ডা. মুরাদ হাসানের সঙ্গে চিত্রনায়ক ইমন ও নায়িকা মাহিয়া মাহির কথোপকথনের একটি কল রেকর্ড ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অডিও ক্লিপটিতে শোনা যায়, মাহিকে তাৎক্ষণিক তার কাছে যেতে বলছেন প্রতিমন্ত্রী মুরাদ। নায়িকা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন এবং হুমকি দেন তিনি।
শুরু হয় তুমুল সমালোচনা। যার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরেই নিজ দফতরে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন ডা. মুরাদ।
মাহিয়া মাহিকে নিয়ে ডা. মুরাদ হাসানের মন্তব্যের জেরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা রকম প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। অভিনেত্রী তারানা হালিম নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, “ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। মুরাদ হাসান, আপনি কর্মক্ষেত্রে যা করেছেন তা conflict of interest, আপনি যে ভাষায় কথা বলেছেন তা বিকৃত রুচির, অশালীন, নারীর প্রতি অবমাননাকর, আপনি দলের ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষু্ণ্ণ করেছেন, শাস্তি আপনার প্রাপ্য। রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন, ‘ভালো মানুষ নারীকে সম্মান করে।’
তাই আপনি দোষী থাকবেন দুনিয়া ও আখেরাতে। আমরা যারা দলকে ভালোবাসি তারা জানি এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কঠিন, কঠোর হতে হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যার কাছ থেকে এটাই আশা করি আমরা। ভবিষ্যতে সব লুটেরা, ঘুসখোর, লম্পটদের বিরুদ্ধে আপনার এমন কঠোর পদক্ষেপ অব্যাহত থাকুক। এই দৃষ্টান্ত যেন সবার জন্য শিক্ষার কারণ হয়। যখন টাইপ করছিলাম তখন শিরোনাম দিয়েছিলাম, ‘এটা অন্যায়’ জনাব মুরাদকে উদ্দেশ করে। এর মাঝে ফোনে জানলাম ওনাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তাই শিরোনামটি বদলালাম। লিখলাম-ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।”
ওমর সানী নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো লাগছে। ইমনের ফোনটাকে ধন্যবাদ, ইমনকে নয়। আর মাহি, ওই মুহূর্তে কী বা করার থাকে কী বা বলার থাকে বলুন, আল্লাহ ছাড় দেন ছেড়ে দেন না। আমি একজন শিল্পী।’
নিপুণ আক্তার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘আগের দিন দেখলাম সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নাতনিকে নিয়ে অশ্লীলতম ভাষায় প্রজাতন্ত্রের একজন চাকর কথা বললেন। তার পরদিন সেই একই লোক এক অনুষ্ঠানে গিয়ে পুলিশ ভাইদের নসিহত করলেন যাতে তারা কারও সাথে ব্যবহার খারাপ না করেন। তার পরদিন শুনলাম উনি রেপ করার থ্রেট দিচ্ছেন কাউকে।
এখন আপনারাই বলেন, এমন দেশটি কোথায় খুঁজে পাবেন? এসব দেখিয়া শুনিয়া একজন নাগরিক হিসেবে আমি যারপরনাই ক্ষুব্ধ। আমি বিশ্বাস করতে চাই মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরাও এই লোকের সাথে এক টেবিলে বসতে লজ্জাই বোধ করবেন। এই ছোট্ট জীবনে আমার সুযোগ হইছে দু-একজন মন্ত্রী দেখার। তাদের কারও কারও প্রশংসা করে আমি লিখছিলামও। আমি বিশ্বাস করি তারা কেউই চাইবেন না এই লোক তাদের বিজ্ঞাপন হয়ে উঠুক।’
নির্মাতা শিহাব শাহীন লিখেছেন, ‘সে একাধিকবার না বলেছিল।’
কণ্ঠশিল্পী ন্যানসি লিখেছেন, ‘এমন বিকৃত রুচি, বিকৃত ভাষার মানুষ আমাদের বর্তমান সরকারের প্রতিমন্ত্রী!’
নিপুণ লিখেছেন, ‘উনি যখন মন্ত্রী, পাবলিকের ট্যাক্সের টাকায় ওনার যখন বেতন হয় তখন পাবলিকলি মন্ত্রী হিসেবে লাইভ টক শোতে ওনার কোনো বক্তব্যই ব্যক্তিগত হতে পারে না! ওনার বক্তব্য দলের বক্তব্য না হতে পারে কারণ দল ব্যক্তিকেন্দ্রিক, কিন্তু মন্ত্রী হয়ে যখন উনি কোনো কথা পাবলিকলি বললেন সেটার দায় অবশ্যই সরকারকে নিতে হবে!’
অন্য একটি পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, ‘যখন জবাবদিহিতার ভয় থাকে না, বিচারের ভয় থাকে না, তখন ক্ষমতা এই ভাষাতেই কথা বলে। সামনে হয়তো লোক দেখানো একজনকে খেদানো হবে (নাও হতে পারে), কিন্তু সিস্টেমকে জবাবদিহিতার আওতায় না আনলে ভাষা আরও কুৎসিত হবে। ওনার কুৎসিত ভাষাকেও তখন শিশুর ভাষা মনে হবে। সিস্টেম ঠিক করেন, ভাষা আর ক্ষমতা অটো লাইনে চলে আসবে।’
‘মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার্স’ খ্যাত আবু হেনা রনি লিখেছেন, ‘তোমাদের শুধু ত্যাগ করার মুরাদ আছে, শাস্তি দেওয়ার মুরাদ নাই।’
অভিনেতা ও নির্মাতা মাসুদ আকন্দ লিখেছেন, ‘মন্ত্রিত্ব গেছে ভালো হইছে। একটা ছোট প্রশ্ন, দুই বছর অডিও ক্লিপটি কার কাছে ছিল? আর কোন যাদুবলে মোক্ষম সময়ে তা প্রকাশ পেলো?’