চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) বিশেষ সুবিধার আওতায় ১১২ কোটি কালো বা অপ্রদর্শিত টাকা বৈধ বা সাদা হয়েছে। মাত্র ১৫০ ব্যক্তি এমন সুবিধা নিয়ে কর হিসেবে ১২ কোটি টাকার কিছু বেশি সরকারের কোষাগারে জমা দিয়েছেন। যেখানে একই সময়ে আগের অর্থবছরে কালোটাকা বৈধ করার পরিমাণ ছিল ৫৫০ কোটি টাকা। রোববার (৫ ডিসেম্বর) এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রাথমিক তথ্যানুসারে, চলতি জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিশেষ সুবিধার আওতায় ১১২ কোটি কালোটাকা বৈধ হয়েছে। এর মধ্যে ৯০ কোটি টাকা নগদ, ব্যাংক আমানত, সঞ্চয়পত্র এবং অন্যান্য আর্থিক খাতে বিনিয়োগ দেখিয়ে বৈধ করা হয়। আবাসন খাত ও শেয়ার বাজারে বাকি টাকা বিনিয়োগ করে বৈধ করার সুযোগ নেওয়া হয়েছে।
২০২০-২০২১ অর্থবছরে রেকর্ড প্রায় ২০ হাজার ৬০০ কোটি অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালোটাকা বৈধ হয়। যেখানে প্রায় ১২ হাজার করদাতা কালোটাকা বৈধ করেন। দেশের ইতিহাসে এক বছরে এত কালোটাকা আগে কখনও সাদা করা হয়নি।
২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত কালোটাকা সাদা করার তালিকায় আছেন ডাক্তার, সরকারি চাকরিজীবী, তৈরি পোশাক রফতানিকারক, ব্যাংকের স্পন্সর-ডিরেক্টর, সোনা ব্যবসায়ীসহ আরও অনেকে। এর মধ্যে শুধু জুন মাসেই এক হাজার ৪৫৫ জন ব্যক্তি ৬১৯ কোটি কালোটাকা সাদা করেন।
কালো টাকা বিনিয়োগকারীর মধ্যে ৭ হাজার ৫৫ জন ব্যাংকে রাখা বিভিন্ন আমানত, এফডিআর, সঞ্চয়পত্র বা নগদ টাকার ওপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা বৈধ করেন। তারা এক হাজার ৬৮৩ কোটি টাকার কর সরকারের কোষাগারে জমা দিয়ে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা আইনগতভাবে বৈধ করেন। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে মাত্র ৪০০ কোটি টাকা অর্থ বৈধ বা সাদা হয়।
চলতি বছরের বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের বিষয়ে সরাসরি কোনো বক্তব্য না থাকলেও ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ঘোষিত সুযোগ অব্যাহত রাখা হয়। তবে অর্থবিলে নতুন শর্ত যুক্ত করা হয়। শর্ত অনুযায়ী, শেয়ার বাজার, ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র এবং হাতের নগদ টাকা সাদা করলে ২৫ শতাংশ কর দিতে হবে। এর সঙ্গে মোট করের ওপর পাঁচ শতাংশ পেনাল্টি দিতে হবে। তবে কেউ যদি শিল্প-কারখানায় বিনিয়োগ করেন তাহলে তিনি ১০ শতাংশ কর দিয়ে এ সুযোগ নিতে পারবেন।
২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতারা জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের প্রতি বর্গমিটারের ওপর নির্দিষ্ট হারে এবং নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা যেকোনো সিকিউরিটিজের ওপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছিল। এছাড়া পুঁজিবাজারে অর্থ বিনিয়োগ করলেও ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।