মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ যে সাতজন বীরকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়, তার মধ্যে অন্যতম বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন। তিনি ছিলেন অদম্য এক সাহসী যোদ্ধা। আজ তার ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী। বিজয়ের ঠিক ৬ দিন আগে ১৯৭১ সালের এই দিনে খুলনার রূপসা নদীতে রণতরী পলাশে যুদ্ধরত অবস্থায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর জঙ্গি বিমানের গোলার আঘাত এবং রাজাকারদের নির্যাতনে শহীদ হন তিনি।
বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন ১৯৩৫ সালে নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৩ সালে রুহুল আমিন জুনিয়র মেকানিক্যাল হিসেবে পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের মার্চে রুহুল আমিন চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর একদিন সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে তিনি বের হয়ে যান নৌঘাঁটি থেকে। পালিয়ে সীমান্ত পার হয়ে চলে যান ত্রিপুরা এবং যোগ দেন দুই নম্বর সেক্টরে।
ভারত সরকার বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দুটি টাগবোট উপহার দেয়। এগুলোকে বাফার গান ও মাইন-পড জুড়ে গানবোটে রূপান্তর করে নামকরণ হয় ‘পদ্মা’ ও ‘পলাশ’। রুহুল আমিন নিয়োগ পান পলাশের ইঞ্জিন রুম আর্টিফিশার হিসেবে।
একাত্তরের ৬ ডিসেম্বর মোংলা বন্দরে পাকিস্তানি নৌঘাঁটি পিএনএস তিতুমীর দখলের উদ্দেশে পদ্মা, পলাশ, মিত্রবাহিনীর গানবোট পানভেল ও ভারতের বিএসএফের পেট্রোল ক্রাফট চিত্রাঙ্গদা একযোগে রওনা হয়।
১০ ডিসেম্বর মোংলা অতিক্রম করে পদ্মা ও পলাশ সামনে অগ্রসর হতে থাকে। দুপুরে আকাশে তিনটি জঙ্গি বিমান দেখা যায়। পদ্মা ও পলাশ থেকে বিমানের ওপর গুলিবর্ষণ করার অনুমতি চাইলে বহরের কমান্ডার বিমানগুলো ভারতীয় বলে ভুল করে। কিন্তু আকস্মিকভাবে বিমানগুলো পদ্মা ও পলাশের ওপর গুলি ও বোমা বর্ষণ করে। শত্রুর একটি গোলায় পলাশ ধ্বংস হয় ও রুহুল আমিন আহত হন। আহতবস্থায় রাজাকারের হাতে তিনি ধরা পড়েন। রাজাকাররা আহত এ বীর সৈনিককে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে।