গত শুক্রবার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে চলচ্চিত্র নির্মাতা রাশিদ পলাশের ‘পদ্মাপুরাণ’ সিনেমা। ধারণা করা হচ্ছিল, করোনায় দীর্ঘদিন সিনেমা হল বন্ধ থাকায় প্রেক্ষাগৃহগুলোতে সেরকম দর্শক সমাগম হবে না। তবে সেই ধারণা কিছুটা হলেও ভুল প্রমাণিত হয়েছে। মানুষ ঠিকই সময় বের করে সিনেমা দেখতে এসেছে। বিশেষ করে দুপুরের শো ও সন্ধ্যার শোতে বেশি দর্শক সিনেমা দেখতে এসেছেন। যদিও সিনেমা দেখতে আসা দর্শকের বেশিরভাগ ছিলেন তরুণ-তরুণী।
রায়হান শশীর চিত্রনাট্যে সিনেমাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাদিয়া মাহি, প্রসূন আজাদ, শম্পা রেজা, জয়রাজ, সুমিত সেনগুপ্ত, কায়েস চৌধুরী, সূচনা শিকদার, রেশমী, হেদায়েত নান্নু, আশরাফুল আশীষ, সাদিয়া তানজিন প্রমুখ। ‘পদ্মাপুরাণ’ ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছে পদ্মাপারের মানুষের সুখ-দুখ, জীবন যাত্রার মান, সীমান্ত দিয়ে মাদক পারাপারসহ নানান বিয়ষ। এই ছবিতে সবগুলো চরিত্রই নিখুঁতভাবে ফুঁটিয়ে তুলেছেন পরিচালক। এর মধ্যে উঠে এসেছে প্রতিবন্ধী একটি পরিবারের গল্প। যে পরিবারের চারজনের মধ্যে দুইজনই প্রতিবন্ধী। পদ্মার চরে হাজার প্রতিকূলতার মধ্যে তাদের টিকে থাকার গল্প।
এই সিনেমায় অরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র নিখুঁভাবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন অভিনেত্রী শম্পা রেজা। এখানে তাকে তৃতীয়লিঙ্গের প্রধান হিসেবে দেখা গেছে। সিনেমাটির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে এই চরিত্রটি। যেনি কিনা। সেই প্রতিবন্ধী ছোট মেয়েকে (ময়না) তৃতীয় লিঙ্গ মনে করে তার দলে টেনে নেন। পরে দেখা যায় তিনি তৃতীয় লিঙ্গ নন। বড় হওয়ার পর অন্যের দ্বারায় গর্ভবতী হয়ে পড়েন ময়না। এই ময়নার চরিত্রটিই হলো গল্পের নায়িক সাদিয়া মাহি।
শুক্রবার স্টার সিনেপ্লেক্সে সিনেমাটি দেখতে এসেছিলেন শামীম রেজা নামে এক দর্শক। তিনি জানালেন, ‘ছবিটি দেখে অনেক ভালো লেগেছে। অনেকদিন পর ভালো একটি সিনেমা দেখলাম।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মামুন লিখেছেন, ‘পদ্মাপুরান দেখলাম। দারুন গল্প। অসাধারণ সিনেমাটোগ্রাফি। প্রথম ছবি হিসেবে নির্মাতা রাশীদ পলাশ দারুণ বানিয়েছেন। শুভ কামনা থাকলো আপনার জন্য। নোট: সিনেপ্লেক্সে জেমস বন্ড সিরিজের ‘নো টাইম টু ডাই’ দেখে যারা হতাশ হয়েছেন, গল্প স্লো মনে হয়েছে। তারা ‘পদ্মাপুরান’ দেখতে পারেন স্লো মনে হবে না, খারাপও লাগবে না।’
‘অমিতাভ নামে এক দর্শক লিখেছেন, ‘ছবিটির প্রতিটি চরিত্রই তাদের মনে দাগ কেটেছে, তবে বিশেষভাবে দর্শকের নজর কেড়েছে নতুন মুখ সাদিয়া মাহি ও তরুণ অভিনেতা হেদায়েত নান্নু। পর্দায় সাদিয়া মাহির উপস্থিত যেমন কাঁদিয়েছে। তেমনই আবারও হাসিয়েছে হেদায়েত নান্নুর উপস্থিত।’ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে সিনেমা দেখতে এসেছিলেন রবিউল আলম মানের একজন ব্যাংকার। শুক্রবার সন্ধ্যায় হল থেকে বেরিয়ে ছবিটির ভূঁয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের পরিচালকের ছবি এটি প্রথমে বুঝতে পারিনি। কারণ দীর্ঘদিন এমন বাংলা সিনেমা আমি দেখেনি। আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। আমরা সাধারণ দর্শকেরা এই ধরনের গল্পের সিনেমা আরও বেশি-বেশি দেখতে চাই।
শুক্রবার ছবিটি দেখার পর নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী, প্রথমেই নির্মাতা রাশিদ পলাশকে অভিনন্দন জানিয়ে। তিনি বলেন, অনেক কঠিন এক সিনেমা আপনি বানিয়েছেন। দেখে এলাম। হাউজফুল ছিল। নদী আর নারী…আহা! আপনারাও টিকিট কেটে প্লিজ হলে গিয়ে দেখবেন স্বাস্থ্য সচেতন মেনে। পূণ্য ফিল্মসের ব্যানারে নির্মিত ছবিটির নির্বাহী প্রযোজক গোলাম রাব্বানী। আর ‘পদ্মাপুরান’ সিনেমায় একটি থিম সং কম্পোজিশন করেছেন চিরকুট ব্যান্ডের সদস্য জাহিদ নিরব।
মেহরাজ হোসাইন মীর্জা লিখেলেন, ‘ফেসবুকে শুভকামনা মাধ্যমে চলচ্চিত্র নিয়ে প্রেম দেখালে বর্তমান চলচ্চিত্রের দুরবস্থা ঠিক হয়ে যাবে না। আমাদের এই ঝিমিয়ে পড়া ইন্ডাস্ট্রিকে সচল রাখতে ও চলচ্চিত্রের সুদিন ফেরাতে এই শিল্পের সাথে জড়িত সবাইকে উৎসাহ যোগাতে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে চলচ্চিত্র দেখার অভ্যাস করা উচিত সকলের। আমরা শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি সেক্টরের মানুষ যদি প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে চলচ্চিত্র দর্শন এর মাধ্যমে অ্যাপ্রিশিয়েট না করি দর্শক কেন দেখতে যাবে? সিম্পল এর মধ্যে তুলনামূলক ভালো লেগেছে। ছবিটির অভিনয়শিল্পী দুর্দান্ত অভিনয় করেছে। পদ্মপুরাণ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সকলকে অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।’
রাফায়েল আহসান নাওমি লিখেছেন, ‘মেলাদিন পরে একটা আমাদের গল্পের সিনেমা মুক্তি পেলো আজকে। সাধুবাদ জানাই সাদিয়া মাহিকে। সে যা করেছে সিনেমার জন্য সেটা করতে কলিজাটা বিশাল লাগে। শুভ কামনা রইলো পুরো টিম এর জন্য। একটা সিনেমা, প্রথম সিনেমা বানিয়ে সেটা রিলিজ দেয়াটা অনেক বিশাল ব্যাপার আমাদের ইন্ড্রাস্টিতে। সেই টুকুনের জন্যই সাধুবাদ। বাকিটা শুভকামনা।