দেশে সাধারণ কারও ‘কালো ওয়াকিটকি’ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যার পেছনে রয়েছে বিভিন্ন কারণ। এ সংক্রান্ত আজ রোববার (৩১ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানিয়েছে বাহিনীটি। সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ যে কেউ কালো ওয়াকিটকি’র ব্যবহারে বিভিন্ন শঙ্কার কথা বলছে এলিট ফোর্স র্যাব। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, রাজধানীর সায়েদাবাদ, মণিপুরীপাড়া, রাজারবাগ ও শেওড়াপাড়া এলাকা হতে ৩১৭টি অবৈধ ওয়াকিটকি ওয়্যারলেস সেট ও বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদিসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
র্যাব বলছে, গতকাল শনিবার (৩০ অক্টোবর) হতে আজ রোববার (৩১ অক্টোবর) আনুমানিক ভোররাত ৩ টা পর্যন্ত র্যাব-১০ বিটিআরসি’র সহযোগিতায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। ওইসব এলাকায় ওয়াকিটকি সেটের অবৈধ আমদানি, মজুত, বিক্রয়, বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে প্রদর্শন, ইজারা, ইত্যাদি প্রতিহত করার লক্ষ্যে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে অবৈধ ৩১৭ টি বিভিন্ন প্রকার ওয়াকিটকি সেট, ১১৬ টি মোবাইল ও ৫ হাজার ২৪৪ টি বিভিন্ন প্রকার একসেসরিস জব্দ করা হয়। যেসবের আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা।
এমন অবৈধ কাজের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে ঘটনাস্থল থেকে মোট ৫ জন আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা হলো- মেহেদী হাসান (২৭), সাদিক হাসান (২৬), মোঃ ফয়সাল (২৩), তালিবুর রহমান (২৪) এবং ফারুক হাসান (৫৯)। এই আসামীদের মধ্যে মেহেদী হাসানের কাছ থেকে ২২৪টি ওয়াকিটকি ওয়্যারলেস সেট, ফারুক হাসানের কাছ থেকে ৩০টি ওয়াকিটকি ওয়্যারলেস সেট এবং পলাতক আসামী গোলাম মোহাম্মদ ফেরদৌসের বাসা থেকে ৬৩টি ওয়াকিটকি ওয়্যারলেস সেট ও আনুষাঙ্গিক যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের ভাষ্য, আসামীরা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১ এর ধারা ৫৫(৭) মোতাবেক ওয়াকিটকি ব্যবহারের জন্য কোন প্রকার লাইসেন্স বা তরঙ্গ গ্রহণ করেনি। এছাড়াও একই আইনের ৫৭(৩) ধারা মোতাবেক ওয়াকিটকি আমদানি করার পূর্বে বিটিআরসি হতে অনাপত্তি গ্রহণের বিধান থাকলেও আসামীগণ তা ভঙ্গ করে অবৈধভাবে উক্ত ওয়াকিটকিসমূহ আমদানি করেছে এবং প্রদর্শনপূর্বক বিক্রয় করেছেন। এক্ষেত্রে আসামীগণ চট্টগ্রামের কতিপয় ব্যক্তির মাধ্যমে বিদেশ হতে দীর্ঘ ১ বছর যাবৎ লাইসেন্স ব্যতীত ওয়াকিটকি সেট ও সরঞ্জমাদি অবৈধ পথে ক্রয়পূর্বক সংগ্রহ করে আসছিল।
আসামীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত তারা আনুমানিক ১১৫০ টি ওয়াকিটকি সেট অবৈধ পন্থায় ক্রয়-বিক্রয় ও ইজারা দিয়েছে। এক্ষেত্রে ওয়াকিটকি সেট ও প্রয়োজনীয় তরঙ্গ ব্যবহারের লাইসেন্স প্রদানের মাধ্যমে সরকার যে মূল্যবান রাজস্ব আহরণ করত তা থেকে সরকার বঞ্চিত হয়েছে। মূলতঃ সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার উদ্দেশ্যে আসামীরা অবৈধ উপায়ে জব্দকৃত ওয়াকিটকি সেট ও সরঞ্জমাদি আমদানি করেছে।
এ বিষয়ে র্যাব-১০ এর অধিনায়ক (সিও) পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মাহফুজুর রহমান বলেন, বিটিআরসি থেকে জারীকৃত নির্দেশনা মোতাবেক সরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যতিত অন্য কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি ‘কালো রঙের ওয়াকিটকি সেট’ ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এক্ষেত্রে আসামীরা দেশের প্রচলিত আইন অমান্য করে অবৈধভাবে সাধারন মানুষের নিকট কালো রঙের ওয়াকিটকি সেট বিক্রয় করেছে, যা সার্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। এটি ব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে বলে তথ্য পেয়েছি আমরা। ফলে, এটি খুবই উদ্বেগের এবং শঙ্কার। বিশেষ করে এই ধরণের অবৈধ ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করে অপরাধী চক্র ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, দস্যুতা, চাঁদাবাজি, প্রতারণাসহ বহুবিধ অপরাধ করে থাকে।
তিনি আরও বলেন, আসামীরা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১ এর ধারা ৫৫(৭) ও ৫৭(৩) ধারা বিধান ভঙ্গ করে অবৈধ পন্থায় ওয়াকিটকি সেট ও সরঞ্জমাদি আমদানি, বিক্রয়, বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে প্রদর্শন, ইজারা প্রদান করায় তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। যে মামলাটি নিজেরাই তদন্ত করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে আবেদন জানাবে র্যাব।