শিক্ষকরা জাতির ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের মহানায়ক। এ শাশ্বত বাণী চিরন্তন। চিরসত্য। যারা জাতি গঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, দিচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও দেবেন তাদের প্রত্যেকের পেছনে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে শিক্ষকদের। কিন্তু মহান এ পেশা আজ মহাসংকটে ঘুরপাক খাচ্ছে। বেশিরভাগ শিক্ষক রাজনীতির দুষ্টচক্রে আবদ্ধ হয়ে পড়েছেন। ক্ষমতার রাজনীতি না করলে প্রত্যাশিত পদ-পদবিসহ কোনো কিছুই মেলে না। এ কঠিন বাস্তবতার মুখে নীতি বিসর্জন দিয়ে শিক্ষক সমাজের অনেকে আজ প্রকাশ্যে রাজনীতির খাতায় নাম লিখিয়েছেন। যাদের চাওয়া-পাওয়ার যেন শেষ নেই। আরও বেশি কিছু পাওয়ার জন্য তারা রাত-দিন ছুটছেন রাজনীতি ও অর্থের পেছনে। ‘নগদ যা পাও হাত পেতে নাও’ এ ফর্মুলায় শিক্ষক ও ছাত্রনেতাদের অনেকে আজ এক কাতারে শামিল হয়েছেন। টেন্ডারবাজিসহ ভাগবাটোয়ারা নিয়ে নানা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছেন শিক্ষকরাও। তাই এ ধরনের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এখন আর ক্লাসরুমে মনোযোগ নেই। তারা মনে করেন, ‘এ রাজনীতি’ তাদের সবকিছু পার করে দেবে। এভাবে পারের দেখাও পাচ্ছেন অনেকে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় পদের স্বাদ নেওয়ার পর অনেকে এখন এমপি-মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর।
তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রতিটি স্তরের দলমত নিরপেক্ষ মেধাবী শিক্ষকদের সামনে এমন একটি বাস্তব চিত্র আষ্টেপৃষ্টে জেঁকে বসায় অনেকে হতাশায় ডুবছেন। কেউ কেউ চলে যাচ্ছেন বিদেশে। কেউ আবার নিজের সঙ্গে নৈতিকতার যুদ্ধে টিকে থাকতে না পারে অন্যদের মতো একসময় রাজনীতির এ গড্ডালিকা প্রবাহে ঢুকে পড়ছেন। যুগান্তর প্রতিবেদকের কাছে শিক্ষাঙ্গনের এমন ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছেন বেশ কয়েকজন গুণী শিক্ষক। তারা বলেন, শিক্ষকরা অবশ্যই রাজনৈতিকভাবে সচেতন হবেন। প্রয়োজনে রাজনীতিও করবেন। কিন্তু সেই রাজনীতি হবে একটি মডেল। আসলে তারা করবেন সত্যিকারের রাজার নীতি। নীতির রাজনীতি। সেখানে শিক্ষকের মর্যাদা থাকবে সবার উপরে। শিক্ষকের রাজনীতি কখনও শিক্ষাঙ্গন কিংবা শিক্ষার ওপর প্রভাব ফেলবে না। দলীয় নোংরা রাজনীতি কখনও তাদের স্পর্শ করবে না। সবচেয়ে মেধাবীরা হবেন ছাত্রনেতা। তাদের রাজনীতি হবে ছাত্রদের কল্যাণে। তারা কখনও জাতীয় রাজনীতিতে এমনভাবে যুক্ত হবেন না, যার ফলে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হয়। এ রকম একটি পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব শিক্ষকদের। কিন্তু পরিস্থিতি আজ এমন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে-শিক্ষাঙ্গনের সব ভালো চর্চা এখন জাদুঘরে গিয়ে ঠাঁই নিয়েছে।
যুগান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রত্যেকটি স্তরেই দলীয় রাজনীতিপ্রবণ এ ধরনের শিক্ষকদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। আগে সংখ্যা কম থাকলেও এ ধরনের শিক্ষকের সংখ্যা শুধু বাড়ছেই না, প্রবণতা ভয়াবহ রূপ লাভ করেছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের মধ্যে অবশ্য সরাসরি দলীয় পদ-পদবি গ্রহণের প্রবণতা কম। তাদের বেশিরভাগ পেশাগত দাবি-দাওয়া নিয়েই কাজ করছেন বেশি। এ উদ্দেশ্যে তারা গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন সংগঠন। এসব শিক্ষক সংগঠনের যেন দাবি-দাওয়ার শেষ নেই। একটি পূরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও ৫-৭টির উদয় হয়। মূলত বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ের নামে প্রকারান্তরে সাধারণ শিক্ষকদের পকেট সাবাড়ে ব্যস্ত। বিভিন্ন কর্মসূচির নামে শিক্ষকদের বেতন থেকে নির্ধারিত চাঁদার টাকা কেটে নেন। বেতন থেকে সম্ভব না হলে নগদ নিয়ে থাকেন। লাখ লাখ টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে অনেক সময় নিজেরা বিভক্ত হয়ে পড়েন।
একই নামে ব্র্যাকেট বন্দি কিংবা নামসর্বস্ব বিভিন্ন সংগঠন গড়ে তোলেন। এভাবে তারা মাঠ গরম করে থাকেন। অনেকে সংগঠনের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন। শিক্ষক নেতাদের কেউ কেউ অবৈধ অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে বিভিন্ন অফিসের ‘দালাল’ হিসাবে কাজ করেন। তদবির বাণিজ্যই ওইসব শিক্ষকের প্রধান ব্যবসা। সংগঠনের নেতা হওয়ার কারণে এদের বেশিরভাগ ক্লাসে যান না। রাজনীতি এবং অর্থের পেছনে ধাবিত হওয়ার বেশি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্যে। ক্লাস শেষেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন চাকরি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পরামর্শকের কাজ কিংবা কেউ ছুটছেন শেয়ার বাজারে। উদ্দেশ্য একটাই, ক্ষমতাসীন দলের খাতায় নিজের নাম লেখানো। যাতে করে চাহিদামাত্র সব কিছু পাওয়া যায়।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অসংখ্যবার নির্বাচিত ডিন ও ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, ‘এটা ঠিক যে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্যে দিন দিন রাজনীতিতে জড়ানোর প্রবণতা বাড়ছে। বাড়ছে অর্থের প্রতি মোহ। এরফলে ধনাঢ্য শিক্ষকের সংখ্যাও দৃশ্যমান হারে বাড়ছে।’ তিনি নিজের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়ার পরও ১০ বছর রাজনীতির কাছে যাইনি। অথচ একটা সময়ে মনে হলো, যেসব পদে আমি বসতে পারি, দলীয় ফোরামে নাম না লেখানোর কারণে সেখানে যেতেই পারছি না। তখন বাধ্য হয়েই দলে যাই।’ তিনি মনে করেন, ‘উপাচার্য হওয়া বা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে বড় পদলাভ তো দূরের কথা, বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেট-সিন্ডিকেট সদস্য বা ডিনসহ বিভিন্ন পদে যেতে হলে দলীয় পরিচয় প্রয়োজন হয়। এছাড়া শিক্ষকদের একটি অংশ ছাত্রজীবনে রাজনীতি করে আসেন। তাদের মধ্যে সেই প্রবণতা থেকে যায়। সবমিলে শিক্ষকরা রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছেন। তাছাড়া ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে পরিচালিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনেই সরাসরি দলীয় পদ গ্রহণের সুযোগ আছে। যদিও নির্বাচনে দাঁড়াতে হলে কর্মস্থল থেকে পদত্যাগ করতে হয়।’
শিক্ষকদের অর্থের পেছনে বেশি মনোযোগী হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা আসলে বৃহত্তর সমাজেরই ঢেউ। দেখা যাবে, একটি পরিবারে তিন সন্তানের মধ্যে যার আয়-রোজগার বেশি, সে আয় অবৈধ পথে হলেও ওই পরিবারের সবার কাছে তার কদর বেশি। এছাড়া আমাদের সমাজে একটা সময় ছিল-যখন বেশি টাকাওয়ালা পরিবারে ছেলেমেয়ে বিয়ে দিতে চাইত না। তখন মনে করা হতো বেশি টাকা মানে সেখানে অবৈধ আয় আছে। কিন্তু এখন অবৈধ অর্থের ব্যাপারে সমাজে সহনশীলতা চলে এসেছে। বরং বিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশি অর্থসম্পদ তালাশ করা হয়। তাই যে কোনো উপায়ে অর্থ উপার্জনের প্রতি অনেকের আগ্রহ বেশি। তবে আমি বলছি না যে, শিক্ষকরাও একইপথে আয় করছেন। অবশ্যই এখনো অনেক শিক্ষক আছেন, যারা নীতির সঙ্গে কোনো আপস করেন না। পাশাপাশি ভিন্ন চিত্রও আছে। এক সময় শিক্ষক কোয়ার্টারে গাড়ির গ্যারেজ খালি থাকত। এখন শুনছি, তা ভরপুর তো বটেই, বরং অনেকে গ্যারেজ ভাড়া করেও গাড়ি রাখেন।’
সরকারের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকসহ গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রম তদারকি করে থাকে ইউজিসি। সংস্থাটির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী দেশের ৪৩ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯ সালে শিক্ষক ছিলেন ১৫ হাজার ২৯৩ জন। তাদের মধ্যে ৪ হাজার ২৭ জন অন্তত ৫ ধরনের ছুটিতে ছিলেন। এই পরিসংখ্যান মোট শিক্ষকের ২৬ শতাংশের বেশি। এসব শিক্ষকের মধ্যে ২ হাজার ২৬৪ জন শিক্ষাছুটি, প্রেষণ বা লিয়েন নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন ৭৮ জন, বিনা বেতনে ছুটিতে ছিলেন ৬৫ জন। এছাড়া ছুটি শেষ হওয়ার পরও অননুমোদিতভাবে বিদেশে অবস্থান করছেন ১৩ জন। বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে এনজিও ব্যবসা, দেশি-বিদেশি সংস্থায় পরামর্শকসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন কাজ করছেন আরও ৫ সহস্রাধিক।
এমন ঘটনাও আছে, শুক্র-শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিয়ে ঢাকার বাইরের কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ঢাকাসহ বড় শহরে অবস্থান করেন। বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন অধ্যাপনা করছেন ৪ হাজার ২০৯ জন। সাধারণত এসব শিক্ষকের বেশিরভাগই কোনোরকমে ক্লাস নিয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে ছুটে যান। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপে এ তথ্য জানা গেছে। যদিও খণ্ডকালীন বা চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকের ব্যাপারে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইউজিসিকে দেয়া তথ্যের সঙ্গে মিল নেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরবরাহকৃত তথ্যে। ইউজিসির উল্লিখিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ১০২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ হাজার ২০৯ শিক্ষক খণ্ডকালীন চাকরি করছেন। তাদের মধ্যে ১ হাজার ৩০৮ জনই অধ্যাপক। এছাড়া সহযোগী অধ্যাপক ৬০৩ জন, ৭৪৩ জন সহকারী অধ্যাপক এবং ১ হাজার ৩২৮ জন প্রভাষক। অন্যান্য ধরনের খণ্ডকালীন শিক্ষক আছেন ২২৭ জন। সংশ্লিষ্টরা জানান, খণ্ডকালীন শিক্ষকের বেশিরভাগই বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাড়া করা। অথচ ইউজিসির প্রতিবেদনে এ সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ১ হাজার ৯৭ জন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের মধ্যে দলাদলি চরম আকারে আছে। তাদের কেউ নীল বা গোলাপি আবার সাদা রঙ ধারণ করেন। শাপলাসহ বিভিন্ন ফুলের নামেও কেউ কেউ পরিচিত হচ্ছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক তরুণ শিক্ষক যুগান্তরকে বলেন, আসলে রাজনীতি ছাড়া বর্তমানে বলতে গেলে কিছুই মেলে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর একজন শিক্ষকের বাসা দরকার। সংকটের কারণে বরাদ্দ মেলে না। তবে কেউ যদি আবাসিক হলে সহকারী হাউজ টিউটর কিংবা সহকারী প্রক্টর হতে পারেন তাহলে অনায়াসে বাসা পান। একইভাবে প্রভোস্ট, প্রক্টর, এমনকি বিভাগের স্টুডেন্ট অ্যাডভাইজার পর্যন্ত হওয়া যায় না দলীয় পরিচয় ছাড়া। অনেক সময় কেউ যথা নিয়ম মেনে জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী চেয়ারম্যান হলেও খুঁটির জোর না থাকলে সে পদও বেশিদিন স্থায়ী হয় না। বিগত বছরগুলোতে বাস্তবতা আরও কঠোর আকার ধারণ করেছে। এমনটিই জানিয়েছেন একটি ছাত্র সংগঠনের বড় পদ থেকে শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়া এক শিক্ষক। তিনি যুগান্তরকে বলেন, বর্তমানে একজন উপাচার্য আছেন যিনি বিভাগে ২৩তম হওয়া সত্ত্বেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
ওইসময়ে এটা ছিল অভাবনীয়। শুধু রাজনৈতিক পরিচয়ের জোরেই ওই শিক্ষক উপাচার্য হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও সদম্ভে আছেন তিনি। সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, রাজনীতি বা দলীয় সংশ্লিষ্টতার কারণে কারও কারও এমপি এবং মন্ত্রী হওয়ার দৃষ্টান্তও আছে। এমনকি একজন রাষ্ট্রপতিও হয়েছেন। এছাড়া জ্ঞানের গভীরতা না থাকলেও অনেক সময়ে রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে রাতারাতি বিখ্যাত হওয়া যায় ও পরিচিতি মেলে। সহজে পদোন্নতি ও পদায়নের সুবিধাসহ বিভিন্ন স্কলারশিপ-ফেলোশিপ মেলে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের পদোন্নতির জন্য গবেষণাপ্রবন্ধ জরুরি। কিন্তু অনেক সময় জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে দলীয় পরিচয় দেখা হয় বলে জানালেন ঢাকা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক। সবমিলে পদে পদে বঞ্চিত হওয়া থেকে পরিত্রাণ পেতেও অনেকে রাজনীতিতে ভিড়ছেন বলে জানা গেছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, রাজনীতিতে জড়ানোর প্রবণতা সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে। যদিও এ ধরনের শিক্ষক ১০ থেকে ২০ শতাংশের বেশি হবে না। কিন্তু আগের তুলনায় বেড়েছে। তবে এটাকেও ‘প্রকট’ রূপ লাভ করেছে বলতে পারি। এরজন্য শিক্ষকদের যেমন দায় আছে, তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোও কম দায়ী নয়। কারণ, রাজনীতিকরা বিশ্ববিদ্যালয় কব্জায় রাখতে চান। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছেন। আর গণতান্ত্রিক আমলে শিক্ষকদেরকেই দলে ভেড়ানো শুরু হয়। আর যখন দেখা গেল, দলীয় আনুগত্য না থাকলে প্রাপ্তিযোগ ঘটে না, তখন কেউ কেউ নাম লেখানোও শুরু করেন। তিনি মনে করেন, শিক্ষকরা অবশ্যই রাজনীতি করবেন। সেটা হবে বিবেকের রাজনীতি। প্রয়োজনীয় গবেষণা এবং জাতি গঠনে সঠিকভাবে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গড়ে তুলতে শিক্ষকদের দলনিরপেক্ষ করা জরুরি। বিশেষ করে বাসা সংকট, পদোন্নতিসহ যেসব কারণে শিক্ষকরা রাজনীতিতে জড়াচ্ছেন, সেগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকদের রাজনীতির বাইরে রাখার ইচ্ছাটা রাজনীতিকদের মধ্য থেকেই আসতে হবে। এজন্য জাতীয় ঐকমত্য জরুরি। প্রয়োজনে আইন করা যেতে পারে। তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ নিয়ে মতের ভিন্নতা থাকবে না।