চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে আইনমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের একটি প্রতিনিধি দল। স্মারকলিপি গ্রহণ করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, এটি অবশ্যই পর্যালোচনা করব। তবে সিদ্ধান্ত ও মতামতের ব্যাপারে আলোচনার প্রয়োজন আছে। যতটুকু গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, সেভাবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মঙ্গলবার আইন মন্ত্রণালয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ১৫ আইনজীবী এ স্মারকলিপি দেন।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান স্মারকলিপিটি আইনমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, জয়নুল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, আহমেদ আজম খান, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, তৈমূর আলম খন্দকার, বদরুদ্দোজা চৌধুরী, রুহুল কুদ্দুস (কাজল), আবেদ রাজা, আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, মোহাম্মদ আলী, ওমর ফারুক ফারুকী প্রমুখ। স্মারকলিপিতে বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ (১) এর ধারামতে সরকার যে কোনো সময় শর্তহীনভাবে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে বা ৪০১ এর ৬ উপধারা মোতাবেক বিশেষ আদেশ দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারে। স্মারকলিপি দেওয়ার পর সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তাকে দ্রুত বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা আছে। আমরাও বিষয়টা তুলে ধরলাম।
দেশের ৯৯.৯৯ ভাগ মানুষ খালেদা জিয়ার মুক্তি-সুচিকিৎসা চায়-গয়েশ্বর : আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতা মনে মনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য মুক্তি চান মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, জরিপ করলে দেখা যাবে-এ দেশের ৯৯.৯৯ ভাগ জনগণ খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সুচিকিৎসা চায়। শুধু এক ভাগ মানুষ শেখ হাসিনাকে খুশি করার জন্য সভ্যতার ধার ধারে না। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ জাতীয় দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। পুলিশ দিয়ে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা যাবে না বলে সরকারকে হুঁশিয়ার করে গয়েশ্বর আরও বলেন, ৫৮ বছরের রাজনৈতিক মাঠে চলার মধ্য দিয়ে যা দেখেছি, কোনো দিন পুলিশ কোনো সরকার রক্ষা করতে পারেনি, পারেও না। জনগণের আন্দোলন জোরদার হলেই পুলিশ ক্ষমতাসীনদের পেছন থেকে সরে পড়বে। জাতীয় দলের সভাপতি সৈয়দ এহসানুল হুদার সভাপতিত্বে সভায় বিএনপির জহিরউদ্দিন স্বপন, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমতুল্লাহ, এনপিপির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, এলডিপির একাংশের শাহাদাত হোসেন সেলিম, এনডিপির আবু তাহের প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের মধ্যে সহনশীলতার ছিটেফোঁটাও নেই-রিজভী : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের মধ্যে সহনশীলতার ছিটেফোঁটাও নেই। মঙ্গলবার বিকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, খালেদা জিয়া যাতে সুস্থ হতে না পারেন সেজন্য বিদেশে উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে সরকার গড়িমসি করছে। কর্তৃত্ববাদী ক্ষমতাসীনরা মানবতা, বিবেক ও সহমর্মিতার ধার ধারে না। পথের কাঁটা সরাতে তারা সব উদ্যোগ নিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ বক্তব্য দেন। এর আগে সকালে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরে ঝটিকা মিছিল করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মিছিলটি আল-হেলাল হাসপাতালের সামনে থেকে শুরু হয়ে শেওড়াপাড়ায় এসে শেষ হয়। এতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
আজ সারা দেশে ডিসি বরাবর স্মারকলিপি দেবে বিএনপি : খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে আজ বুধবার সারা দেশে জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবর স্মারকলিপি দেবে বিএনপি। সকাল সাড়ে ১০টায় ডিসি অফিসে ঢাকা জেলা বিএনপি স্মারকলিপি দেবে। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে সিসিইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হবে- ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য তাকে অবিলম্বে বিদেশ পাঠানো না হলে এবং এর ফলে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটলে সরকার এর দায় এড়াতে পারবে না।’
খালেদা জিয়াকে দেখতে যান ডা. জাফরুল্লাহ : রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে দেখতে গিয়েছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। মঙ্গলবার বিকালে তারা খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার অধিকারের হাসনাত কাইয়ুম, নঈম জাহাঙ্গীর প্রমুখ।
৭১ জন সাংস্কৃতিক ব্যক্তির বিবৃতি : দেশের ৭১ জন সাংস্কৃতিক ব্যক্তি এক যুক্ত বিবৃতিতে খালেদা জিয়াকে বিনাশর্তে মানবিক কারণে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা করার অনুমতি দিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন-স্বাধীনতা পদক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত গীতিকার, চলচ্চিত্রকার ও সংস্কৃতিজন গাজী মাজহারুল আনোয়ার, চিত্রনায়ক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, একুশে পদকপ্রাপ্ত গীতিকার মনিরুজ্জামান মনির, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা চিত্রনায়ক হেলাল খান, কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন, কণ্ঠশিল্পী কনক চাঁপা, কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর, গীতিকার মুনশি ওয়াদুদ, ডা. এমএ আজিজ, ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী, জাকির হোসেন রোকন, সঙ্গীত পরিচালক ইথুন বাবু, কণ্ঠশিল্পী রিজিয়া পারভীন, চলচ্চিত্র পরিচালক হাফিজ উদ্দিন, সঙ্গীত পরিচালক জাবেদ আহমেদ কিসলু, কণ্ঠশিল্পী হাসান চৌধুরী প্রমুখ।