স্কুল শিক্ষার্থীদের ৩০ অক্টোবর থেকে টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে। ১২ থেকে ১৭ বছরের ছাত্রছাত্রীরা এর আওতায় আসবে। তাদের ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে। শুরুতে ঢাকা মহানগরে ১২টি কেন্দ্রের ৩৯২টি বুথে শুরু হবে এ কার্যক্রম। পরে যাবে ঢাকার বাইরে। স্বাস্থ্য (ডিজিহেলথ) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বুধবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ১৮ বছরের কম বয়সি শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করেন। তিনি অবশ্য দিন উল্লেখ না করে বলেন, সপ্তাহখানেকের মধ্যে স্কুলপড়ুয়াদের করোনা টিকা দেওয়া শুরু হবে। এজন্য রেজিস্ট্রেশন চলছে। পরে মাউশিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই ধাপে ১২ বছরের বেশি বয়সি শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রথম ধাপে ঢাকা মহানগরের সরকারি নিবন্ধনপ্রাপ্ত বাংলা এবং ইংরেজি উভয়মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হবে ৩০ অক্টোবর। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সবধরনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, নিজ নিজ স্কুলের মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চালে মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবীর চৌধুরী বলেন, ‘প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩০ অক্টোবর শিক্ষার্থীদের টিকার প্রথম ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাদের আমরা সহায়তা করব। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন স্কুল প্রস্তুত করা হয়েছে। শুধু সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা টিকা নিতে পারবে। এ লক্ষ্যে থানাভিত্তিক কেন্দ্র নির্বাচন করা হয়েছে।’
এর আগে ১৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জের চার সরকারি স্কুলের ১১১ জন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষামূলকভাবে করোনা টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়। তাদের পর্যবেক্ষণ শেষে সারা দেশে পর্যায়ক্রমে স্কুলশিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচির আওতায় আনার কথা। জানা গেছে, রাজধানীতে ১২ কেন্দ্রে ৩৯২টি বুথ তৈরি করা হবে। প্রতি বুথে ২০০ জন করে শিক্ষার্থী টিকা পাবে। এরপর সক্ষমতা অনুযায়ী সারা দেশের ২১টি জেলা ও সিটি করপোরেশন পর্যায়ে টিকা দেওয়া হবে।
শনিবার বসুন্ধরা এলাকার হার্ডকো ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ৬৬টি বুথ খোলা হবে। সেখানে বাড্ডা ও ডেমরা শিক্ষা থানাভুক্ত নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা টিকা নিতে পারবে। একইভাবে মালিবাগ ও রামপুরার সাউথ পয়েন্ট স্কুলে স্থাপিত ৪৪টা বুথেও বাড্ডা ও ডেমরা এলাকার নিবন্ধিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা টিকা পাবে।
এছাড়া গুলশান-১ অবস্থিত চিটাগং গ্রামার স্কুলের ২৪টা বুথে গুলশান এলাকার নিবন্ধিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা, সূত্রাপুরের কসমোপলিটন ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৮টি বুথে কোতোয়ালি ও শ্যামপুরের নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা, বিজিবির পিলখানা সদর দপ্তরে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজে স্থাপিত ৩টি বুথে লালবাগ ও ধানমন্ডি এলাকার নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা টিকা পাবে।
মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কমার্স কলেজে স্থাপিত ২২টি বুথে ওই এলাকার নিবন্ধিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা টিকা পাবে। ঢাকা কমার্স কলেজে স্থাপিত ১০৪টি বুথে শাহআলী, পল্লবী ও মিরপুর এলাকার নিবন্ধিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা টিকা পাবে। ধানমন্ডি-১৫ তে অবস্থিত কাকলি হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২৫টা বুথে ধানমন্ডি, মোহাম্মাদপুর এবং মিরপুর এলাকার নিবন্ধিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা টিকা পাবে। উত্তরার ১১নং সেক্টরের সাউথ ব্রিজ স্কুলে স্থাপিত ২৫টি বুথে উত্তরা অঞ্চলের নিবন্ধিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্রছাত্রীরা টিকা নিতে পারবে।
মিরপুর ১৩ নম্বরের স্কলাস্টিকা স্কুলে স্থাপিত ৫৫টি বুথে কাফরুল ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকার নিবন্ধিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা, উত্তরখান এলাকারা তালতলা বাজারে অববিস্থত বিএইচ খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১০টি বুথে উত্তরা ও ক্যান্টনমেন্ট এলকার নিবন্ধিত স্কুলের শিক্ষার্থীরা এবং পিকে ঘোষ স্ট্রিট (নয়াবাজার) অবস্থিত আহমেদ বাওয়ানী একাডেমিতে স্থাপিত ৮টি বুথে কোতোয়ালি শিক্ষা থানা অঞ্চলের নিবন্ধিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা টিকা পাবে। সবমিলে শনিবার রাজধানীর ৩৯২টি বুথে ২০০ জন করে ৭৮ হাজার ৪০০ জন শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসের টিকা পাবে।
এদিকে আজকের গণটিকার বিষয়ে বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ও করোনার টিকা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক অধিদপ্তরের ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে এসে কথা বলেছেন। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষ্যে ২৮ সেপ্টেম্বর সারা দেশে গণটিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার থেকে এর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে। এ কর্মসূচি সারা দেশের সব জেলা, ইউনিয়ন, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন এলাকায় অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এ টিকাদান ক্যাম্পেইনে কোনো প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হবে না, শুধু দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া হবে। যারা ২৮ সেপ্টেম্বর প্রথম ডোজের টিকা পেয়েছেন শুধু তারাই শুধু এদিন দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাবেন। কেন্দ্র পরিবর্তন করে কোনো টিকা দেওয়া যাবে না। সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে। প্রয়োজন হলে বেলা ৩টার পরও সময় বৃদ্ধি করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর আগে ২৮ সেপ্টেম্বর সারা দেশে এক দিনে ৭৫ লাখ টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেয় সরকার। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সেদিন দিতে পেরেছে ৬৫ লাখ ৬৯ হাজার ৭৮২ ডোজ। অবশ্য পরের দিন সাধারণ টিকাদান কর্মসূচির পাশাপাশি গণটিকার অংশ হিসাবে ৮০ লাখ টিকার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে সরকার।
এ ব্যাপারে মুখপাত্র ডা. রোবেদ আমিন বলেন, বৃহস্পতিবার (আজ) এই টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে। এক দিনে ৮০ লাখ টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। কেউ বাদ পড়লে তিনি পরে নিতে পারবেন। এ কর্মসূচি ঠিকভাবে পালিত হলে প্রায় তিন কোটি মানুষ পূর্ণ দুই ডোজ টিকার আওতায় আসবেন। এর মাধ্যমে দেশের ১৭ শতাংশ মানুষ দুই ডোজ টিকা পাবেন।