪ হাজার ৪০০ এবং শুক্রবার ১৯ হাজারের বেশি মানুষের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। যা আগের সপ্তাহের তুলনায় দৈনিক প্রায় ২০০ শতাংশ বেশি। নতুন ঢেউয়ে গত মাসে দেশটিতে ৯০ হাজারের বেশি মানুষ করোনা সংক্রমিত হয়েছেন বলে শুক্রবার জানিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জো পাহলা।
তিনি বলেছেন, ওমিক্রনের কারণে সংক্রমণের পুনরুত্থান ঘটেছে। দেশজুড়ে বর্তমানে নতুন করে যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের প্রায় ৭০ শতাংশেরই ওমিক্রন ধরা পড়ছে।