করোনাভাইরাসের নতুন ধরন শনাক্তের জেরে বাড়তি সতর্কতা জারি ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কঠোর করার পদক্ষেপ নিয়েছে এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, কয়েকবার রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া ভাইরাসের এই ধরনটি টিকা প্রতিরোধী।
রয়টার্স এক প্রতিবেদেন জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা ও তার আশপাশের দেশগুলো থেকে ফ্লাইট আগমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। পাশাপাশি, যেসব ব্রিটিশ যাত্রী গত কয়েকদিনের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা বা তার পার্শ্ববর্তী কোনো দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে ফিরেছেন, তাদেরকে কোয়ারেন্টাইনে যেতে বলেছে দেশটির সরকার।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মূল প্রশাসনিক শাখা ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) প্রধান নির্বাহী উরসুলা ভন ডারলেনও এক আদেশে ইইউভুক্ত সব দেশে দক্ষিণ আফ্রিকা ও তার প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আসা সব ফ্লাইটে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।
যুক্তরাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নতুন শনাক্ত হওয়া এই রূপান্তরিত ধরনটির স্পাইট প্রোটিন মূল করোনাভাইরাসের থেকে অনেকটাই ভিন্ন। ফলে, মূল করোনাভাইরাস থেকে এই ধরনটির ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা অনেক বেশি- এমন শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই।
দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়াও হংকং ও বতসোয়ানায় এই ধরনটিতে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থা।
শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা ১১ টার দিকে জেনেভায় বৈঠকে বসেছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বিশেষজ্ঞরা। বৈঠক শেষে সংস্থার মুখপাত্র ক্রিস্টেইন লিন্ডমিয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ‘রূপান্তরিত এই ধরনটির সম্পর্কে যেসব তথ্য বর্তমানে আমাদের হাতে রয়েছে, সেসব বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করার জন্যই আজকের বৈঠক আহ্বান করা হয়েছিল।’
‘সাধারণ না কি উদ্বেগজনক- কোন ক্যাটাগরিতে এই ভাইরাসটিকে ফেলা যাবে সে সম্পর্কে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর মতো যথেষ্ট তথ্য এই মুহূর্তে আমাদের হাতে নেই। তবে তথ্য সংগ্রহের জন্য ডব্লিউএইচওর তৎপরতা অব্যাহত আছে।’
ইউরোপের দেশসমূহের মধ্যে ইতালি ইতোমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকাসহ আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের দেশগুলোর যাত্রীদের পাশাপাশি যেসব ইতালীয় যাত্রী দক্ষিণ আফ্রিকাসহ দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশগুলোতে বর্তমানে অবস্থান করছেন, তাদের দেশে প্রবেশের ক্ষেত্রেও ১৪ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
এছাড়া জার্মানি সরকারিভাবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ‘রূপান্তরিত ভাইরাসের এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করেছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এদিকে, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে জাপান ও সিঙ্গাপুর যুক্তরাজ্যকে অনুসরণ করে দক্ষিণ আফ্রিকা ও তার পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে ফ্লাইট আসার ব্যাপারে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
একসময়ের স্বাধীন রাষ্ট্র ও বর্তমানে চীনের অধিকৃত দ্বীপ ভূখণ্ড তাইওয়ান অবশ্য এত কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি; তবে শুক্রবার এক আদেশে তাইওয়ানের সরকার জানিয়েছে- যেসব যাত্রী দক্ষিণ আফ্রিকাসহ তার আশপাশের দেশগুলো থেকে তাইওয়ানে আসবেন, তাদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।