বাবা নিখোঁজ নয় বছর ধরে। ক’দিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন মা। ছোট ভাইকে নিয়ে এখন নানার বাড়ি চাঁদপুরের মতলবে উঠেছেন সাইদুল ইসলাম রিমন। নানার বাড়িতেই গত বৃহস্পতিবার তার মায়ের লাশ দাফন করা হয়েছে। ছোট ভাইকে নিয়ে কি করবেন এটা ভেবেই কূল পাচ্ছেন না রিমন। জন্মের পর থেকে বাবা মায়ের সঙ্গে থাকতেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ভাড়া বাসায়। ২০১২ সালে বাবা মফিজুল ইসলাম রাশেদ নিখোঁজ হওয়ার কিছুদিন পর সেখান থেকে চলে যান সাভারের হেমায়েতপুরে। তখন পড়তেন অষ্টম শ্রেণিতে।
গতকাল বিকালে সাইদুল ইসলাম রিমনের সঙ্গে কথা হয় মানবজমিনের। তিনি বলেন, বাবা নিখোঁজের খবরে পাগল প্রায় হয়ে গিয়েছিলেন আমরা মা। প্রতিদিনই বাবার খোঁজে বের হতেন। রাজধানীর অনেক হাসপাতালের লাশঘরে গিয়ে খুঁজেছেন বাবাকে। নিখোঁজের পর কতোবার মা যে মিরপুর থেকে পুরান ঢাকার আদালতে গেছেন দুই হাতে গুনেও তা শেষ করা যাবে না। যখন যেখানে বাবাকে দেখা গেছে বলে খবর পেয়েছেন, তখনই ছুটেছেন সেখানে। গুম নিয়ে যখনই কেউ পথে দাঁড়িয়েছে বাবার ছবি বা প্ল্যাকার্ড হাতে আমাদের নিয়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি। আম্মুর বিশ্বাস ছিল আব্বু ফিরবে। অনেক দিন ধরে গুম হয়ে আছেন, এমন কেউ ফিরে এসেছেন শুনলেই আম্মু আমাদের খবর দিতেন। এখন আব্বু ফিরলেও আম্মুকে আর পাবো না। এখন আমার ছোট ভাইটাকে নিয়ে চিন্তা। মা তাকে কখনোই কোল ছাড়া করতেন না। বাবার কথা তার তেমন মনে নেই। সে জানে বাবা বিদেশে আছে। সে মায়ের হাতে খেত, ঘুমাতোও মায়ের সঙ্গেই। মৃতদেহে হাত বুলিয়ে দেখেও রিফাতের বিশ্বাস হয়নি মা আর নেই।
রিমন বলেন, গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে সাভারের হেমায়েতপুর থেকে লালমাটিয়ায় আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলেন মা। তখন আমি অফিসে ছিলাম। আমাকে ফোনে বলেছিলেন, দুপরের মধ্যেই বাসায় ফিরে আসবেন। কিন্তু মা আর ফেরেননি।
মারুফার স্বজনদের কাছে জানা যায়, বাস থেকে নেমে রাস্তা পার হচ্ছিলেন তিনি। এ সময় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় রাস্তায় পড়ে গেলে পেছন থেকে এসে একটা বাস চাপা দেয় তাকে। একজন সাংবাদিক গুরুতর আহত অবস্থায় সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান মারুফাকে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।
মারুফা ইসলাম রুমার দুর্ঘটনার খবরে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে ও স্থানীয় থানায় ছুটে যান মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী আফরোজা ইসলাম আঁখি। আগে থেকেই সব সময় রুমার পরিবারের খোঁজখবর রাখতেন তিনি। জানতে চাইলে আফরোজা ইসলাম আঁখি বলেন, ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে কী কষ্ট করেছেন মারুফা, তার প্রত্যক্ষদর্শী আমি। যে নারী কখনো মুদির দোকানে যাননি, স্বামীর খোঁজে তিনি পথে পথে ঘুরেছেন। মায়ের ডাকের সব অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন। ফোনে যোগাযোগ রাখতেন। স্বামী গুম, ছেলে দুটো মানুষ করতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে ভাবতেন সব সময়। কোনোদিন এক বেলা, কখনো আধপেটা খেয়ে দিন পার করেছেন। বাবা নিখোঁজের বিষয়ে রিমন জানান, ঢাকা মহানগরের ছাত্রদল নেতা ছিলেন মফিজুল ইসলাম রাশেদ। ২০১২ সালের ৮ই এপ্রিল রাতে রাজধানীর আদাবর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তাকে তুলে নেয়া হয়। এর পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন রাশেদ।