নোবেল পুরস্কার অথবা নোবেল কমিটিতে নারীদের উপস্থিতি নিয়ে এর আগেও সমালোচনা হয়েছে। তবে বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার প্রদানকারী রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেসের প্রধান গোরান হ্যানসন বলছেন, ‘আমরা আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, এখানে লিঙ্গ বা জাতিগত কোনো কোটা আনা হবে না।’ এই সিদ্ধান্তটি আলফ্রেড নোবেলের শেষ ইচ্ছার চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলেও জানান এই বিজ্ঞানী।
গোরান হ্যানসন আরও জানান, তাঁরা চান যে মানুষেরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের জন্য পুরস্কার জিতুক, লিঙ্গ বা জাতিগত কারণে নয়। সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত মাত্র ৫৯ জন নারী এই পুরস্কার পেয়েছেন। এ ব্যাপারে বিজ্ঞানী গোরান হ্যানসন বলেন, ‘এটি দুঃখজনক যে খুব কম সংখ্যক নারী নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। এটি সমাজে বৈষম্যের প্রতিফলন, বিশেষ করে অতীতে, তবে এখনও এটি বিদ্যমান। এ ব্যাপারে আরও অনেক কিছু করার আছে।’ তিনি বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত, যাঁরা সবচেয়ে বেশি যোগ্য, যাঁরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, তাঁদের আমরা পুরস্কার দেব।’ তবে আগের তুলনায় নোবেল পুরস্কার পাওয়ায় নারীদের সংখ্যা বাড়ছে বলেও মনে করেন এই বিজ্ঞানী।
এ বছর একজন নারী নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি হলেন ফিলিপিনো বংশোদ্ভূত মার্কিন সাংবাদিক ও লেখক মারিয়া রেসা। তিনি ফিলিপাইনের অনলাইন নিউজ ওয়েবসাইট র্যাপলারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। রুশ সাংবাদিক এবং দেশটির সংবাদপত্র নোভায়া গাজেতার প্রধান সম্পাদক দিমিত্রি মুরাতভের সঙ্গে এই পুরস্কার পেয়েছেন মারিয়া রেসা। তাঁরা নিজেদের দেশ—ফিলিপাইন ও রাশিয়ায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার প্রচেষ্টার জন্য এ পুরস্কার পেয়েছেন বলে জানিয়েছে নোবেল কমিটি। এ বছর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যাঁরা চিকিৎসা বিজ্ঞান : যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিড জুলিয়াস ও লেবাননের আর্ডেন প্যাটাপোশিয়ান। তাপমাত্রা ও স্পর্শের রিসেপ্টর আবিষ্কারের জন্য তাঁদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
পদার্থ বিজ্ঞান : জাপানের সাইকুরো মানাবে, জার্মানির ক্লাউস হাসেলম্যান ও ইতালির জর্জিও প্যারিসি। পৃথিবীর জলবায়ু পরিস্থিতির ফিজিক্যাল বা ভৌত মডেল তৈরি, পরিবর্তনশীলতা পরিমাপ এবং নির্ভরযোগ্যভাবে বৈশ্বিক উষ্ণতার বিষয়টি অনুমানের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন সাইকুরো মানাবে ও ক্লাউস হাসেলম্যান। তাঁরা দুজনে এ বছরের নোবেল পুরস্কারের অর্ধেক পেয়েছেন। এ ছাড়া পারমাণবিক ও গ্রহীয় পরিসরে ভৌত ব্যবস্থা বা ফিজিক্যাল সিস্টেমের বিশৃঙ্খলা ও ফ্লাকচুয়েশন পরস্পরের ওপর কী প্রভাব ফেলে, তা আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কারের বাকি অর্ধেক পেয়েছেন জর্জিও প্যারিসি।
রসায়ন বিজ্ঞান : জার্মানির বেনিয়ামিন লিস্ট ও যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিড ম্যাকমিলান। অপ্রতিসম অর্গানোক্যাটালাইসিস বা জৈব-অনুঘটন বিক্রিয়া আবিষ্কারের জন্য এ পুরস্কার পান দুই বিজ্ঞানী। সাহিত্য : তানজানিয়ার ঔপন্যাসিক আবদুলরাজাক গুরনাহ। তাঁর লেখায় ফুটে উঠেছে ঔপনিবেশিকতার দুর্দশা আর শরণার্থীর কষ্টের গল্প। শান্তি : ফিলিপাইনের সাংবাদিক মারিয়া রেসা ও রাশিয়ার দিমিত্রি মুরাতভ। গণতন্ত্র ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পূর্বশর্ত—মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রচেষ্টার জন্য তাঁদের এ পুরস্কার দেওয়া হয়। অর্থনীতি : কানাডীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন অর্থনীতিবিদ ডেভিড কার্ড, ইসরায়েলি বংশোদ্ভূত মার্কিন অর্থনীতিবিদ জোশুয়া ডি অ্যাঙ্গরিস্ট ও ডাচ বংশোদ্ভূত মার্কিন অর্থনীতিবিদ গুইডো ডব্লিউ ইমবেনস। শ্রম বাজার নিয়ে গবেষণা এবং অর্থনীতির গবেষণায় নতুন কৌশল উদ্ভাবনের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁদের নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।