পৃথিবীর কয়েকটি অঞ্চলের আকাশে দেখা চমৎকার মেরুপ্রভা বা অরোরা। শনিবার রাতে সূর্য থেকে নির্গত একটি জিওম্যাগনেটিক বা ভূচৌম্বকীয় ঝড়ের প্রভাবে এমনটি ঘটেছে। স্পেস ডটকমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ‘এক্স১’ শ্রেণির সৌরশিখা নির্গত হয়েছে বলে ধরা পড়ে নাসার সোলার ডাইনামিকস অবজারভেটরিতে।
সেই সঙ্গে সৌরকণাও নির্গত হয়েছে, যা গত শনিবার রাতে পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়। সবচেয়ে তীব্র সৌরশিখার ক্ষেত্রে ‘এক্স’ শ্রেণি বলে উল্লেখ করেছে নাসা। সৌরশিখায় সূর্য থেকে শক্তিশালী তেজস্ক্রিয় বিকিরণ হয়। বিজ্ঞানীরা এবারের সৌরঝড়কে ‘জি৩’ পর্যায়ের জিওম্যাগনেটিক বা ভূচৌম্বকীয় ঝড় হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ওপরের স্তরে আঘাত করে। এ ধরনের ঝড় জিপিএস সংকেত, স্যাটেলাইটনির্ভর যোগাযোগ এবং বিদ্যুতের গ্রিডে প্রভাব ফেলে। সেই সঙ্গে মেরু অঞ্চলে অরোরা দৃশ্যমান হয়। উত্তর গোলার্ধে বেশি হয় বলে এমন আলোকে নর্দার্ন লাইটসও বলা হয়। দক্ষিণ মেরুতে হলে সেটাকে বলা হয় সাউদার্ন লাইটস।
যোগাযোগের অবকাঠামোতে প্রভাব ফেললেও এ ধরনের ঝড়ে মানুষের ক্ষতি হয় না। অরোরা তৈরির শর্ত হল, সূর্য থেকে তড়িতাহিত সৌরকণা এসে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ওপরের স্তরে আঘাত করতে হবে। আর পৃথিবীর চুম্বকক্ষেত্রের প্রভাবে সৌরকণাগুলো পৌঁছে যায় দুই মেরুতে। এ কারণেই মেরু অঞ্চল থেকে অরোরা ভালো দেখা যায়। নর্দার্ন লাইটসকে অরোরা বোরেলিসও বলা হয়। অন্যদিকে সাউদার্ন লাইটস অরোরা অস্ট্রালিস হিসেবে পরিচিত।
বড় সোলার ফ্লেয়ার বা সৌরশিখার ক্ষেত্রে সূর্য থেকে শক্তিশালী তেজস্ক্রিয় বিকিরণ হয়, যার নাম ‘করোনাল মাস ইজেকশন’। এতে পৃথিবীর দিকে একসঙ্গে তীব্র গতিতে সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে তড়িতাহিত সৌরকণা ধেয়ে আসে। গত বৃহস্পতিবারে এমনটাই হয়েছে। পৃথিবীর দিকে সৌরকণাগুলো ঘণ্টায় ৩৫ লাখ কিলোমিটার বেগে ছুটে আসে।
পৃথিবীতে সৌরকণা পৌঁছে শনিবার রাতে। এতে এতটাই উজ্জ্বল অরোরা তৈরি হয়, যা পৃথিবীর নিম্ন অক্ষাংশের অঞ্চলগুলো থেকেও দেখা যায়। বর্তমানে ১১ বছরের একটি চক্রের শুরুর দিকে আছে সূর্য। চক্রটি ‘সোলার সাইকেল ২৫’ হিসেবে পরিচিত। চলতি মাসের এক্স ১ শ্রেণির সৌরশিখাটি বর্তমান চক্রের দ্বিতীয় ঘটনা। এর আগে গত ৩ জুলাই এক্স ১.৬ শ্রেণির একটি সৌরশিখা নির্গত হয়।