বিশ্বের প্রধান তেল রফতানিকারক দেশ সৌদি আরব। তাদের অর্থনীতিও অনেকটাই তেলনির্ভর। ফলে সৌদির তেল রফতানিতে কোনও কারণে বিঘ্ন ঘটলে দেশটির অর্থনৈতিক ক্ষতি তো হয়ই, এর প্রভাব পড়ে গোটা বিশ্বেই। সম্প্রতি সৌদির তেল স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে হামলা বাড়িয়েছে ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা। এসব হামলা গোটা বিশ্বের অর্থনীতির জন্য হুমকি বলে উল্লেখ করেছে সৌদি আরব। মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠকে এ হুঁশিয়ারি দিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ। এসময় সৌদি আরবের তেল স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থার সুরক্ষায় নেওয়া পদক্ষেপগুলো পর্যালোচনা করেন দেশটির মন্ত্রীরা। এছাড়া, জ্বালানি সরবরাহের স্থিতিশীলতা, তেল রফতানির নিশ্চয়তা, সামুদ্রিক পরিবহন এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আক্রমণ প্রতিহত করার বিষয়েও আলোচনা করেছেন তারা।
সৌদি মন্ত্রিসভা বলেছে, সম্প্রতি দেশটির রাস তানুরা বন্দর ও দাহরানের একটি আবাসিক এলাকায় দু’টি হামলার ঘটনা আন্তর্জাতিক আইনের পুরোপুরি পরিপন্থী। বেসামরিক নাগরিক এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার বিরুদ্ধে এধরনের হামলা প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও সংস্থাগুলোর প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
গত কয়েক সপ্তাহে সৌদির তেল স্থাপনা লক্ষ্য করে একাধিকবার হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনি হুথি বিদ্রোহীরা। এর জেরে সৌদির প্রতিরক্ষা সামর্থ্য নিয়ে যেমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তেমনি বিশ্ববাজারে বেড়েছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। গত সোমবার এশীয় বাণিজ্যে তেলের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ব্রেন্ট ক্রুডের দাম প্রায় পাঁচ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৭১ দশমিক ৩৮ ডলারে, যা গত ১৪ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ওই দিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) তেলের দাম ২ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে হয় ৬৭ দশমিক ৬৯ ডলার প্রতি ব্যারেল। এর আগেই ডব্লিউটিআইয়ের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬৭ দশমিক ৯৮ ডলার দেখা গিয়েছিল, যা ২০১৮ সালের অক্টোবরের পর থেকে সর্বোচ্চ।
এর আগে, ২০১৯ সালে সৌদির প্রধান তেল স্থাপনাগুলোতে হামলার পরদিনই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ১৪ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। অবশ্য ওই হামলার জেরে সৌদির দৈনিক তেল রফতানি প্রায় অর্ধেক কমে গিয়েছিল, বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বিশ্বের প্রায় পাঁচ শতাংশ অপরিশোধিত তেল উৎপাদন। এবারের ধারাবাহিক হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত তেমনটা হয়নি।